ETV Bharat / state

57 বছর বয়সে মার্শাল আর্ট শিখছেন মহিলা চিকিৎসক

কেউ হয়ত হাসছেন, কেউ হয়তো বিরূপ মন্তব্য করছেন । তবে, এ সব নিয়ে তিনি 'ডোন্ট কেয়ার' মনোভাবে রয়েছেন । চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যে রোগীদের সামলে নিয়ে নিজের 'প‍্যাশন'-কে বাস্তবে রূপ দিতেই NRS হাসপাতালের তায়কোন্দোর ক্লাসে যোগ দিয়েছেন ৫৭ বছর বয়সি অনুরাধা ফাদিকার ।

author img

By

Published : Dec 6, 2019, 12:03 AM IST

taikondo
তায়কোন্ডো

কলকাতা, 5 ডিসেম্বর : ৫৭ বছর বয়সে মার্শাল আর্টের ক্লাস শুরু করেছেন তিনি । যার জেরে তাঁকে নিয়ে কেউ হয়ত হাসছেন, কেউ হয়ত বিরূপ মন্তব্য করছেন । তবে, এ সব নিয়ে তিনি 'ডোন্ট কেয়ার' মনোভাবে রয়েছেন । কারণ তিনি অন্যায় কিছু করছেন না । আর নিজের সুরক্ষার বিষয়টি তো রয়েছে । কথা হচ্ছে অধ্যাপক অনুরাধা ফাদিকারের । তিনি NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গাইনোকোলজি বিভাগের চিকিৎসক । চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যে রোগীদের সামলে নিয়েও তিনি তার 'প‍্যাশন'-কে বাস্তবে রূপ দিতেই NRS হাসপাতালের তায়কোন্দোর ক্লাসে যোগ দিয়েছেন তিনি ।

২০১৭-র 1 মার্চ থেকে NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চালু হয়েছে কোরিয়ান মার্শাল আর্ট, তায়কোন্দোর ক্লাস । এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিকেল পড়ুয়া, জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র ডাক্তার, নার্স, নার্সিংয়ের পড়ুয়া সহ অন্য যে কেউ এই ক্লাসে অংশ নিতে পারেন । চিকিৎসকের পাশাপাশি অনুরাধা ফাদিকার মেডিকেল এডুকেশনের একজন শিক্ষক । এদিক থেকে দেখলে, তায়কোন্দোর এই ক্লাসে মেডিকেল এডুকেশনের পড়ুয়াদের পাশাপাশি তিনিও একজন শিক্ষার্থী ।

তায়কোন্দোর ক্লাসে যোগদানের কারণ হিসেবে অনুরাধা ফাদিকার বলেন, "এই ইচ্ছেটা আমার বহুকালের । অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তবায়িত হয়নি । আমি যখন প্রথম জানলাম আমাদের NRS-এ ক্লাস শুরু হয়েছে তখন ইচ্ছেটা মাথানাড়া দিয়ে উঠল । কিন্তু তারপরেও মনে হচ্ছিল এই বয়সে শুরু করব ?" এরপরেই তিনি হাসপাতালের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট দ্বৈপায়ন বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলেন । ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট তাঁকে জানান, যে কোনও বয়সেই তায়েকোন্দো শুরু করা যায় । দ্বৈপায়ন বিশ্বাস শুধুমাত্র NRS -এর ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্টের পাশাপাশি তায়কোন্দোর স্টেট নোডাল অফিসার । ফলে তাঁর থেকে একথা শুনে খানিকটা আত্মবিশ্বাস পান অনুরাধা ফাদিকার । তিনি বলেন, "তৎক্ষণাৎ আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি শিখব । সেপ্টেম্বরে ক্লাসে জয়েন করলাম । এই হিসাবে তিন মাস । কিন্তু প্র্যাকটিক্যালি অনেক কম । কারণ বিভিন্ন কারণে আমি আসতে পারি না । আমাদের এখানে প্র্যাকটিস হয় বুধ এবং শুক্রবার বিকেলে । শুক্রবার আমার অ্যাডমিশন ডে (অর্থাৎ, এই চিকিৎসকের অধীনে ওই দিন সেখানকার গাইনোকোলজি বিভাগে রোগীদের ভরতি করানো হয়) । অনেক দেরি হয়ে গেলে ক্লাসে আসতে পারি না । এই কারণে প্র্যাকটিক্যালি অনেকটা কম ক্লাস করেছি । বলতে পারেন, মাস দেড়েক হল শিখছি ।"

