ETV Bharat / state
স্বাস্থ্য মৌলিক অধিকারের অন্তর্ভুক্ত না হওয়া দুর্ভাগ্যজনক, বলছেন চিকিৎসকরা
স্বাস্থ্যের অধিকার আমাদের দেশে সংবিধানের মৌলিক অধিকারের মধ্যে নেই । নির্দেশক নীতিতে স্বাস্থ্যের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে । মানুষকে বেঁচে থাকতে গেলে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এগুলির মতো স্বাস্থ্য পরিষেবারও প্রয়োজন, বলছেন চিকিৎসকরা ।
গ্রাফিক্স
By
Published : Nov 26, 2019, 10:22 PM IST
কলকাতা, 26 নভেম্বর : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO)-র সংজ্ঞা অনুযায়ী, স্বাস্থ্য মানে শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে ভালো থাকা । মানুষকে বেঁচে থাকতে গেলে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এগুলির মতো স্বাস্থ্য পরিষেবারও প্রয়োজন । কিন্তু, আমাদের দেশের সংবিধান সেই স্বাস্থ্যকেই অধিকার হিসেবে এখনও স্বীকৃতি দেয়নি । আলমা-আটা ডিক্লেয়ারেশনে বলা হয়েছিল যে, 2000 সালের মধ্যে সমস্ত দেশের সব নাগরিকের স্বাস্থ্যরক্ষার দায়িত্ব সেই সেই দেশের সরকার নেবে । ভারতও এই ঘোষণায় সই করেছিল । কিন্তু, 2019 সাল হয়ে গেলেও তা অধরাই থেকে গেছে ।
স্বাস্থ্যের অধিকার আমাদের দেশে সংবিধানের মৌলিক অধিকারের মধ্যে নেই । নির্দেশক নীতিতে স্বাস্থ্যের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে । একথা জানিয়ে শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের পরামর্শদাতা ডাক্তার পূণ্যব্রত গুণ বলেন, "অথচ আমরা যদি দেখি, ১৯৪৮-এ ইউনিভার্সাল ডিক্লেয়ারেশন অফ হিউম্যান রাইটসে স্বাস্থ্য অধিকার হিসেবে ছিল । এর এক বছর পর যখন সংবিধান রচিত হল, সংবিধান প্রণেতারা তখন স্বাস্থ্যকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেননি । মানুষকে বেঁচে থাকতে গেলে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এগুলির মতো স্বাস্থ্য পরিষেবারও প্রয়োজন । আমাদের দেশের সংবিধান সেই স্বাস্থ্যকে অধিকার হিসেবে এখনও স্বীকৃতি দেয়নি ।"
সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার সজল বিশ্বাস বলেন, "এটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং খুব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা যে স্বাধীনতার 73 বছর কেটে গেলেও, সংবিধানের একাধিকবার সংশোধন হলেও স্বাস্থ্যকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি ।"
1946-এ ভোর কমিটির রিপোর্ট বের হয় । যদিও স্বাধীনতার আগে এই কমিটি গঠিত হয় । শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের পরামর্শদাতা ডাক্তার পূণ্যব্রত গুণ বলেন, "ভোর কমিটির যে সুপারিশ ছিল তাতে বলা হয়েছিল, প্রত্যেক নাগরিকের, তাঁদের খরচ করার ক্ষমতা নির্বিশেষে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়া উচিত । 1947-এর পরের কয়েক বছর গ্রামাঞ্চলে বা গরিব মানুষের কাছে চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ তবুও নেওয়া হয়েছিল কিন্তু, নয়ের দশকের শুরু থেকে দেখতে পাই সরকার ধীরে ধীরে স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে সরে আসছে এবং চিকিৎসা নিয়ে যাঁরা ব্যবসা করেন, তাঁদের হাতে সেই জায়গাগুলি ছেড়ে দিচ্ছে ।" তিনি বলেন, "এর মধ্যে 1978-এ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে প্রাইমারি হেলথ কেয়ার নিয়ে একটি কনফারেন্স হয়েছিল কাজাখস্তানের রাজধানী আলমা আটায় । এটাকে আলমা-আটা ডিক্লেয়ারেশন বলা হয় । এই আলমা-আটার ডিক্লিয়ারেশনে বলা হয়েছিল যে, 2000 সালের মধ্যে সমস্ত দেশের সমস্ত নাগরিকের স্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব সেই সেই দেশের সরকার নেবে । আমাদের দেশও এই ঘোষণায় সই করেছিল । কিন্তু, এখনও আমাদের দেশে স্বাস্থ্যের অধিকার অধরাই থেকে গিয়েছে । এর মধ্যে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । 2010-এ তৎকালীন প্ল্যানিং কমিশন যা এখন নীতি আয়োগ, সেই প্ল্যানিং কমিশন হাই লেভেল এক্সপার্ট গ্রুপ অন ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ তৈরি করে ।"
হাই লেভেল এই এক্সপার্ট গ্রুপের প্রধান ছিলেন AIIMS-এর কার্ডিওলজির পূর্বতন অধ্যাপক, ডাক্তার কে শ্রীনাথ রেড্ডি । তাঁর নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি করা হয়। ভারতে যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করে সরকারকে সুপারিশ করার জন্য এই কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয় । পুণ্যব্রতবাবু বলেন, "সরকার কীভাবে সমস্ত নাগরিকের স্বাস্থ্যরক্ষার দায়িত্ব নিতে পারে, সেই সুপারিশ করার কথা বলা হয়েছিল এই কমিটিকে । 2011-তে এই হাই লেভেল এক্সপার্ট গ্রুপ অন ইউনিভর্সাল হেলথ কভারেজ প্ল্যানিং কমিশনকে সুপারিশ করে । তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদকেও এই সুপারিশ পাঠানো হয় ।" তিনি বলেন, "ওই সুপারিশের প্রধান বিষয়গুলি ছিল, স্বাস্থ্যখাতে সরকারকে ব্যয় বাড়াতে হবে । 