ETV Bharat / state

13টি তদন্ত কমিশনে খরচ 32 কোটি, পেশ হয়নি রিপোর্ট ; আক্রমণ বামেদের - তৃণমূলের 13 তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট

ক্ষমতায় আসার পর 13টি তদন্ত কমিশন গঠন করে তৃণমূল । তার রিপোর্ট এখনও পেশ হয়নি বিধানসভায় । সেই নিয়েই তৃণমূলের তীব্র সমালোচনা করল CPI(M) ।

Kolkata
নিজস্ব ছবি
author img

By

Published : Aug 14, 2020, 7:36 PM IST

কলকাতা, 14 অগাস্ট : প্রায় 34 বছর রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট । দেশের কোনও রাজ্যে টানা ৩৪ বছর শাসন করেনি কোনও রাজনৈতিক দল । তবে পশ্চিমবঙ্গ ছিল এর ব্যতিক্রম । অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে 1977 সালে গঠিত হয়েছিল যুক্তফ্রন্ট সরকার । ছন্দপতন হয় 2011 সালে । সেই বছর মে মাসে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে ব্যাপক ভোটে পর্যুদস্ত হয় বামফ্রন্ট । পালটে যায় রাজ্যের চেনা সমীকরণ । ক্ষমতায় আসে তৃণমূল । CPI(M)-র 'অপশাসনের' বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেস স্বীকৃতভাবে 13টি কমিশন গঠন করে । এরপর আরও সাতটি কমিশন গঠন করা হয় । যদিও সেইগুলি সূর্যের আলো দেখেনি । নয়বছর অতিক্রান্ত । 13টি কমিশনের রিপোর্ট এখনও পেশ হয়নি বিধানসভায় । সেই নিয়েই তৃণমূলের তীব্র সমালোচনা করে বামফ্রন্ট ।

তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরই 2008 এবং 2011 সালের দুইটি ঘটনায় কমিশন গঠন করে । 2008 সালে ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের আত্মহত্যায় এবং 2011 সালে CPI(M) বিধায়কের আত্মহত্যায় গঠন হয় কমিশন দুটি । খরচ করা হয় যথাক্রমে 78 লাখ 58 হাজার এবং 86 লাখ 77 হাজার টাকা । বিধানসভায় এর প্রতিবেদন শেষ হলেও রিপোর্ট কিন্তু এখনও অধরা । রাজ্যে এখনও পর্যন্ত মোট 13টি কমিশনের প্যানেলের জন্য খরচ হয়েছে 32 কোটি 5 লাখ টাকা । বাকি আরও সাতটি কমিশন এখনও মাঝপথে রয়েছে । সেই কমিশনগুলির খরচের বিষয়ে অর্থদপ্তর কিছু জানায়নি । বাম শাসনের সময় নিম্ন প্রোফাইলের ঘটনা নিয়েও কমিশন তৈরি করেছে বর্তমান শাসকদল । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের নেতৃত্বাধীন 13টি তদন্ত কমিশন জন্য যে টাকা ব্যয় করেছে তা নিয়ে রীতিমত কটাক্ষ করেছে বিরোধী বামফ্রন্ট । বাম নেতারা বলেন, "এতগুলি কমিশন করলেন অথচ বিধানসভায় পেশ করলেন তিনটি প্রতিবেদন ।"