হায়দরাবাদে ডাক্তার দিশার ঘটনা প্রসঙ্গে অনুরাধা ফাদিকার বলেন, "মহিলারা এখন কোথাও সুরক্ষিত নন । কোনও মুহুর্তেই সুরক্ষিত নন । কোনও বয়সটাই সুরক্ষিত নয় । নিউবর্ন বেবি থেকে ১০০ বছরের বৃদ্ধা, কোথাও কেউ সুরক্ষিত নন । সেক্ষেত্রে সুরক্ষার বিষয়টি কীভাবে আমরা নিশ্চিত করতে পারি ? আমরা অন্য কারও উপর নির্ভর করতে পারি । কিন্তু সেটা সবসময় সম্ভব নয় । তাহলে আমাদের সুরক্ষা আমাদের নিজেদেরই করতে হবে । আমরা মা দুর্গাকে তাঁর শক্তির জন্য পুজো করি । আমি মনে করি, প্রতিটি মেয়ের মধ্যে মা দুর্গা আছেন । সেই সম্ভাবনা ও সামর্থ্য আছে । এটা ঘুমন্ত অবস্থায় আছে । এটাকে জাগিয়ে তুলতে হবে । জাগানোর কাজ করে মার্শাল আর্ট । এর ফলে একজন মানুষ, শুধুমাত্র মহিলা নন, যে কোনও মানুষ যদি এই আর্ট প্র্যাকটিস করেন, তাহলে তিনি শারীরিক দিক দিয়ে পুরোপুরি সক্ষম হবেন । সক্ষম হবেন মানসিক দিক থেকেও । কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়লে তৎক্ষণাৎ একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার, কীভাবে নিজেকে প্রোটেক্ট করব, কীভাবে অ্যাটাক করব, কীভাবে ওই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসব, এই বিষয়ে এই আর্টের মাধ্যমে আমরা নিজেদের তৈরি করতে পারি ।"

তাঁর তায়কোন্দো ক্লাস করা নিয়ে সহকর্মী, বন্ধু, পরিচিতদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অনুরাধা ফাদিকার বলেন, "আমাদের একটা মাইন্ড সেট আছে তো । আমরা সাধারণত দেখি ক্যারাটে, তায়কোন্দো, কুংফু শিখছে বাচ্চারা । অ্যাডাল্ট বয়সে এরকম খুব কম । এই ইনস্টিটিউটের মধ্যে আমি সেকেন্ড পারসন যে এত বেশি বয়সে শিখছে । আমার বয়স এখন ৫৭ বছর। প্রথম কথা, এটা এই বয়সে যে শেখা যায় সেটাই মানুষ মানতে পারছে না । এজন্য আমি কাউকে এখনও বলিনি । আমি এই ক্লাসে জয়েন করেছি । এটা ধীরে ধীরে অনেকেই জানতে পারছেন । প্রথমে তাঁরা জানবেন । তারপরে মানবেন । তারপরে তাঁরাও জয়েন করবেন । এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া । আমি এক্ষুনি বললে কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে কেউ জয়েন করবেন না । হয়ত আমি জয়েন করেছি শুনে অনেকে হাসছেন । হয়ত প্রতিকূল মন্তব্য করছেন । কিন্তু আমি এটাকে পাত্তা দিই না । আই ডোন্ট কেয়ার ফর দ্যাট । কারণ, আমি যেটা করছি সেটা তো অন্যায় কিছু করছি না । এটা একটা খুব ভালো কাজ করছি । আমি তো সবেমাত্র জয়েন করেছি । এর পরে আমি যখন একটু শিখে যাব, আমি তখন অন্যদের প্রভাবিত করতে পারব । কিন্তু নিজে একটু না শিখে কাউকে প্রভাবিত করা যায় না ।"