2010-এ স্বাস্থ্যের পিছনে মোট খরচ হত GDP-র 4.3 শতাংশ । এর মধ্যে 1.4 শতাংশ অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশ খরচ করত সরকার । বাকিটা ছিল রোগীদের আউট অফ পকেট এক্সপেন্ডিচার । এই হাই লেভেল এক্সপার্ট গ্রুপ সুপারিশ করে, সরকারি ব্যয় বাড়িয়ে 2017-র মধ্যে GDP-র 2.5 শতাংশ করতে হবে এবং 2000-এর মধ্যে তা 3 শতাংশ করতে হবে । তাঁরা হিসাব করে দেখালেন, এই বৃদ্ধি যদি করা হয়, তাহলে সরকারের পক্ষে সেই বর্ধিত খরচ দিয়ে সমস্ত নাগরিকের প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং অন্তিম স্তরে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাগুলির খরচ বহন করা সম্ভব । তাঁরা হেলথ এন্টাইটেলমেন্ট কার্ডের পরিকল্পনা করেছিলেন । এই কার্ড থাকলে যে কোনও মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা পেতে পারবেন । তাঁরা ন্যাশনাল হেলথ প্যাকেজের কথা বলেছিলেন। যে প্যাকেজে প্রাইমারি সেকেন্ডারি এবং টারশিয়ারি, সমস্ত স্তরে কোন কোন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বিনামূল্যে পাওয়া যাবে, তার প্রস্তাব করেছিলেন । তারা আরও অনেকগুলি প্রস্তাব করেছিল । আমরা দেখলাম, 2012-য় প্ল্যানিং কমিশন যখন তাদের প্ল্যান ডকুমেন্ট নিয়ে এল, তখন তারা মুখ ভরা কথা কেবল বলল । আসলে কাজের কাজ কিছু হল না । সরকারি ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধি হল না । 2014-য় NDA সরকার এসে এক ধাক্কায় স্বাস্থ্য খাতে সরকারি খরচ অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে ।"
সজল বিশ্বাস বলেন, "স্বাধীনতার আগে 1943-এ ভোর কমিটি বসে । এই ভোর কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছিল সমস্ত মানুষের স্বাস্থ্যের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে । এর পর অনেক কমিটি বসেছে । আলমা-আটার ডিক্লেয়ারেশন । সেখানেও স্বাস্থ্যের দায়িত্ব সরকারকে নিতে বলা হয়েছে । এটাও বলা হয়েছিল স্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দ বাজেট সামগ্রিক বাজেটের অন্তত 10 শতাংশ করতে হবে । তা সত্ত্বেও সরকারের চূড়ান্ত অমানবিকতা, স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যবসার দৃষ্টিভঙ্গি, ব্যবসায়ীদের হাতে স্বাস্থ্যকে তুলে দেওয়ার দৃষ্টিভঙ্গির ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি স্বাস্থ্যকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি । এটা অত্যন্ত অন্যায়, অমানবিক বলে মনে করি । এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে । যাতে স্বাস্থ্যর মতো একটা বিষয়কে আমাদের দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা নিয়ে ব্যবসা করতে পারেন । আর সেকথা মাথায় রেখে আমরা মনে করি স্বাস্থ্যকে মৌলিক অধিকার হিসেবে গ্রহণ করা হয়নি ।" তিনি বলেন, "কিন্তু, এখানে রয়েছে আর্টিকল 21 । এখানে মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে এবং মানুষের জীবনের সুরক্ষা রয়েছে । জীবনের সুরক্ষা, বেঁচে থাকার অধিকার এগুলি স্বাস্থ্য পরিষেবা ছাড়া কীভাবে সম্ভব । মানুষ যদি স্বাস্থ্য না পায় তাহলে তার পক্ষে বেঁচে থাকা কীভাবে সম্ভব। স্বাস্থ্যের অধিকার যদি মানুষের না থাকে, তাহলে রাইটস টু লাইফটাও প্রহসন । এটারও কিন্তু কোনও মানে আছে বলে আমরা মনে করি না ।"
পূণ্যব্রত গুণ বলেন, "এখন যে অবস্থা আছে, 2010-এ সরকার যেখানে GDP-র 1.4 শতাংশ স্বাস্থ্যখাতে খরচ করত, সেখানে এখন মোটামুটি ভাবে এক শতাংশ স্বাস্থ্যখাতে সরকার খরচ করে । এর মধ্যে 2017-য় কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি নিয়ে এসেছে । এতে বলা হচ্ছে, সরকারের উচিত সমস্ত নাগরিকের প্রাইমারি, সেকেন্ডারি এবং টারশিয়ারি কেয়ারের ব্যবস্থা করা । এবং, তার জন্য ব্যয় বৃদ্ধি করা । ব্যয় বৃদ্ধি করে GDP-র 2.5 শতাংশ করা । পলিসিতে বলা হচ্ছে 2.5 শতাংশ করা হোক । কিন্তু, নীতি আয়োগ বলছে, সরকারের পক্ষে GDP-র এক শতাংশের বেশি খরচ করা সম্ভব নয় ।" এর মধ্যে আরও কিছু ঘটনা হয়েছে । কেন্দ্রীয় সরকার নতুন একটি যোজনা নিয়ে এসেছে । তিনি আরও বলেন, "এই যোজনার নাম আয়ুষ্মান ভারত । যাঁরা মোদির প্রশংসা করেন তাঁরা এটাকে মোদি কেয়ার নামে ডাকছে । UPA সরকারের সময় এরকম একটি প্রকল্প ছিল । সেটাকে বলা হত RSBY ( রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা ) । এর মাধ্যমে দারিদ্র সীমার নিচে যে মানুষরা আছেন, তাঁদের জন্য বছরে 30 হাজার টাকা পর্যন্ত হাসপাতালে ভরতি হয়ে চিকিৎসার খরচ, এটা বিমা কম্পানির মাধ্যমে সরকার বহন করত । এই বিমার প্রিমিয়াম দিত সরকার । মোদি সরকার এটাকে বাড়িয়ে করেছে পাঁচ লাখ টাকা ।"
পূণ্যব্রতবাবু আরও বলেন, "আমরা যদি দেখি, তাহলে দেখতে পাব, মানুষের চিকিৎসা করাতে যে খরচ হয়, সেই খরচের সিংহভাগটাই হয় আউটডোরে । অর্থাৎ, আউটডোরে চিকিৎসা করাতে গেলে ভিজ়িট বাবদ কিছুটা খরচ হয় । এর থেকে বেশি খরচ হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে । সব থেকে বেশি খরচ হয় ওষুধ কিনতে গিয়ে । আউটডোরে চিকিৎসা, ডাক্তারের কনসালটেশন, ইনভেস্টিগেশন, ওষুধ কেনা, এ সবের কোনওটাই RSBY, আয়ুষ্মান ভারত অথবা রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথী পরিষেবাতে পাওয়া যায় না । সরকারের টাকা কোথাকার টাকা? নাগরিকদের টাকা । নাগরিকদের টাকা প্রিমিয়াম বাবদ বিমা কম্পানিগুলিকে দিচ্ছে সরকার । যার একটি অংশ বিমা কোম্পানিগুলি দিচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে । তাদের মুনাফার জন্য । চিকিৎসার জন্য। এই ধরনের প্রোগ্রামগুলির মাধ্যমে আসলে মানুষের স্বাস্থ্যের বা চিকিৎসার অধিকার, মানুষ পাচ্ছেন না ।"
