কলকাতা, 8 মে: তৃণমূলের নবজোয়ার কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মুর্শিদাবাদের তিনটি লোকসভা আসন জেতার লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিলেন। অভিষেকের এই বক্তব্য যে শুধুমাত্র প্রচার কৌশল নয়, তা প্রমাণ হল সোমবার জেলা ছাড়ার আগে দলের নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে। মুর্শিদাবাদ ছাড়ার আগে অধীর গড় বহরমপুর জিততে মরিয়া লড়াইয়ের বার্তা দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । পালটা বহরমপুরের সাংসদের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী হলেও তিনি পরাজিত হবেন না । মমতার কাছে ভোটে হারলে রাজনীতি ছেড়ে দেবেন ।
জেলা সফরের শুরু থেকেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন তাঁদের জেলার তিনটি লোকসভার আসনে জিততে হবে। সোমবার ছিল মুর্শিদাবাদ বহরমপুর সাংগঠনিক জেলার বৈঠক। সেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দিষ্ট করে বহরমপুর জেতার টার্গেট বেঁধে দিয়েছেন। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, এদিন তিনি দলের জেলার নেতৃত্বকে নির্দেশ দিয়েছেন বহরমপুর জেতার জন্য এখন থেকেই যে ধরনের সাংগঠনিক প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন তা যেন নেওয়া হয়। এদিন এই বৈঠক থেকে দলের নেতাদের আভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়েও সরব হয়েছেন অভিষেক।
তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, সংগঠনের অভ্যন্তরে দলের নেতাদের মধ্যে যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে তা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একে অপরের সঙ্গে কথা না-বলা, একে অপরের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া, দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বকে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা এগুলি আগামিদিনে সহ্য করা হবে না। সকলকে একসঙ্গেই কাজ করতে হবে। এদিন অভিষেক জানিয়েছেন দলের তরফে যে কর্মসূচি দুই মাসব্যাপী নেওয়া হয়েছে তৃণমূল স্তর থেকে বহু খবর দলের কাছে এসে পৌঁছাচ্ছে। এটা ভাবার কারণ নেই দল সব দেখে সব বুঝেও চোখ বুজে থাকবে।
আরও পড়ুন: মণিপুরে আটকে থাকা বাংলার 18 জন পড়ুয়াকে উদ্ধার, টুইটে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী
এদিন তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন একটি অদৃশ্য চোখ সমস্ত নেতাদের কাজকর্মের ওপর নজর রাখছে। তাই সকলের জন্য যে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে তা যেন গুরুত্বসহকারে করা হয়। দলীয় নেতৃত্বের মধ্যে সমস্ত দন্দ্ব দূরে সরিয়ে রেখে এখন থেকেই যেন ৩ আসন জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেছেন, তাঁর কর্মসূচিতে গত কয়েক দিন ধরে যে বিপুল সংখ্যক মানুষের জনজোয়ার বা উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে তিনি মনে করছেন আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনে দলের ফলাফল উনিশের নির্বাচনের থেকেও ভালো করার সুযোগ রয়েছে। তাই এখন থেকেই বহরমপুর কে টার্গেট করে এগুলোর নির্দেশ তিনি এদিনের বৈঠক থেকেই দিয়ে গিয়েছেন।
আলাদা করে বহরমপুরে ভালো ফল করার জন্য এদিন সায়নী সিং রায়, অপূর্ব সরকারের মতো নেতাদের বাড়তি দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন দু-তিন দিনের মধ্যে সমস্ত নেতাদের আলোচনার টেবিলে বসে নিজেদের মধ্যে থাকা দূরত্ব মিটিয়ে নিতে হবে। এখানেই শেষ নয় নবজোয়ার শেষ করে প্রয়োজন পড়লে প্রত্যেক দুই মাস অন্তর আলাদা করে মুর্শিদাবাদ নিয়ে বসবেন তিনি বলে জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
আরও পড়ুন: মমতা-অভিষেক মঞ্চ ছাড়তেই প্রার্থী বাছাইয়ের ভোট নিয়ে হাতাহাতি তৃণমূল কর্মীদের
প্রসঙ্গত, এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই হেন ভাবনা প্রকাশ্যে আসার পর এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বহরমপুরের সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তিনি বলেন, "তৃণমূলের অন্য কোনও নেতা নন, আমার পিসির বিরুদ্ধে লড়ার ইচ্ছা। উনি যদি বহরমপুরের ক্যান্ডিডেট হন আর আমি যদি সেখানে হারি তাহল রাজনীতি ছেড়ে দেব। ইতিমধ্যেই আমি এই চ্যালেঞ্জ দিয়েছি, আজও এই চ্যালেঞ্জ অব্যাহত। আমি আমার বক্তব্য থেকে করছি না।"