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালে AMRI হাসপাতালে আগুন লেগেছিল । 92 জনের মৃত্যু হয়েছিল । সেই বিষয়েও একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সেই রিপোর্ট এখনও আসেনি । শেষ বিধানসভা অধিবেশনে ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক আলি ইমরান রামজ মুখ্যমন্ত্রীর কাছেই প্রশ্ন করেছিলেন, কমিশনের রিপোর্টগুলি কবে বিধানসভায় পেশ করা হবে । তবে কোনওরকম জবাব পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন তিনি । আলি ইমরান রামজ বলেন, "তৃণমূল সরকার আসার পর মুখ্যমন্ত্রী একগুচ্ছ ফাইল নিয়ে বামফ্রন্টের রাজত্বকালের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিশন গঠন করেন । তিনি জানিয়েছিলেন এক একটা করে ফাইল খুলবেন । আর এক একজন করে মন্ত্রীকে জেলে ভরবেন । এই কথা বলার পর প্রায় 10 বছর হতে চলল । আজ পর্যন্ত প্রাক্তন মন্ত্রিসভার কোনও মন্ত্রীকে জেলে ভরতে পারেননি তিনি । জনগণের কয়েক কোটি টাকা নষ্ট করেছেন কমিশন তৈরি করে । বিধানসভায় ওঁর কাছে হিসাব চাইলে সততার সঙ্গে হিসাব দিতে পারেন না । রাজ্যের বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্য থেকে শাসকদলের মন্ত্রী-সাংসদরা সকলেই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত । তা প্রমাণিত । সারদা, নারদ তার উদাহরণ । পঞ্চায়েতের দুর্নীতির জন্য বহু তৃণমূলের নেতা এখনও জেলে বন্দী ।"

13টি তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট পেশ হয়নি বিধানসভায়, আক্রমণ বামেদের

বাঁকুড়ার CPI(M) বিধায়ক সুজিৎ চক্রবর্তী সেইদিন বিধানসভায় উপস্থিত ছিলেন । তিনিও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন কমিশনগুলির 'স্ট্যাটাস' কী । সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সুজিৎ চক্রবর্তী বলেন, "কালিমালিপ্ত করার জন্য জনগণের কয়েক কোটি টাকা নয়-ছয় করে অলিখিতভাবে প্রায় 21টা কমিশন গঠন করেছিলেন । সেখানে কঙ্কালকাণ্ড থেকে শুরু করে, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, নেতাইসহ কোনও ঘটনাতেই বামফ্রন্টের কোনও নেতা-মন্ত্রীকে তিনি গত 10 বছরে ফাঁসাতে পারেননি । লজ্জা হওয়া উচিত । জনগণের টাকা নিয়ে যেইভাবে কমিশন গঠন করেছেন, তার জন্য জবাবদিহি করতে হবে ।"

1971 সালে কলকাতায় নকশালকর্মী ও কাশীপুর-বরানগর গণহত্যার জন্যও কমিশন গঠন করেছিলেন । 1970 সালে বর্ধমানের কংগ্রেস সমর্থক সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ডেও কমিশন গঠন করা হয়েছিল । 1982 সালে বিজন সেতুতে আনন্দমার্গী হত্যা, 1993 সালের 21 জুলাই পুলিশের গুলিতে 13জন কংগ্রেস সমর্থকের মৃত্যুতেও কমিশন গঠন করা হয় । 1999 সালে মেদিনীপুরে একটি দুর্ঘটনায় 23জন আদিবাসীকে ট্রাক দ্বারা পিষে দেওয়া হয়েছিল‌ । সেই নিয়েও তদন্ত কমিশন গঠন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালের বেশ কিছু আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়েও কমিশন গঠিত হয়েছে । যেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা মূল অভিযুক্ত । এর মধ্যে চারটি কমিশনের প্রতিবেদন সরকারের কাছে এখনও রয়েছে । 2014 সালের সুশান্তকুমার চট্টোপাধ্যায় কমিশন 21 জুলাইয়ের ঘটনার প্রতিবেদন জমা দেয় । 2017 সালে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, তাঁর সরকার সুশান্তকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কমিশনের প্রস্তাবগুলি গ্রহণ করবে । রিপোর্টের কোনও বিষয়ই বিধানসভায় এখনও পর্যন্ত রাখা হয়নি । কাশীপুর-বরানগর গণহত্যার বিষয়টি নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ডি পি সেনগুপ্তকে দিয়ে কমিশন গঠন করা হয়েছিল । তার রিপোর্ট অধরা । আদিবাসীদের মৃত্যুর ঘটনার বিষয়ে এন এন ভট্টাচার্য কমিশনের প্রতিবেদন জমা পড়লেও, বিধানসভায় তার রিপোর্ট পেশ হয়নি । কমিশন অফ ইনকোয়ারি অ্যাক্ট 1952-এ কমিশন রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা দেওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই সরকারকে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয় । বিধানসভা বা আইনসভাতেও সেই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথাও রয়েছে । অমিতাভ লালা কমিশন বিজন সেতু গণহত্যার তদন্ত করে 2012 ও 2013 সালে । এখনও পর্যন্ত সেই কমিশন তদন্তের কাজ শেষ করতে পারেনি । আর্থিক মামলায় গঠিত কমিশন প্রায় পাঁচ লাখ সারদায় আমানতকারীদের 148 কোটি টাকা বিতরণ করেছে । এই হিসাব মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে দিয়েছেন । 18 মাস ধরে এই কমিশনের জন্য খরচ হয়েছে 2 কোটি 6 লাখ টাকা ।