তিনি বলেন, "আমরা মনে করি, স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক অধিকার হওয়া উচিত । স্বাস্থ্যরক্ষার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে । সরকার আমাদের কাছ থেকে যে কর নেয় প্রত্যক্ষ এবং অপ্রত্যক্ষভাবে, তার একটি অংশ দিয়ে সরকারের পক্ষে এটা করা সম্ভব । এটা যে কেবল উন্নত দেশগুলিতে হয়েছে, তা নয় । আমাদের পাশের দেশ শ্রীলঙ্কা । GDP-র বিচারে যে দেশ আমাদের থেকে গরিব । কিংবা থাইল্যান্ড । তাদের সরকার যদি নাগরিকদের স্বাস্থ্যরক্ষার দায়িত্ব নিতে পারে, তা হলে আমাদের সরকারের পক্ষেও এটা অসম্ভব কিছু নয় ।" এদিকে সজলবাবু বলেন, "আমরা মনে করি, অবিলম্বে সংবিধানে মৈলিক অধিকার হিসেবে স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক বিষয় আসা উচিত । যেটা পৃথিবীর বহু দেশে এখনও পর্যন্ত মৌলিক অধিকার হিসেবে রয়েছে । সেই সব দেশের সরকার কিন্তু সেই পরিমাণ বাজেট বরাদ্দ করে । কোথাও 10 শতাংশ, কোথাও 14-15 শতাংশ । এর ফলে ওইসব দেশের স্বাস্থ্যের যে ইন্ডিকেটর, ইন্ডেক্স আমরা দেখতে পাই, সেগুলি অনেক উন্নত । সেখানকার সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের অধিকার অনেক বেশি। তাঁরা সহজে তাঁদের নিকটবর্তী হাসপাতাল থেকে পরিষেবা পেয়ে থাকেন । "
সজলবাবু বলেন, "ইন্ডিয়ান পাবলিক হেলথ স্ট্যান্ডার্ডস বলেছিল, 30 হাজার জনসংখ্যা পিছু একটি করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকতে হবে । এখনও পর্যন্ত আমরা দেখলাম, এক লাখের উপর জনসংখ্যা রয়েছে সেখানেও হেলথ সেন্টার নেই । এরকম প্রহসন চলছে । ভোর কমিটি বলেছিল 10 হাজার জনসংখ্যা পিছু অন্তত 75 বেডের একটি হাসপাতাল বানানোর কথা । 10 হাজার কেন 10 লাখ জনসংখ্যা পিছুও সেকেন্ডারি টায়ারে 75 বেডের হাসপাতাল আমরা দেখতে পাচ্ছি না । এই পরিমাণ ফাঁক থাকার ফলে মানুষ কিন্তু স্বাস্থ্য পরিষেবা পাচ্ছে না । এর ফলে খুব সাধারণ রোগে মানুষ ভুগছে এবং মারাও যাচ্ছে । পাবলিক হেলথের উপরে প্রিভেন্টিভ যে হেলথগুলি রয়েছে, সেগুলির উপর নজর দেওয়া হচ্ছে না । এর ফলে হাজার হাজার মানুষ সামান্য রোগ স্ক্রাব টাইফাস, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হচ্ছে । অনায়াসে যা প্রতিরোধ করা যেত ।"
কলকাতা, 26 নভেম্বর : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO)-র সংজ্ঞা অনুযায়ী, স্বাস্থ্য মানে শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে ভালো থাকা । মানুষকে বেঁচে থাকতে গেলে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এগুলির মতো স্বাস্থ্য পরিষেবারও প্রয়োজন । কিন্তু, আমাদের দেশের সংবিধান সেই স্বাস্থ্যকেই অধিকার হিসেবে এখনও স্বীকৃতি দেয়নি । আলমা-আটা ডিক্লেয়ারেশনে বলা হয়েছিল যে, 2000 সালের মধ্যে সমস্ত দেশের সব নাগরিকের স্বাস্থ্যরক্ষার দায়িত্ব সেই সেই দেশের সরকার নেবে । ভারতও এই ঘোষণায় সই করেছিল । কিন্তু, 2019 সাল হয়ে গেলেও তা অধরাই থেকে গেছে ।
স্বাস্থ্যের অধিকার আমাদের দেশে সংবিধানের মৌলিক অধিকারের মধ্যে নেই । নির্দেশক নীতিতে স্বাস্থ্যের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে । একথা জানিয়ে শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের পরামর্শদাতা ডাক্তার পূণ্যব্রত গুণ বলেন, "অথচ আমরা যদি দেখি, ১৯৪৮-এ ইউনিভার্সাল ডিক্লেয়ারেশন অফ হিউম্যান রাইটসে স্বাস্থ্য অধিকার হিসেবে ছিল । এর এক বছর পর যখন সংবিধান রচিত হল, সংবিধান প্রণেতারা তখন স্বাস্থ্যকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেননি । মানুষকে বেঁচে থাকতে গেলে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এগুলির মতো স্বাস্থ্য পরিষেবারও প্রয়োজন । আমাদের দেশের সংবিধান সেই স্বাস্থ্যকে অধিকার হিসেবে এখনও স্বীকৃতি দেয়নি ।"
সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার সজল বিশ্বাস বলেন, "এটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং খুব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা যে স্বাধীনতার 73 বছর কেটে গেলেও, সংবিধানের একাধিকবার সংশোধন হলেও স্বাস্থ্যকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি ।"
1946-এ ভোর কমিটির রিপোর্ট বের হয় । যদিও স্বাধীনতার আগে এই কমিটি গঠিত হয় । শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের পরামর্শদাতা ডাক্তার পূণ্যব্রত গুণ বলেন, "ভোর কমিটির যে সুপারিশ ছিল তাতে বলা হয়েছিল, প্রত্যেক নাগরিকের, তাঁদের খরচ করার ক্ষমতা নির্বিশেষে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়া উচিত । 1947-এর পরের কয়েক বছর গ্রামাঞ্চলে বা গরিব মানুষের কাছে চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ তবুও নেওয়া হয়েছিল কিন্তু, নয়ের দশকের শুরু থেকে দেখতে পাই সরকার ধীরে ধীরে স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে সরে আসছে এবং চিকিৎসা নিয়ে যাঁরা ব্যবসা করেন, তাঁদের হাতে সেই জায়গাগুলি ছেড়ে দিচ্ছে ।" তিনি বলেন, "এর মধ্যে 1978-এ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে প্রাইমারি হেলথ কেয়ার নিয়ে একটি কনফারেন্স হয়েছিল কাজাখস্তানের রাজধানী আলমা আটায় । এটাকে আলমা-আটা ডিক্লেয়ারেশন বলা হয় । এই আলমা-আটার ডিক্লিয়ারেশনে বলা হয়েছিল যে, 2000 সালের মধ্যে সমস্ত দেশের সমস্ত নাগরিকের স্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব সেই সেই দেশের সরকার নেবে । আমাদের দেশও এই ঘোষণায় সই করেছিল । কিন্তু, এখনও আমাদের দেশে স্বাস্থ্যের অধিকার অধরাই থেকে গিয়েছে । এর মধ্যে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । 2010-এ তৎকালীন প্ল্যানিং কমিশন যা এখন নীতি আয়োগ, সেই প্ল্যানিং কমিশন হাই লেভেল এক্সপার্ট গ্রুপ অন ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ তৈরি করে ।"