তায়কোন্দো ক্লাসে যোগদান নিয়ে অনুরাধা ফাদিকার বলেন, "সবারই একটা প‍্যাশন থাকে । কেউ গান ভালোবাসেন, কেউ নাচতে ভালোবাসেন, কেউ আঁকতে ভালোবাসেন । এরকমই একটি প‍্যাশন আমার মনের মধ্যে ছিল যে আমি এটা শিখব । কিন্তু যেভাবেই হোক সেই সুযোগ এবং সময় কোনওটাই হয়নি । এটা আমার নিজের ইনস্টিটিউটে হচ্ছে বলে এই সুযোগের আমি সদ্ব‍্যবহার করতে পারছি । এটা যদি অন্য জায়গায় হত তাহলে হয়তো সম্ভব হত না । যেমন আমার বিকেল 4টে পর্যন্ত ওয়ার্কিং আওয়ার্স । এদিকে ওই সময় থেকেই ক্লাস শুরু হচ্ছে । এটা একটা বিশাল প্লাস পয়েন্ট যে আমি আমার নিজের ইনস্টিটিউটে কাজ শেষ করে সঙ্গে সঙ্গে ক্লাসে জয়েন করতে পারছি।"

কলকাতা, 5 ডিসেম্বর : ৫৭ বছর বয়সে মার্শাল আর্টের ক্লাস শুরু করেছেন তিনি । যার জেরে তাঁকে নিয়ে কেউ হয়ত হাসছেন, কেউ হয়ত বিরূপ মন্তব্য করছেন । তবে, এ সব নিয়ে তিনি 'ডোন্ট কেয়ার' মনোভাবে রয়েছেন । কারণ তিনি অন্যায় কিছু করছেন না । আর নিজের সুরক্ষার বিষয়টি তো রয়েছে । কথা হচ্ছে অধ্যাপক অনুরাধা ফাদিকারের । তিনি NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গাইনোকোলজি বিভাগের চিকিৎসক । চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যে রোগীদের সামলে নিয়েও তিনি তার 'প‍্যাশন'-কে বাস্তবে রূপ দিতেই NRS হাসপাতালের তায়কোন্দোর ক্লাসে যোগ দিয়েছেন তিনি ।

২০১৭-র 1 মার্চ থেকে NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চালু হয়েছে কোরিয়ান মার্শাল আর্ট, তায়কোন্দোর ক্লাস । এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিকেল পড়ুয়া, জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র ডাক্তার, নার্স, নার্সিংয়ের পড়ুয়া সহ অন্য যে কেউ এই ক্লাসে অংশ নিতে পারেন । চিকিৎসকের পাশাপাশি অনুরাধা ফাদিকার মেডিকেল এডুকেশনের একজন শিক্ষক । এদিক থেকে দেখলে, তায়কোন্দোর এই ক্লাসে মেডিকেল এডুকেশনের পড়ুয়াদের পাশাপাশি তিনিও একজন শিক্ষার্থী ।

তায়কোন্দোর ক্লাসে যোগদানের কারণ হিসেবে অনুরাধা ফাদিকার বলেন, "এই ইচ্ছেটা আমার বহুকালের । অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তবায়িত হয়নি । আমি যখন প্রথম জানলাম আমাদের NRS-এ ক্লাস শুরু হয়েছে তখন ইচ্ছেটা মাথানাড়া দিয়ে উঠল । কিন্তু তারপরেও মনে হচ্ছিল এই বয়সে শুরু করব ?" এরপরেই তিনি হাসপাতালের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট দ্বৈপায়ন বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলেন । ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট তাঁকে জানান, যে কোনও বয়সেই তায়েকোন্দো শুরু করা যায় । দ্বৈপায়ন বিশ্বাস শুধুমাত্র NRS -এর ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্টের পাশাপাশি তায়কোন্দোর স্টেট নোডাল অফিসার । ফলে তাঁর থেকে একথা শুনে খানিকটা আত্মবিশ্বাস পান অনুরাধা ফাদিকার । তিনি বলেন, "তৎক্ষণাৎ আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি শিখব । সেপ্টেম্বরে ক্লাসে জয়েন করলাম । এই হিসাবে তিন মাস । কিন্তু প্র্যাকটিক্যালি অনেক কম । কারণ বিভিন্ন কারণে আমি আসতে পারি না । আমাদের এখানে প্র্যাকটিস হয় বুধ এবং শুক্রবার বিকেলে । শুক্রবার আমার অ্যাডমিশন ডে (অর্থাৎ, এই চিকিৎসকের অধীনে ওই দিন সেখানকার গাইনোকোলজি বিভাগে রোগীদের ভরতি করানো হয়) । অনেক দেরি হয়ে গেলে ক্লাসে আসতে পারি না । এই কারণে প্র্যাকটিক্যালি অনেকটা কম ক্লাস করেছি । বলতে পারেন, মাস দেড়েক হল শিখছি ।"