বাম পরিষদীয় দল এই তদন্ত কমিশনের খরচ নিয়ে একটি সমীক্ষা করে । এবং সেই সমীক্ষার পর তারা একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে । সেই রিপোর্ট অনুযায়ী খরচের তালিকা উল্লেখ করা হল ।

  • 2011 সালে CPI(M) বিধায়কের অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য কমিশন গঠন করতে খরচ হয়েছিল 78 লাখ 58 হাজার টাকা ।
  • 2008 সালের ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য কমিশন গঠন করতে খরচ হয়েছিল 86 লাখ 77 হাজার ।
  • 1993 সালের 21 জুলাইয়ের ঘটনার কমিশন গঠন করে খরচ হয়েছিল 1 কোটি 51 লাখ টাকা । 2012 থেকে 2014 সাল পর্যন্ত কমিশন তদন্ত চালিয়েছিল ।
  • 1999 সালের আদিবাসী মৃত্যুর কমিশন গঠনে খরচ হয়েছিল 2 কোটি 61লাখ টাকা ।
  • 1971 সালের কাশীপুর-বরানগর গণহত্যাকাণ্ডে কমিশনে খরচ ছিল 2 কোটি 58 লাখ টাকা ।
  • 2014 সাল থেকে 2017 সাল পর্যন্ত কমিশন তার কাজ চালিয়েছে । এখনও পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি হয়নি ।
  • 2011 সালে AMRI হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে কমিশনে খরচ হয়েছিল 3 কোটি 62 লাখ টাকা ।
  • 2012 সাল থেকে 2018 সাল পর্যন্ত কমিশন তার কাজ শেষ করে সরকারকে রিপোর্ট পেশ করেছে । এখনও প্রকাশ্যে আসেনি সেই রিপোর্ট ।
  • 2013 সালের আর্থিক কেলেঙ্কারি মামলার কমিশন গঠনের জন্য সরকারের খরচ হয়েছিল 2 কোটি 66 লাখ টাকা ।
  • 1982 সালে 16 জন আনন্দমার্গী মিশনারির মৃত্যুর জন্য তৃণমূল সরকারের গঠিত কমিশনের মোট ব্যয় 3 কোটি 20 লাখ টাকা ।
  • বামফ্রন্টের সময়কালে নিউটাউনে জমির প্লট বণ্টন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়ে তৃণমূল সরকার কমিশন গঠন করে । এর জন্য খরচ হয়েছিল 2 কোটি 95 লাখ টাকা ।
  • 2012 সালে নদিয়ার তেহট্ট পুলিশের গুলি চালনায় তদন্ত কমিশন গঠন করে তৃণমূল সরকার । খরচ হয়েছিল 2 কোটি 17 লাখ টাকা ।
  • 2011 সালে মগরাহাট পুলিশের বেআইনি গুলিচালনার বিরুদ্ধে পৃথক একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে তৃণমূল সরকার । খরচ হয় 4 কোটি 2 লাখ টাকা ।
  • বর্ধমানের সাঁইবাড়ি হত্যার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিশনের খরচ হয়েছে 4 কোটি 10লাখ টাকা । 2017 সালে বসিরহাটের হিংসার তদন্তে গঠিত কমিশনে খরচ হয়েছিল 1 কোটি 42 লাখ টাকা ।