হাই লেভেল এই এক্সপার্ট গ্রুপের প্রধান ছিলেন AIIMS-এর কার্ডিওলজির পূর্বতন অধ্যাপক, ডাক্তার কে শ্রীনাথ রেড্ডি । তাঁর নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি করা হয়। ভারতে যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করে সরকারকে সুপারিশ করার জন্য এই কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয় । পুণ্যব্রতবাবু বলেন, "সরকার কীভাবে সমস্ত নাগরিকের স্বাস্থ্যরক্ষার দায়িত্ব নিতে পারে, সেই সুপারিশ করার কথা বলা হয়েছিল এই কমিটিকে । 2011-তে এই হাই লেভেল এক্সপার্ট গ্রুপ অন ইউনিভর্সাল হেলথ কভারেজ প্ল্যানিং কমিশনকে সুপারিশ করে । তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদকেও এই সুপারিশ পাঠানো হয় ।" তিনি বলেন, "ওই সুপারিশের প্রধান বিষয়গুলি ছিল, স্বাস্থ্যখাতে সরকারকে ব্যয় বাড়াতে হবে । 2010-এ স্বাস্থ্যের পিছনে মোট খরচ হত GDP-র 4.3 শতাংশ । এর মধ্যে 1.4 শতাংশ অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশ খরচ করত সরকার । বাকিটা ছিল রোগীদের আউট অফ পকেট এক্সপেন্ডিচার । এই হাই লেভেল এক্সপার্ট গ্রুপ সুপারিশ করে, সরকারি ব্যয় বাড়িয়ে 2017-র মধ্যে GDP-র 2.5 শতাংশ করতে হবে এবং 2000-এর মধ্যে তা 3 শতাংশ করতে হবে । তাঁরা হিসাব করে দেখালেন, এই বৃদ্ধি যদি করা হয়, তাহলে সরকারের পক্ষে সেই বর্ধিত খরচ দিয়ে সমস্ত নাগরিকের প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং অন্তিম স্তরে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাগুলির খরচ বহন করা সম্ভব । তাঁরা হেলথ এন্টাইটেলমেন্ট কার্ডের পরিকল্পনা করেছিলেন । এই কার্ড থাকলে যে কোনও মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা পেতে পারবেন । তাঁরা ন্যাশনাল হেলথ প্যাকেজের কথা বলেছিলেন। যে প্যাকেজে প্রাইমারি সেকেন্ডারি এবং টারশিয়ারি, সমস্ত স্তরে কোন কোন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বিনামূল্যে পাওয়া যাবে, তার প্রস্তাব করেছিলেন । তারা আরও অনেকগুলি প্রস্তাব করেছিল । আমরা দেখলাম, 2012-য় প্ল্যানিং কমিশন যখন তাদের প্ল্যান ডকুমেন্ট নিয়ে এল, তখন তারা মুখ ভরা কথা কেবল বলল । আসলে কাজের কাজ কিছু হল না । সরকারি ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধি হল না । 2014-য় NDA সরকার এসে এক ধাক্কায় স্বাস্থ্য খাতে সরকারি খরচ অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে ।"
সজল বিশ্বাস বলেন, "স্বাধীনতার আগে 1943-এ ভোর কমিটি বসে । এই ভোর কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছিল সমস্ত মানুষের স্বাস্থ্যের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে । এর পর অনেক কমিটি বসেছে । আলমা-আটার ডিক্লেয়ারেশন । সেখানেও স্বাস্থ্যের দায়িত্ব সরকারকে নিতে বলা হয়েছে । এটাও বলা হয়েছিল স্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দ বাজেট সামগ্রিক বাজেটের অন্তত 10 শতাংশ করতে হবে । তা সত্ত্বেও সরকারের চূড়ান্ত অমানবিকতা, স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যবসার দৃষ্টিভঙ্গি, ব্যবসায়ীদের হাতে স্বাস্থ্যকে তুলে দেওয়ার দৃষ্টিভঙ্গির ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি স্বাস্থ্যকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি । এটা অত্যন্ত অন্যায়, অমানবিক বলে মনে করি । এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে । যাতে স্বাস্থ্যর মতো একটা বিষয়কে আমাদের দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা নিয়ে ব্যবসা করতে পারেন । আর সেকথা মাথায় রেখে আমরা মনে করি স্বাস্থ্যকে মৌলিক অধিকার হিসেবে গ্রহণ করা হয়নি ।" তিনি বলেন, "কিন্তু, এখানে রয়েছে আর্টিকল 21 । এখানে মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে এবং মানুষের জীবনের সুরক্ষা রয়েছে । জীবনের সুরক্ষা, বেঁচে থাকার অধিকার এগুলি স্বাস্থ্য পরিষেবা ছাড়া কীভাবে সম্ভব । মানুষ যদি স্বাস্থ্য না পায় তাহলে তার পক্ষে বেঁচে থাকা কীভাবে সম্ভব। স্বাস্থ্যের অধিকার যদি মানুষের না থাকে, তাহলে রাইটস টু লাইফটাও প্রহসন । এটারও কিন্তু কোনও মানে আছে বলে আমরা মনে করি না ।"