হায়দরাবাদে ডাক্তার দিশার ঘটনা প্রসঙ্গে অনুরাধা ফাদিকার বলেন, "মহিলারা এখন কোথাও সুরক্ষিত নন । কোনও মুহুর্তেই সুরক্ষিত নন । কোনও বয়সটাই সুরক্ষিত নয় । নিউবর্ন বেবি থেকে ১০০ বছরের বৃদ্ধা, কোথাও কেউ সুরক্ষিত নন । সেক্ষেত্রে সুরক্ষার বিষয়টি কীভাবে আমরা নিশ্চিত করতে পারি ? আমরা অন্য কারও উপর নির্ভর করতে পারি । কিন্তু সেটা সবসময় সম্ভব নয় । তাহলে আমাদের সুরক্ষা আমাদের নিজেদেরই করতে হবে । আমরা মা দুর্গাকে তাঁর শক্তির জন্য পুজো করি । আমি মনে করি, প্রতিটি মেয়ের মধ্যে মা দুর্গা আছেন । সেই সম্ভাবনা ও সামর্থ্য আছে । এটা ঘুমন্ত অবস্থায় আছে । এটাকে জাগিয়ে তুলতে হবে । জাগানোর কাজ করে মার্শাল আর্ট । এর ফলে একজন মানুষ, শুধুমাত্র মহিলা নন, যে কোনও মানুষ যদি এই আর্ট প্র্যাকটিস করেন, তাহলে তিনি শারীরিক দিক দিয়ে পুরোপুরি সক্ষম হবেন । সক্ষম হবেন মানসিক দিক থেকেও । কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়লে তৎক্ষণাৎ একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার, কীভাবে নিজেকে প্রোটেক্ট করব, কীভাবে অ্যাটাক করব, কীভাবে ওই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসব, এই বিষয়ে এই আর্টের মাধ্যমে আমরা নিজেদের তৈরি করতে পারি ।"

তাঁর তায়কোন্দো ক্লাস করা নিয়ে সহকর্মী, বন্ধু, পরিচিতদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অনুরাধা ফাদিকার বলেন, "আমাদের একটা মাইন্ড সেট আছে তো । আমরা সাধারণত দেখি ক্যারাটে, তায়কোন্দো, কুংফু শিখছে বাচ্চারা । অ্যাডাল্ট বয়সে এরকম খুব কম । এই ইনস্টিটিউটের মধ্যে আমি সেকেন্ড পারসন যে এত বেশি বয়সে শিখছে । আমার বয়স এখন ৫৭ বছর। প্রথম কথা, এটা এই বয়সে যে শেখা যায় সেটাই মানুষ মানতে পারছে না । এজন্য আমি কাউকে এখনও বলিনি । আমি এই ক্লাসে জয়েন করেছি । এটা ধীরে ধীরে অনেকেই জানতে পারছেন । প্রথমে তাঁরা জানবেন । তারপরে মানবেন । তারপরে তাঁরাও জয়েন করবেন । এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া । আমি এক্ষুনি বললে কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে কেউ জয়েন করবেন না । হয়ত আমি জয়েন করেছি শুনে অনেকে হাসছেন । হয়ত প্রতিকূল মন্তব্য করছেন । কিন্তু আমি এটাকে পাত্তা দিই না । আই ডোন্ট কেয়ার ফর দ্যাট । কারণ, আমি যেটা করছি সেটা তো অন্যায় কিছু করছি না । এটা একটা খুব ভালো কাজ করছি । আমি তো সবেমাত্র জয়েন করেছি । এর পরে আমি যখন একটু শিখে যাব, আমি তখন অন্যদের প্রভাবিত করতে পারব । কিন্তু নিজে একটু না শিখে কাউকে প্রভাবিত করা যায় না ।"