কলকাতা, 14 অগাস্ট : প্রায় 34 বছর রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট । দেশের কোনও রাজ্যে টানা ৩৪ বছর শাসন করেনি কোনও রাজনৈতিক দল । তবে পশ্চিমবঙ্গ ছিল এর ব্যতিক্রম । অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে 1977 সালে গঠিত হয়েছিল যুক্তফ্রন্ট সরকার । ছন্দপতন হয় 2011 সালে । সেই বছর মে মাসে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে ব্যাপক ভোটে পর্যুদস্ত হয় বামফ্রন্ট । পালটে যায় রাজ্যের চেনা সমীকরণ । ক্ষমতায় আসে তৃণমূল । CPI(M)-র 'অপশাসনের' বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেস স্বীকৃতভাবে 13টি কমিশন গঠন করে । এরপর আরও সাতটি কমিশন গঠন করা হয় । যদিও সেইগুলি সূর্যের আলো দেখেনি । নয়বছর অতিক্রান্ত । 13টি কমিশনের রিপোর্ট এখনও পেশ হয়নি বিধানসভায় । সেই নিয়েই তৃণমূলের তীব্র সমালোচনা করে বামফ্রন্ট ।

তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরই 2008 এবং 2011 সালের দুইটি ঘটনায় কমিশন গঠন করে । 2008 সালে ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের আত্মহত্যায় এবং 2011 সালে CPI(M) বিধায়কের আত্মহত্যায় গঠন হয় কমিশন দুটি । খরচ করা হয় যথাক্রমে 78 লাখ 58 হাজার এবং 86 লাখ 77 হাজার টাকা । বিধানসভায় এর প্রতিবেদন শেষ হলেও রিপোর্ট কিন্তু এখনও অধরা । রাজ্যে এখনও পর্যন্ত মোট 13টি কমিশনের প্যানেলের জন্য খরচ হয়েছে 32 কোটি 5 লাখ টাকা । বাকি আরও সাতটি কমিশন এখনও মাঝপথে রয়েছে । সেই কমিশনগুলির খরচের বিষয়ে অর্থদপ্তর কিছু জানায়নি । বাম শাসনের সময় নিম্ন প্রোফাইলের ঘটনা নিয়েও কমিশন তৈরি করেছে বর্তমান শাসকদল । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের নেতৃত্বাধীন 13টি তদন্ত কমিশন জন্য যে টাকা ব্যয় করেছে তা নিয়ে রীতিমত কটাক্ষ করেছে বিরোধী বামফ্রন্ট । বাম নেতারা বলেন, "এতগুলি কমিশন করলেন অথচ বিধানসভায় পেশ করলেন তিনটি প্রতিবেদন ।"

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালে AMRI হাসপাতালে আগুন লেগেছিল । 92 জনের মৃত্যু হয়েছিল । সেই বিষয়েও একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সেই রিপোর্ট এখনও আসেনি । শেষ বিধানসভা অধিবেশনে ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক আলি ইমরান রামজ মুখ্যমন্ত্রীর কাছেই প্রশ্ন করেছিলেন, কমিশনের রিপোর্টগুলি কবে বিধানসভায় পেশ করা হবে । তবে কোনওরকম জবাব পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন তিনি । আলি ইমরান রামজ বলেন, "তৃণমূল সরকার আসার পর মুখ্যমন্ত্রী একগুচ্ছ ফাইল নিয়ে বামফ্রন্টের রাজত্বকালের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিশন গঠন করেন । তিনি জানিয়েছিলেন এক একটা করে ফাইল খুলবেন । আর এক একজন করে মন্ত্রীকে জেলে ভরবেন । এই কথা বলার পর প্রায় 10 বছর হতে চলল । আজ পর্যন্ত প্রাক্তন মন্ত্রিসভার কোনও মন্ত্রীকে জেলে ভরতে পারেননি তিনি । জনগণের কয়েক কোটি টাকা নষ্ট করেছেন কমিশন তৈরি করে । বিধানসভায় ওঁর কাছে হিসাব চাইলে সততার সঙ্গে হিসাব দিতে পারেন না । রাজ্যের বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্য থেকে শাসকদলের মন্ত্রী-সাংসদরা সকলেই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত । তা প্রমাণিত । সারদা, নারদ তার উদাহরণ । পঞ্চায়েতের দুর্নীতির জন্য বহু তৃণমূলের নেতা এখনও জেলে বন্দী ।"