পূণ্যব্রত গুণ বলেন, "এখন যে অবস্থা আছে, 2010-এ সরকার যেখানে GDP-র 1.4 শতাংশ স্বাস্থ্যখাতে খরচ করত, সেখানে এখন মোটামুটি ভাবে এক শতাংশ স্বাস্থ্যখাতে সরকার খরচ করে । এর মধ্যে 2017-য় কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি নিয়ে এসেছে । এতে বলা হচ্ছে, সরকারের উচিত সমস্ত নাগরিকের প্রাইমারি, সেকেন্ডারি এবং টারশিয়ারি কেয়ারের ব্যবস্থা করা । এবং, তার জন্য ব্যয় বৃদ্ধি করা । ব্যয় বৃদ্ধি করে GDP-র 2.5 শতাংশ করা । পলিসিতে বলা হচ্ছে 2.5 শতাংশ করা হোক । কিন্তু, নীতি আয়োগ বলছে, সরকারের পক্ষে GDP-র এক শতাংশের বেশি খরচ করা সম্ভব নয় ।" এর মধ্যে আরও কিছু ঘটনা হয়েছে । কেন্দ্রীয় সরকার নতুন একটি যোজনা নিয়ে এসেছে । তিনি আরও বলেন, "এই যোজনার নাম আয়ুষ্মান ভারত । যাঁরা মোদির প্রশংসা করেন তাঁরা এটাকে মোদি কেয়ার নামে ডাকছে । UPA সরকারের সময় এরকম একটি প্রকল্প ছিল । সেটাকে বলা হত RSBY ( রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা ) । এর মাধ্যমে দারিদ্র সীমার নিচে যে মানুষরা আছেন, তাঁদের জন্য বছরে 30 হাজার টাকা পর্যন্ত হাসপাতালে ভরতি হয়ে চিকিৎসার খরচ, এটা বিমা কম্পানির মাধ্যমে সরকার বহন করত । এই বিমার প্রিমিয়াম দিত সরকার । মোদি সরকার এটাকে বাড়িয়ে করেছে পাঁচ লাখ টাকা ।"
পূণ্যব্রতবাবু আরও বলেন, "আমরা যদি দেখি, তাহলে দেখতে পাব, মানুষের চিকিৎসা করাতে যে খরচ হয়, সেই খরচের সিংহভাগটাই হয় আউটডোরে । অর্থাৎ, আউটডোরে চিকিৎসা করাতে গেলে ভিজ়িট বাবদ কিছুটা খরচ হয় । এর থেকে বেশি খরচ হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে । সব থেকে বেশি খরচ হয় ওষুধ কিনতে গিয়ে । আউটডোরে চিকিৎসা, ডাক্তারের কনসালটেশন, ইনভেস্টিগেশন, ওষুধ কেনা, এ সবের কোনওটাই RSBY, আয়ুষ্মান ভারত অথবা রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথী পরিষেবাতে পাওয়া যায় না । সরকারের টাকা কোথাকার টাকা? নাগরিকদের টাকা । নাগরিকদের টাকা প্রিমিয়াম বাবদ বিমা কম্পানিগুলিকে দিচ্ছে সরকার । যার একটি অংশ বিমা কোম্পানিগুলি দিচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে । তাদের মুনাফার জন্য । চিকিৎসার জন্য। এই ধরনের প্রোগ্রামগুলির মাধ্যমে আসলে মানুষের স্বাস্থ্যের বা চিকিৎসার অধিকার, মানুষ পাচ্ছেন না ।"
তিনি বলেন, "আমরা মনে করি, স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক অধিকার হওয়া উচিত । স্বাস্থ্যরক্ষার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে । সরকার আমাদের কাছ থেকে যে কর নেয় প্রত্যক্ষ এবং অপ্রত্যক্ষভাবে, তার একটি অংশ দিয়ে সরকারের পক্ষে এটা করা সম্ভব । এটা যে কেবল উন্নত দেশগুলিতে হয়েছে, তা নয় । আমাদের পাশের দেশ শ্রীলঙ্কা । GDP-র বিচারে যে দেশ আমাদের থেকে গরিব । কিংবা থাইল্যান্ড । তাদের সরকার যদি নাগরিকদের স্বাস্থ্যরক্ষার দায়িত্ব নিতে পারে, তা হলে আমাদের সরকারের পক্ষেও এটা অসম্ভব কিছু নয় ।" এদিকে সজলবাবু বলেন, "আমরা মনে করি, অবিলম্বে সংবিধানে মৈলিক অধিকার হিসেবে স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক বিষয় আসা উচিত । যেটা পৃথিবীর বহু দেশে এখনও পর্যন্ত মৌলিক অধিকার হিসেবে রয়েছে । সেই সব দেশের সরকার কিন্তু সেই পরিমাণ বাজেট বরাদ্দ করে । কোথাও 10 শতাংশ, কোথাও 14-15 শতাংশ । এর ফলে ওইসব দেশের স্বাস্থ্যের যে ইন্ডিকেটর, ইন্ডেক্স আমরা দেখতে পাই, সেগুলি অনেক উন্নত । সেখানকার সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের অধিকার অনেক বেশি। তাঁরা সহজে তাঁদের নিকটবর্তী হাসপাতাল থেকে পরিষেবা পেয়ে থাকেন । "
সজলবাবু বলেন, "ইন্ডিয়ান পাবলিক হেলথ স্ট্যান্ডার্ডস বলেছিল, 30 হাজার জনসংখ্যা পিছু একটি করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকতে হবে । এখনও পর্যন্ত আমরা দেখলাম, এক লাখের উপর জনসংখ্যা রয়েছে সেখানেও হেলথ সেন্টার নেই । এরকম প্রহসন চলছে । ভোর কমিটি বলেছিল 10 হাজার জনসংখ্যা পিছু অন্তত 75 বেডের একটি হাসপাতাল বানানোর কথা । 10 হাজার কেন 10 লাখ জনসংখ্যা পিছুও সেকেন্ডারি টায়ারে 75 বেডের হাসপাতাল আমরা দেখতে পাচ্ছি না । এই পরিমাণ ফাঁক থাকার ফলে মানুষ কিন্তু স্বাস্থ্য পরিষেবা পাচ্ছে না । এর ফলে খুব সাধারণ রোগে মানুষ ভুগছে এবং মারাও যাচ্ছে । পাবলিক হেলথের উপরে প্রিভেন্টিভ যে হেলথগুলি রয়েছে, সেগুলির উপর নজর দেওয়া হচ্ছে না । এর ফলে হাজার হাজার মানুষ সামান্য রোগ স্ক্রাব টাইফাস, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হচ্ছে । অনায়াসে যা প্রতিরোধ করা যেত ।"
Intro:কলকাতা, ২৪ নভেম্বর: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু)-র সংজ্ঞা অনুযায়ী, স্বাস্থ্য মানে শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক ভাবে ভালো থাকা। মানুষকে বেঁচে থাকতে গেলে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এগুলির মতো স্বাস্থ্যেরও প্রয়োজন। আমাদের দেশের সংবিধান সেই স্বাস্থ্যকে অধিকার হিসাবে এখনও স্বীকৃতি দেয়নি। আলমা-আটার ডিক্লিয়ারেশনে বলা হয়েছিল যে, ২০০০ সালের মধ্যে সমস্ত দেশের সমস্ত নাগরিকের স্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব সেই সেই দেশের সরকার নেবে। আমাদের দেশও এই ঘোষণায় সই করেছিল। কিন্তু, ২০০০ পেরিয়ে ২০১৯, এখনও আমাদের দেশের মানুষের কাছে স্বাস্থ্যের অধিকার অধরাই থেকে গিয়েছে।