তায়কোন্দো ক্লাসে যোগদান নিয়ে অনুরাধা ফাদিকার বলেন, "সবারই একটা প‍্যাশন থাকে । কেউ গান ভালোবাসেন, কেউ নাচতে ভালোবাসেন, কেউ আঁকতে ভালোবাসেন । এরকমই একটি প‍্যাশন আমার মনের মধ্যে ছিল যে আমি এটা শিখব । কিন্তু যেভাবেই হোক সেই সুযোগ এবং সময় কোনওটাই হয়নি । এটা আমার নিজের ইনস্টিটিউটে হচ্ছে বলে এই সুযোগের আমি সদ্ব‍্যবহার করতে পারছি । এটা যদি অন্য জায়গায় হত তাহলে হয়তো সম্ভব হত না । যেমন আমার বিকেল 4টে পর্যন্ত ওয়ার্কিং আওয়ার্স । এদিকে ওই সময় থেকেই ক্লাস শুরু হচ্ছে । এটা একটা বিশাল প্লাস পয়েন্ট যে আমি আমার নিজের ইনস্টিটিউটে কাজ শেষ করে সঙ্গে সঙ্গে ক্লাসে জয়েন করতে পারছি।"

Intro:কলকাতা, ৪ ডিসেম্বর: ৫৭ বছর বয়সে মার্শাল আর্টের ক্লাস শুরু করেছেন তিনি। যার জেরে, তাঁকে নিয়ে কেউ হয়তো হাসছেন, কেউ হয়তো বিরূপ মন্তব্য করছেন। তবে, এ সব নিয়ে তিনি "ডোন্ট কেয়ার" মনোভাবে রয়েছেন। কারণ, তিনি অন্যায় কিছু করছেন না। আর, নিজের সুরক্ষার বিষয়টি তো রয়েইছে। তবে, এর থেকেও তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ, সম্পূর্ণ মানুষ গড়ে তোলে মার্শাল আর্ট। তিনি, অধ্যাপক অনুরাধা ফাদিকার। তিনি NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গাইনোকোলজি বিভাগের একজন চিকিৎসক। চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যে রোগীদের সামলে নিয়েও তিনি তার "প‍্যাশন"-এর বাস্তব রূপ দিয়ে চলেছেন এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তায়েকোন্দোর ক্লাসে।


Body:২০১৭-র পয়লা মার্চ থেকে NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চালু হয়েছে কোরিয়ান মার্শাল আর্ট, তায়েকোন্দোর ক্লাস। এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিকেল পড়ুয়া, জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র ডাক্তার, নার্স, নার্সিংয়ের পড়ুয়া সহ অন্য যে কেউ এই ক্লাসে পাঠ নিতে পারেন। চিকিৎসকের পাশাপাশি অনুরাধা ফাদিকার মেডিকেল এডুকেশনের একজন শিক্ষক। এ দিক থেকে দেখতে গেলে, NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের তায়েকোন্দোর এই ক্লাসে মেডিকেল এডুকেশনের পড়ুয়াদের পাশাপাশি তিনিও একজন শিক্ষার্থী। তিনি কেন এই ক্লাসে জয়েন করার সিদ্ধান্ত নিলেন? এই চিকিৎসক-অধ্যাপক অনুরাধা ফাদিকার বলেন, "এই ইচ্ছাটা আমার বহুকালের। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তবায়িত হয়নি। আমি যখন প্রথম জানলাম আমাদের NRS-এ ক্লাস শুরু হয়েছে, তখন ইচ্ছাটা মাথানাড়া দিয়ে উঠল। কিন্তু, তার পরেও মনে হচ্ছিল এই বয়সে শুরু করব?"