13টি তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট পেশ হয়নি বিধানসভায়, আক্রমণ বামেদের

বাঁকুড়ার CPI(M) বিধায়ক সুজিৎ চক্রবর্তী সেইদিন বিধানসভায় উপস্থিত ছিলেন । তিনিও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন কমিশনগুলির 'স্ট্যাটাস' কী । সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সুজিৎ চক্রবর্তী বলেন, "কালিমালিপ্ত করার জন্য জনগণের কয়েক কোটি টাকা নয়-ছয় করে অলিখিতভাবে প্রায় 21টা কমিশন গঠন করেছিলেন । সেখানে কঙ্কালকাণ্ড থেকে শুরু করে, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, নেতাইসহ কোনও ঘটনাতেই বামফ্রন্টের কোনও নেতা-মন্ত্রীকে তিনি গত 10 বছরে ফাঁসাতে পারেননি । লজ্জা হওয়া উচিত । জনগণের টাকা নিয়ে যেইভাবে কমিশন গঠন করেছেন, তার জন্য জবাবদিহি করতে হবে ।"

1971 সালে কলকাতায় নকশালকর্মী ও কাশীপুর-বরানগর গণহত্যার জন্যও কমিশন গঠন করেছিলেন । 1970 সালে বর্ধমানের কংগ্রেস সমর্থক সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ডেও কমিশন গঠন করা হয়েছিল । 1982 সালে বিজন সেতুতে আনন্দমার্গী হত্যা, 1993 সালের 21 জুলাই পুলিশের গুলিতে 13জন কংগ্রেস সমর্থকের মৃত্যুতেও কমিশন গঠন করা হয় । 1999 সালে মেদিনীপুরে একটি দুর্ঘটনায় 23জন আদিবাসীকে ট্রাক দ্বারা পিষে দেওয়া হয়েছিল‌ । সেই নিয়েও তদন্ত কমিশন গঠন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালের বেশ কিছু আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়েও কমিশন গঠিত হয়েছে । যেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা মূল অভিযুক্ত । এর মধ্যে চারটি কমিশনের প্রতিবেদন সরকারের কাছে এখনও রয়েছে । 2014 সালের সুশান্তকুমার চট্টোপাধ্যায় কমিশন 21 জুলাইয়ের ঘটনার প্রতিবেদন জমা দেয় । 2017 সালে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, তাঁর সরকার সুশান্তকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কমিশনের প্রস্তাবগুলি গ্রহণ করবে । রিপোর্টের কোনও বিষয়ই বিধানসভায় এখনও পর্যন্ত রাখা হয়নি । কাশীপুর-বরানগর গণহত্যার বিষয়টি নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ডি পি সেনগুপ্তকে দিয়ে কমিশন গঠন করা হয়েছিল । তার রিপোর্ট অধরা । আদিবাসীদের মৃত্যুর ঘটনার বিষয়ে এন এন ভট্টাচার্য কমিশনের প্রতিবেদন জমা পড়লেও, বিধানসভায় তার রিপোর্ট পেশ হয়নি । কমিশন অফ ইনকোয়ারি অ্যাক্ট 1952-এ কমিশন রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা দেওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই সরকারকে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয় । বিধানসভা বা আইনসভাতেও সেই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথাও রয়েছে । অমিতাভ লালা কমিশন বিজন সেতু গণহত্যার তদন্ত করে 2012 ও 2013 সালে । এখনও পর্যন্ত সেই কমিশন তদন্তের কাজ শেষ করতে পারেনি । আর্থিক মামলায় গঠিত কমিশন প্রায় পাঁচ লাখ সারদায় আমানতকারীদের 148 কোটি টাকা বিতরণ করেছে । এই হিসাব মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে দিয়েছেন । 18 মাস ধরে এই কমিশনের জন্য খরচ হয়েছে 2 কোটি 6 লাখ টাকা ।

