কলকাতা, ১৫ মার্চ : গত দু'মাসে কলকাতায় অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত তিন মাসে পার্কসার্কাসের বেসরকারি একটি হাসপাতালে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ৬০ থেকে ৬৫ জন শিশুর খোঁজ মিলেছে। এই হাসপাতালে বর্তমানে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ১২ জন শিশুর চিকিৎসা চলছে। তাদের মধ্যে ৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, এদের মধ্যে ৩ জন ভেন্টিলেশনে রয়েছে।
কিন্তু, এমন ভয়াবহ আকার নিচ্ছে কেন এই ভাইরাস? এবিষয়ে পরজীবী বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী বলেন, "রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি কলকাতায় এখন হয়েছে। সেই জন্য এই বছর এই ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি ধরা পড়ছে। না হলে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বরাবর-ই হয়।" চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বাতাসে থাকে এই ভাইরাস। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে। চিকিৎসক প্রভাস প্রসূন গিরি বলেন, "এই ভাইরাসে সংক্রমণের জেরে স্বাভাবিক জ্বর-সর্দি-কাশি হবে। কিন্তু এই বছর সেই হিসেবে অনেকেরই কমছে না। ১০ জনের শরীরে এই ভাইরাস প্রবেশ করেছে। তার মধ্যে ৩-৪ জনের অবস্থা জটিল। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, নিউমোনিয়া হচ্ছে, ভেন্টিলেশনে রাখতে হচ্ছে। ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণও ঘটছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে।"
পার্কসার্কাসের বেসরকারি ওই হাসপাতালের এই চিকিৎসক বলেন, "গত দুই মাসে কলকাতায় কম করে ১০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে।" একই সঙ্গে তিনি বলেন,"গত বছরের শেষের দিক থেকে এই রোগ নির্ণয় শুরু হয়েছে। গত বছর এইরোগের প্রকোপ এতটা ভয়াবহ ছিল না। রোগ প্রতিরোধের কোনও উপায় এখনও জানা নেই। ওষুধও নেই। রোগ নির্ণয় হলে অক্সিজেন, নেবুলাইজার ও প্রয়োজনে ভেন্টিলেশনে দিতে হচ্ছে।"
কীভাবে বোঝা যাবে এই ভাইরাসে আক্রান্তের বিষয়টি, কোনও উপসর্গ আছে কি? উত্তরে চিকিৎসক বলেন, "প্রথমে স্বাভাবিক সর্দি-কাশি-জ্বর হয়। তার পরে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।" সাবধানতা অবলম্বনের উপায়? এর উত্তরে তিনি বলেন, "এই ভাইরাসে যে আক্রান্ত হয়েছে, তার থেকে অন্যদের দূরে রাখা ছাড়া সাবধানতা বলতে আর কিছু নেই।" এই ভাইরাসের ক্ষেত্রে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী বলেন, "এই ভাইরাস ছোঁয়াচে তাই প্রতিরোধ খুব কঠিন।" ছোটো থেকে বড়, যে কোনও বয়সের মানুষই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। একথা জানিয়ে ওই চিকিৎসক বলেন, "ছোটরা এখানে-ওখানে হাত দেয়, অরক্ষিত থাকে। সেজন্য তারা বেশি আক্রান্ত হয়।" ছোটো এবং বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই কম। এজন্য ছোটো এবং বয়স্করা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ভয়াবহ আকার নিতে পারে বলেও তিনি জানান।