এর পরে হাসপাতালের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট দ্বৈপায়ন বিশ্বাসের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে তাঁর এই ইচ্ছার বিষয়টি যখন উঠল, ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট তখন বলেন, যে কোনও বয়সেই তায়েকোন্দো শুরু করতে পারেন কেউ। এ দিকে, দ্বৈপায়ন বিশ্বাস শুধুমাত্র এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট নন। তিনি, তায়েকোন্দোর স্টেট নোডাল অফিসার। অনুরাধা ফাদিকার বলেন, "তৎক্ষণাৎ আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি শিখব। জাস্ট পরের দিন-ই ক্লাসে জয়েন করলাম।" পুজোর আগে, গত সেপ্টেম্বর মাসে NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এই মহিলা চিকিৎসক এখানকার তায়েকোন্দোর ক্লাসে জয়েন করেছেন। তিনি বলেন, "এই হিসাবে তিন মাস। কিন্তু, প্র্যাকটিক্যালি অনেক কম। কারণ, বিভিন্ন কারণে আমি আসতে পারি না। আমাদের এখানে প্র্যাকটিস হয় বুধ এবং শুক্রবার বিকালে। শুক্রবার আমার অ্যাডমিশন ডে (অর্থাৎ, এই চিকিৎসকের অধীনে ওই দিন সেখানকার গাইনোকোলজি বিভাগে রোগীদের ভর্তি করানো হয়)। অনেক দেরি হয়ে গেল, হয়তো ক্লাসে আসতে পারলাম না। এই কারণে প্র্যাকটিক্যালি অনেকটা কম। বলতে পারেন, মাস দেড়েক হল শিখছি।"

হায়দরাবাদে ডাক্তার প্রিয়াঙ্কা রেড্ডিরর ঘটনা প্রসঙ্গে অনুরাধা ফাদিকার বলেন, "মহিলারা এখন কোথাও সুরক্ষিত নন। কোনও মুহুর্তেই সুরক্ষিত নন। এবং, কোনও বয়সটাই সুরক্ষিত নয়। নিউবর্ন বেবি থেকে শুরু করে ১০০ বছরের বৃদ্ধা, কোথাও কেউ সুরক্ষিত নন।" তিনি বলেন, "সেক্ষেত্রে সুরক্ষার বিষয়টি কীভাবে আমরা নিশ্চিত করতে পারি? আমরা অন্য কারও উপর নির্ভর করতে পারি। কিন্তু, সেটা সব সময় সম্ভব নয়। তাহলে আমাদের সুরক্ষা আমাদের নিজেদেরই করতে হবে।" এই চিকিৎসক বলেন, "আমরা মা দুর্গাকে পুজো করি। কারণ, তাঁর পাওয়ার। আমি মনে করি, প্রতিটি মেয়ের মধ্যে মা দুর্গা আছেন। সেই সম্ভাবনা, সামর্থ্য আছে। এটা ঘুমন্ত অবস্থায় আছে। এটাকে জাগিয়ে তুলতে হবে। জাগানোর কাজ করে মার্শাল আর্ট। এর ফলে, একজন মানুষ, শুধুমাত্র মহিলা নন, যে কোনও মানুষ যদি এই আর্ট প্র্যাকটিস করেন, তাহলে তাঁর শারীরিক দিক দিয়ে তিনি পুরোপুরি সক্ষম হবেন, মানসিক দিক দিয়ে তিনি সক্ষম হবেন। এবং, কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়লে, তৎক্ষণাৎ যে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার, কীভাবে নিজেকে প্রোটেক্ট করব, কীভাবে অ্যাটাক করব, কীভাবে ওই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসব, এই বিষয়ে এই আর্টের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তৈরি করতে পারি।"