Body:স্বাস্থ্যের অধিকার আমাদের দেশে সংবিধানের মৌলিক অধিকারের মধ্যে নেই। নির্দেশক নীতিতে স্বাস্থ্যের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। এ কথা জানিয়ে শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের পরামর্শদাতা ডাক্তার পুণ্যব্রত গুণ বলেন, "অথচ, আমরা যদি দেখি, ১৯৪৮-এ ইউনিভার্সাল ডিক্লেয়ারেশন অফ হিউমান রাইটস, তাতে কিন্তু স্বাস্থ্য অধিকার হিসাবে ছিল। এর এক বছর পরে যখন সংবিধান রচিত হল, সংবিধান প্রণেতারা তখন স্বাস্থ্যকে মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দেননি। মানুষকে বেঁচে থাকতে গেলে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এগুলির মতো স্বাস্থ্যের প্রয়োজন। আমাদের দেশের সংবিধান সেই স্বাস্থ্যকে অধিকার হিসাবে এখনও স্বীকৃতি দেয়নি।" সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক, ডাক্তার সজল বিশ্বাস বলেন, "এটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং খুব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা যে স্বাধীনতার ৭৩ বছর কেটে গেলেও, সংবিধানের বিভিন্ন সংশোধন হয়েছে তা সত্ত্বেও, ভারতীয় সংবিধানে স্বাস্থ্যকে মৌলিক অধিকার হিসাবে এখনও পর্যন্ত স্বীকৃত দেওয়া হয়নি। এটার উপর নির্ভর করে স্বাস্থ্য নিয়ে মানুষের প্রতি রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি কী, কতটা দেওয়া হবে।"
১৯৪৬-এ ভোর কমিটির রিপোর্ট বের হয়। এই কমিটি যদিও স্বাধীনতার আগের। শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের পরামর্শদাতা ডাক্তার পুণ্যব্রত গুণ বলেন, "ভোর কমিটির যে সুপারিশ ছিল তাতে বলা হয়েছিল, প্রত্যেক নাগরিকের, তাঁদের খরচ করার ক্ষমতা নির্বিশেষে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়া উচিত। আমাদের দেশে ১৯৪৭-এর পরের বছরগুলিতে যে সরকার ছিল, তখন সেই সরকারের আমলে গ্রামাঞ্চলের বা গরিব মানুষের কাছে চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার তবুও উদ্যোগ ছিল। কিন্তু, ৯০-এর দশকের শুরু থেকে আমরা দেখতে পাই সরকার ধীরে ধীরে স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে সরে আসছে এবং চিকিৎসা নিয়ে যাঁরা ব্যবসা করেন, তাঁদেরকে সেই জায়গাগুলি তাঁদের হাতে ছেড়ে দিচ্ছে।" তিনি বলেন, "এর মধ্যে ১৯৭৮-এ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র উদ্যোগে প্রাইমারি হেলথ কেয়ার নিয়ে একটি কনফারেন্স হয়েছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের কাজাখস্তানের রাজধানী আলমা-আটায়। এটাকে আলমা-আটা ডিক্লিয়ারেশন বলা হয়। এই আলমা-আটার ডিক্লিয়ারেশনে বলা হয়েছিল যে, ২০০০ সালের মধ্যে সমস্ত দেশের সমস্ত নাগরিকের স্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব সেই সেই দেশের সরকার নেবে। আমাদের দেশও এই ঘোষণায় সই করেছিল। কিন্তু, ২০০০ পেরিয়ে ২০১৯, এখনও আমাদের দেশের মানুষের কাছে স্বাস্থ্যের অধিকার অধরাই থেকে গিয়েছে। এর মধ্যে কিছু উদ্যোগ হয়েছে। ২০১০-এ তৎকালীন প্ল্যানিং কমিশন যা এখন নীতি আয়োগ, সেই প্ল্যানিং কমিশন হাই লেভেল এক্সপার্ট গ্রুপ অন ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ তৈরি করে।"
হাই লেভেল এই এক্সপার্ট গ্রুপের প্রধান ছিলেন এইমসের কার্ডিওলজির পূর্বতন অধ্যাপক, ডাক্তার কে শ্রীনাথ রেড্ডি। তাঁর নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি করা হয়। ভারতে যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করে সরকারকে সুপারিশ করার জন্য এই কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের পরামর্শদাতা ডাক্তার পুণ্যব্রত গুণ বলেন, "সরকার কীভাবে সমস্ত নাগরিকের স্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব নিতে পারে, সেই সুপারিশ করার কথা বলা হয়েছিল এই কমিটিকে। ২০১১-তে এই হাই লেভেল এক্সপার্ট গ্রুপ অন ইউনিভর্সাল হেলথ কভারেজ প্ল্যানিং কমিশনকে সুপারিশ করে। তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবী আজাদকেউ এই সুপারিশ পাঠানো হয়।" তিনি বলেন, "ওই সুপারিশের প্রধান বিষয়গুলি এরকম ছিল, স্বাস্থ্য খাতে সরকারকে ব্যয় বাড়াতে হবে। ২০১০-এ স্বাস্থ্যের পিছনে মোট খরচ হতো জিডিপি-র ৪.৩ শতাংশ। এর মধ্যে ১.৪ শতাংশ অর্থাৎ, এক-তৃতীয়াংশ খরচ করত সরকার। বাকিটা ছিল রোগীদের আউট অফ পকেট এক্সপেন্ডিচার। এই হাই লেভেল এক্সপার্ট গ্রুপ সুপারিশ করে, সরকারি যে ব্যয়, তা বাড়িয়ে ২০১৭-র মধ্যে জিডিপির ২.৫ শতাংশ করতে হবে এবং ২০২২-এর মধ্যে ৩ শতাংশ করতে হবে। তাঁরা হিসাব করে দেখালেন, এই বৃদ্ধি যদি করা হয়, তাহলে সরকারের পক্ষে সেই বর্ধিত খরচ দিয়ে সমস্ত নাগরিকের প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং অন্তিম স্তরে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাগুলির খরচ বহন করা সম্ভব। তাঁরা হেলথ এন্টাইটেলমেন্ট কার্ডের পরিকল্পনা করেছিলেন। এই কার্ড থাকলে যে কোনও মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা পেতে পারবেন। তাঁরা ন্যাশনাল হেলথ প্যাকেজের কথা বলেছিলেন। যে প্যাকেজে প্রাইমারি সেকেন্ডারি এবং টারশিয়ারি, সমস্ত স্তরে কোন কোন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বিনামূল্যে পাওয়া যাবে, তার প্রস্তাব করেছিলেন। তারা আরও অনেকগুলি প্রস্তাব করেছিলেন। আমরা দেখলাম, ২০১২-য় প্ল্যানিং কমিশন যখন তাদের প্ল্যান ডকুমেন্ট নিয়ে এল, তখন তারা মুখ ভরা কথা কেবল রাখল, সবার জন্য ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ। আসলেই কাজের কাজ কিছু হল না। সরকারি ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধি হল না। ২০১৪-য় যে এনডিএ সরকার এসেছে, এই সরকার এসে এক ধাক্কায় স্বাস্থ্য খাতে সরকারি খরচ অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে।"
সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক, ডাক্তার সজল বিশ্বাস বলেন, "স্বাধীনতার আগে ১৯৪৩-এ ভোর কমিটি বসে। এই ভোর কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছিল সমস্ত মানুষের স্বাস্থ্য, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। এর পরে অনেক কমিটি বসেছে। আলমা-আটার ডিক্লিয়ারেশন। সেখানেও দেখা গিয়েছে স্বাস্থ্যের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। এটাও বলা হয়েছিল স্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দ বাজেট সামগ্রিক বাজেটের অন্তত ১০ শতাংশ করতে হবে। তা সত্ত্বেও সরকারের চূড়ান্ত অমানবিকতা দৃষ্টিভঙ্গি এবং স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যবসা করার যে দৃষ্টিভঙ্গি, ব্যবসায়ীদের হাতে স্বাস্থ্যকে তুলে দেওয়ার যে দৃষ্টিভঙ্গি, সেই দৃষ্টিভঙ্গি থাকার ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি স্বাস্থ্যকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এটা অত্যন্ত অন্যায়, অমানবিক বলে আমরা মনে করি। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে যাতে শাস্তির মতো লুকরেটিভ একটি মার্কেট, যেটা নিয়ে আমাদের দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা যাতে ব্যবসা করতে পারেন, এই সুবিধাটা রেখে দেওয়ার জন্য আমরা মনে করি স্বাস্থ্যকে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হিসেবে গ্রহণ করা হয়নি।" সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক, ডাক্তার সজল বিশ্বাস বলেন, "কিন্তু, একটি জায়গা এখানে রয়েছে আর্টিকেল ২১। এখানে রাইটস টু লাইফ রয়েছে অর্থাৎ, মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার কিন্তু রয়েছে এবং মানুষের লাইফের প্রোটেকশন রয়েছে। লাইফের প্রোটেকশন, বেঁচে থাকার অধিকার এগুলি স্বাস্থ্য পরিষেবা ছাড়া কীভাবে সম্ভব। মানুষ যদি স্বাস্থ্য না পাই তাহলে তার পক্ষে বেঁচে থাকা কীভাবে সম্ভব। বেঁচে বড় একটি পার্ট হচ্ছে স্বাস্থ্য। হেলথ হ্যাজার্ডে মানুষের একটি বড় অংশের মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্যের অধিকার যদি মানুষের না থাকে, তাহলে রাইটস টু লাইফটাও প্রহসন। এটারও কিন্তু কোনও মানে আছে বলে আমরা মনে করি না।"
শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের পরামর্শদাতা ডাক্তার পুণ্যব্রত গুণ বলেন, "এখন যে অবস্থা আছে, ২০১০-এ সরকার যেখানে জিডিপি-র ১.৪ শতাংশ স্বাস্থ্যখাতে খরচ করত, সেখানে এখন মোটামুটি ভাবে ১ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে সরকার খরচ করে। এর মধ্যে ২০১৭-য় কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি নিয়ে এসেছে। এই স্বাস্থ্য নীতিতে বলা হচ্ছে, সরকারের উচিত সমস্ত নাগরিকের প্রাইমারি সেকেন্ডারি এবং টারশিয়ারি কেয়ারের ব্যবস্থা করা। এবং, তার জন্য ব্যয় বৃদ্ধি করা। ব্যয় বৃদ্ধি করে জিডিপি-র ২.৫ শতাংশ করা। পলিসিতে বলা হচ্ছে ২.৫ শতাংশ করা হোক। কিন্তু, নীতি আয়োগ বলছে, সরকারের পক্ষে জিডিপির ১ শতাংশের বেশি খরচ করা সম্ভব নয়।" এর মধ্যে আরও কিছু ঘটনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার নতুন একটি যোজনা নিয়ে এসেছে। শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের পরামর্শদাতা ডাক্তার পুণ্যব্রত গুণ বলেন, "এই যোজনার নাম আয়ুষ্মান ভারত। যাঁরা মোদীর (প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি) প্রশংসা করেন তারা এটাকে মোদিকেয়ার নামে ডাকছে। ইউপিএ সরকারের সময় এ রকম একটি প্রকল্প ছিল। সেটাকে বলা হত RSBY ( রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা )। এর মাধ্যমে, দারিদ্র সীমার নিচে যে মানুষরা আছেন, তাদের জন্য বছরে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসার খরচ, এটা বিমা কোম্পানির মাধ্যমে সরকার বহন করত। এই বিমার প্রিমিয়াম দিত সরকার। মোদি সরকার এটাকে বাড়িয়ে যেটা করেছে ৫ লক্ষ টাকা। তারা হিসাব দিয়েছেন, ১০ কোটি পরিবারকে। অর্থাৎ, ১০ কোটি পরিবার মানে মোটামুটি ৫০ কোটি মানুষকে বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হাসপাতিলে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা খরচ সরকার বিমা কোম্পানির মাধ্যমে বহন করবে।"
শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের পরামর্শদাতা ডাক্তার পুণ্যব্রত গুণ বলেন, "আমরা যদি দেখি, তাহলে দেখতে পাব, মানুষের চিকিৎসা করাতে যে খরচ হয়, সেই খরচের সিংহভাগটাই হয় আউটডোরে। অর্থাৎ, আউটডোরে চিকিৎসা করাতে গেলেন, ডাক্তার দেখাতে গেলে কনসালটেশনের জন্য কিছুটা খরচ হল। এর থেকে বেশি খরচ হয় ইনভেস্টিগেশন অর্থাৎ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে গিয়ে। সব থেকে বেশি খরচ হয় প্রায় ৫২ শতাংশ খরচ হয় ওষুধ কিনতে গিয়ে। আউটডোরে চিকিৎসা, ডাক্তারের কনসালটেশন, ইনভেস্টিগেশন, ওষুধ কেনা, এ সবের কোনওটাই কিন্তু RSBY কিংবা আয়ুষ্মান ভারত অথবা, আমাদের রাজ্যের স্বাস্থ্য সাথী কোনওটাতেই কভারড নয়। আসলে যেটা হচ্ছে, সরকারের টাকা। সরকারের টাকা কোথাকার টাকা? নাগরিকদের টাকা। নাগরিকদের টাকা প্রিমিয়াম বাবদ বিমা কোম্পানিগুলিকে দিচ্ছে সরকার। যার একটি অংশ বিমা কোম্পানিগুলি দিচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে, তাদের মুনাফা করার জন্য, চিকিৎসার জন্য। এই ধরনের প্রোগ্রামগুলির মাধ্যমে আসলে মানুষের স্বাস্থ্যের বা চিকিৎসার অধিকার, মানুষ পাচ্ছেন না।"
শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের পরামর্শদাতা ডাক্তার পুণ্যব্রত গুণ বলেন, "আমাদের বক্তব্য খুব স্পষ্ট, আমরা মনে করি, স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক অধিকার হওয়া উচিত। স্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। সরকার এটা করবে, সরকার আমাদের কাছ থেকে যে ট্যাক্স নেয় প্রত্যক্ষ এবং অপ্রত্যক্ষভাবে, সেই ট্যাক্সের একটি অংশ দিয়ে সরকারের পক্ষে এটা করা সম্ভব। এটা যে কেবল উন্নত দেশগুলিতে হয়েছে, তা নয়। আমাদের পাশের দেশ শ্রীলঙ্কা। জিডিপির বিচারে যে দেশ আমাদের থেকে গরিব। কিংবা, আমাদের মতো র্যাঙ্কিংকে থাইল্যান্ড। তাদের সরকার যদি নাগরিকদের স্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব নিতে পারে, তা হলে আমাদের সরকারের পক্ষেও এটা অসম্ভব কিছু নয়।" সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক, ডাক্তার সজল বিশ্বাস বলেন, "আমরা মনে করি, অবিলম্বে সংবিধানে ফান্ডামেন্টাল রাইটস হিসাবে স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক বিষয় আসা উচিত। যেটা পৃথিবীর বহু দেশে এখনও পর্যন্ত ফান্ডামেন্টাল রাইটস হিসেবে রয়েছে। সেই সব দেশের সরকার কিন্তু সেই পরিমাণ বাজেট বরাদ্দ করে, কোথাও ১০ শতাংশ, কোথাও ১৪-১৫ শতাংশ। এর ফলে ওইসব দেশের স্বাস্থ্যের যে ইন্ডিকেটর, ইন্ডেক্স আমরা দেখতে পাই, সেগুলি অনেক উন্নত। সেখানকার সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের অধিকার অনেক বেশি। তাঁরা সহজে তাঁদের নিকটবর্তী হাসপাতাল থেকে পরিষেবা পেয়ে থাকেন। যেটা আমাদের দেশের ক্ষেত্রে যেহেতু সরকারের এই ধরনের একটি অ্যাটিটিউড রয়েছে, সেহেতু আমাদের দেশে ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু দেখতে পাচ্ছি বেশিরভাগ মানুষ স্বাস্থ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমরা দেখলাম ন্যাশনাল হেলথ প্রোফাইল ২০১৮ যেটা বেরিয়েছে, সেখানেও দেখলাম সরকারি ডাক্তারের ক্ষেত্রে কী রকম অনুপাত রয়েছে, কীরকম বৈষম্যমূলক একটি রেশিও। প্রায় সাড়ে ১০ হাজার মানুষ কিছু একজন সরকারি ডাক্তার রয়েছে। গ্রামের ক্ষেত্রে এটা প্রায় ৩০ হাজার মানুষ হিসাবে একজন মাত্র ডাক্তার রয়েছেন। যেখানে হু নিজেই বলছে যে, এক হাজার মানুষ পিছু একজন করে ডাক্তার দরকার। আমরা যদি ব্রিটেন, কিউবা, উত্তর কোরিয়ার মতো দেশগুলিকে দেখি, সেখানে এক হাজার জনসংখ্যা পিছু বা তার থেকেও কম মানুষ পিছু সরকারি ডাক্তার সেখানে রয়েছেন। সমস্ত মানুষ সরকারি পরিষেবার আওতায় রয়েছেন। সরকারি পরিষেবা সেখানে সিকিওরড। আমাদের দেশে এই জায়গাটা নেই।"
সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক, ডাক্তার সজল বিশ্বাস বলেন, "ইন্ডিয়ান পাবলিক হেলথ স্ট্যান্ডার্স বলেছিল, ৩০ হাজার জনসংখ্যা পিছু একটি করে প্রাইমারি হেলথ সেন্টার থাকতে হবে, এখনও পর্যন্ত আমরা দেখলাম, এক লাখের উপর জনসংখ্যা রয়েছে সেখানেও হেলথ সেন্টার নেই। এরকম প্রহসন চলছে। ভোর কমিটি বলেছিল ১০ হাজার জনসংখ্যা পিছু অন্তত ৭৫ বেডের একটি হাসপাতাল বানানোর কথা। ১০ হাজার কেন ১০ লক্ষ জনসংখ্যা কিছু সেকেন্ডারি টায়ারে ৭৫ বেডের হাসপাতাল আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এত গ্যাপ, হিউজ গ্যাপ আমাদের দেশে রয়েছে, এই হিউজ গ্যাপ থাকার ফলে মানুষ কিন্তু স্বাস্থ্য পাচ্ছে না। এর ফলে খুব সাধারণ রোগে মানুষ ভুগছে এবং সাধারণ রোগে মানুষ মারা যাচ্ছে। পাবলিক হেলথের উপরে প্রিভেন্টিভ যে হেলথগুলি রয়েছে, সেগুলির উপর নজর দেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে হাজার হাজার মানুষ সামান্য রোগ স্ক্রাব টাইফাস, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া ছোটখাটো এইসব রোগ, অনায়াসে প্রতিরোধ করা যেত অনায়াসে যার চিকিৎসা করা যায়, সেই সব রোগে সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছেন। এরকম একটি অবস্থার মধ্যে আমরা পড়ে আছি। আমাদের দেশে শিশুমৃত্যু এবং মাতৃমৃত্যুর হার গোটা পৃথিবীতে সবথেকে বেশি। পৃথিবীতে যা টিউবারকিলোসিস রোগীর আছেন তার এক তৃতীয়াংশ শুধুমাত্র আমাদের দেশে আছেন। লেপ্রসি এখনও পর্যন্ত পৃথিবীতে যা আছে, তার এক তৃতীয়াংশ আমাদের দেশে রয়েছে।" সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক, ডাক্তার সজল বিশ্বাস বলেন, "হেলথ নিয়ে আমাদের দেশ এত ভয়ঙ্কর ক্রাইসিসের মধ্যে রয়েছে, তা সত্ত্বেও সরকার কিউ উদাসীন। আমরা মনে করি, মোটিভেটেডলি ফান্ডামেন্টাল রাইটস হিসাবে হেলথকে ইনক্লুড করা হয়নি।"
Conclusion:সংবিধান ৭০: এখনও অধরাই রয়ে গিয়েছে স্বাস্থ্যের অধিকার
part 1 end