বাম পরিষদীয় দল এই তদন্ত কমিশনের খরচ নিয়ে একটি সমীক্ষা করে । এবং সেই সমীক্ষার পর তারা একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে । সেই রিপোর্ট অনুযায়ী খরচের তালিকা উল্লেখ করা হল ।

  • 2011 সালে CPI(M) বিধায়কের অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য কমিশন গঠন করতে খরচ হয়েছিল 78 লাখ 58 হাজার টাকা ।
  • 2008 সালের ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য কমিশন গঠন করতে খরচ হয়েছিল 86 লাখ 77 হাজার ।
  • 1993 সালের 21 জুলাইয়ের ঘটনার কমিশন গঠন করে খরচ হয়েছিল 1 কোটি 51 লাখ টাকা । 2012 থেকে 2014 সাল পর্যন্ত কমিশন তদন্ত চালিয়েছিল ।
  • 1999 সালের আদিবাসী মৃত্যুর কমিশন গঠনে খরচ হয়েছিল 2 কোটি 61লাখ টাকা ।
  • 1971 সালের কাশীপুর-বরানগর গণহত্যাকাণ্ডে কমিশনে খরচ ছিল 2 কোটি 58 লাখ টাকা ।
  • 2014 সাল থেকে 2017 সাল পর্যন্ত কমিশন তার কাজ চালিয়েছে । এখনও পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি হয়নি ।
  • 2011 সালে AMRI হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে কমিশনে খরচ হয়েছিল 3 কোটি 62 লাখ টাকা ।
  • 2012 সাল থেকে 2018 সাল পর্যন্ত কমিশন তার কাজ শেষ করে সরকারকে রিপোর্ট পেশ করেছে । এখনও প্রকাশ্যে আসেনি সেই রিপোর্ট ।
  • 2013 সালের আর্থিক কেলেঙ্কারি মামলার কমিশন গঠনের জন্য সরকারের খরচ হয়েছিল 2 কোটি 66 লাখ টাকা ।
  • 1982 সালে 16 জন আনন্দমার্গী মিশনারির মৃত্যুর জন্য তৃণমূল সরকারের গঠিত কমিশনের মোট ব্যয় 3 কোটি 20 লাখ টাকা ।
  • বামফ্রন্টের সময়কালে নিউটাউনে জমির প্লট বণ্টন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়ে তৃণমূল সরকার কমিশন গঠন করে । এর জন্য খরচ হয়েছিল 2 কোটি 95 লাখ টাকা ।
  • 2012 সালে নদিয়ার তেহট্ট পুলিশের গুলি চালনায় তদন্ত কমিশন গঠন করে তৃণমূল সরকার । খরচ হয়েছিল 2 কোটি 17 লাখ টাকা ।
  • 2011 সালে মগরাহাট পুলিশের বেআইনি গুলিচালনার বিরুদ্ধে পৃথক একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে তৃণমূল সরকার । খরচ হয় 4 কোটি 2 লাখ টাকা ।
  • বর্ধমানের সাঁইবাড়ি হত্যার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিশনের খরচ হয়েছে 4 কোটি 10লাখ টাকা । 2017 সালে বসিরহাটের হিংসার তদন্তে গঠিত কমিশনে খরচ হয়েছিল 1 কোটি 42 লাখ টাকা ।
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.