তিনি এই মার্শাল আর্টের ক্লাসে জয়েন করেছেন। তাঁর সহকর্মী, বন্ধু, পরিচিতরা উৎসাহিত হচ্ছেন? অনুরাধা ফাদিকার বলেন, "আমাদের একটা মাইন্ড সেট আছে তো। আমরা সাধারণত দেখি ক্যারাটে, তায়েকোন্দো, কুংফু শিখছে বাচ্চারা। অ্যাডাল্ট বয়সে এরকম খুব কম। এই ইনস্টিটিউটের মধ্যে আমি সেকেন্ড পারসন, এত বেশি বয়সে শিখছি। আমার বয়স এখন ৫৭ বছর।" তিনি বলেন, "প্রথম কথা, এটা এই বয়সে যে শেখা যায়, এটা মানুষ অ্যাকসেপ্ট করতে পারেন না। এজন্য আমি কাউকে এখনও বলিনি। আমি এই ক্লাসে জয়েন করেছি, এটা ধীরে ধীরে অনেকেই জানতে পারছেন। প্রথমে তাঁরা জানবেন, তার পরে মানবেন, তার পরে তাঁরা জয়েন করবেন। এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। ইন্সট্যান্টলি আমি বললে কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে কেউ জয়েন করবেন না। হয়তো আমি জয়েন করেছি শুনে অনেকে হাসছেন। হয়তো প্রতিকূল মন্তব্য করছেন। কিন্তু আমি এটাকে পাত্তা দিই না। আই ডোন্ট কেয়ার ফর দ্যাট।" তাঁর কথায়, "কারণ, আমি যেটা করছি সেটা তো অন্যায় কিছু করছি না। এটা একটা খুব ভালো কাজ করছি। আমি তো সবেমাত্র জয়েন করেছি। আমি যদি এটা করতে পারি, এর পরে আমি যখন একটু শিখে যাব, আমি তখন অন্যদের ইনফ্লুয়েন্স দিতে পারব। কিন্তু, নিজে একটু না শিখে কাউকে ইনফ্লুয়েন্স করা যায় না।"


Conclusion:নিজেকে সুরক্ষা দিতে পারবেন বলে আপনার এমন ইচ্ছা ছিল? অনুরাধা ফাদিকার বলেন, "একটা প‍্যাশন থাকে না, যে এই জিনিসটা আমার ভালো লাগে। কেউ গান ভালোবাসেন, কেউ নাচতে ভালোবাসেন, কেউ আঁকতে ভালোবাসেন, এরকম একটি প‍্যাশন আমার মনের মধ্যে ছিল যে আমি এটা শিখব। কিন্তু, যেভাবেই হোক সেই সুযোগ এবং সময় কোনওটাই হয়নি।" তিনি বলেন, "এটা আমার নিজের ইনস্টিটিউটে হচ্ছে বলে এই সুযোগটা আমি সদ্ব‍্যবহার করতে পারছি। কিন্তু, এটা যদি অন্য জায়গায় হতো, হয়তো সম্ভব হতো না। যেমন আমার বিকাল চারটে পর্যন্ত ওয়ার্কিং আওয়ার্স। এদিকে বিকাল চারটা থেকে ক্লাস শুরু হচ্ছে। এটা একটা বিশাল প্লাস পয়েন্ট যে আমি আমার নিজের ইনস্টিটিউটে কাজ শেষ হলো, সঙ্গে সঙ্গে ক্লাসে জয়েন করতে পারলাম। এটা যদি আমাকে অন্য কোথাও গিয়ে করতে হতো, তখন মাঝখানে কিন্তু একটা গ‍্যাপ থেকেই যেতো। হয়তো আমি চার দিনের মধ্যে একদিন গিয়ে পৌঁছতে পারতাম।" আর, নিজের সুরক্ষার বিষয়টি...? NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এই চিকিৎসক বলেন, "এটা তো একটা বড় পয়েন্ট যে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যায়। তা ছাড়াও এটা একটা মানুষকে পরিপূর্ণ করে। মানসিক দিক থেকে, শারীরিক দিক থেকে, সব দিক থেকে একটা সম্পূর্ণ মানুষ তৈরি করে।"

________






ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.