কলকাতা, 26 অগাস্ট : লড়াইটা সহজ নয় । এই লড়াই লড়তে হলে সিংহের কলিজার প্রয়োজন হয় ৷ সঙ্গে প্রয়োজন এক আকাশ মানবিকতার । সেই লড়াইয়ে লড়েছেন ও লড়ে চলেছেন ওঁরা । সেই কাজের স্বীকৃতিও পেলেন । গতকাল কলকাতা পুলিশের নগরপাল অনুজ শর্মা লালবাজারে ডেকে কোরোনার বিরুদ্ধে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে লড়াই করা 9 পুলিশকর্মীকে সংবর্ধনা দিলেন । জানালেন অভিনন্দন । বোঝালেন গোটা পুলিশ বাহিনী তাঁদের কীর্তিতে গর্বিত ।
কয়েকদিন আগে কোরোনায় আক্রান্ত হয়ে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি হন সোনারপুরের এক ব্যক্তি । তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় প্রয়োজন পড়ে প্লাজ়মা থেরাপির । কিন্তু তাঁর রক্তের গ্রুপ রেয়ার । B নেগেটিভ । এক বন্ধুর মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারেন কলকাতা পুলিশের সার্জেন্ট কুন্তল দেবনাথ । যিনি 24 জুলাই কোরোনামুক্ত হয়েছেন । তাঁরও রক্তের গ্রুপ B নেগেটিভ । বন্ধুর মাধ্যমে খবরটি জেনেই সটান হাজির হন ওই হাসপাতালে । সেখানে হয় প্রাথমিক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা । সবকিছু মিলে যায় । পরের দিনই প্লাজ়মা দান করেন কুন্তলবাবু । প্লাজ়মা দানের পাশাপাশি মনেপ্রাণে কলকাতা পুলিশের সার্জেন্ট অচেনা মানুষটির সুস্থতা কামনা করে প্রার্থনা করে গেছেন । তিনি বলেন, "যদি উনি সুস্থ হয়ে ওঠেন তবে সেটাই হবে এবারের শারদীয়ায় আমার সেরা উপহার।" ওই ব্যক্তি চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন । এখন পর্যন্ত খবর তেমনই । কুন্তলের মতোই টুইটার বা অন্য সোশাল মিডিয়ায় সাহায্যের আবেদন পেয়ে সোজা হাসপাতালে হাজির হয়েছেন সার্জেন্ট একলাখ আহমেদ, কনস্টেবল অমিত কুমার সাউ, পুলিশ ড্রাইভার পাপ্পু কুমার সিং, কনস্টেবল শাহরুখ হোসেন, রঞ্জিত বর্মন, ভাস্কর বেরা, সিভিক ভলান্টিয়ার রাজেশ রায় । তাঁদের দান করা প্লাজ়মা চিকিৎসায় সাড়া দিয়েছেন কোরোনা রোগী ।
সংক্রমণ রুখতে প্রথম দিন থেকে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে লড়াই চালাচ্ছেন পুলিশকর্মীরা । তার জেরে সংক্রমিত হয়েছেন দেড় হাজারের বেশি পুলিশকর্মী । এমনকী কলকাতা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার সদর শুভংকর সিনহা সরকার কোরোনায় আক্রান্ত হয়ে এখনও লড়াই চালাচ্ছেন । সেই লড়াই লড়তে গিয়ে কলকাতা পুলিশ হারিয়েছে নয় সহকর্মীকে । তার মধ্যে রয়েছেন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার অফিসারও । তবে ভয় পাননি পুলিশকর্মীরা । বরং ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে চলেছেন প্রতিনিয়ত ।
9 পুলিশকর্মীকে সংবর্ধনা জানিয়ে গতকাল নগরপাল বলেন, "ওরা শুধু আমাদের সহকর্মী কোরোনা যোদ্ধাই নন, আরও বেশি কিছু । ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে ওরা নিজেরাও আক্রান্ত হয়েছেন । রোগ জয় করে ফিরে এসে শুধু কাজেই যোগ দেননি ৷ সংকটাপন্ন রোগীকে বাঁচাতে নিজেদের প্লাজ়মা দান করেছেন । এটা অত্যন্ত গর্বের ।" এদিকে সংবর্ধনা পেয়ে কোরোনা যোদ্ধারা বলেছেন, "আজকের দিনটা আমাদের জন্য স্মরণীয় ।"