কলকাতা, 16 অগাস্ট : আজ স্কুল সার্ভিস কমিশন একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে আপার প্রাইমারি স্তরে সহকারি শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত শূন্যপদের সংখ্যা । ওই এক লাইনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আপার প্রাইমারির চূড়ান্ত শূন্যপদের সংখ্যা 14 হাজার 339টি । 2014 সালে যখন আপার প্রাইমারি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছিল তখন পার্শ্বশিক্ষকদের জন্য দশ শতাংশ সংরক্ষণ ধরেই সম্ভাব্য শূন্যপদের সংখ্যা 14 হাজার 88টি বলা হয়েছিল । তারপর চলতি বছর জানুয়ারি মাসে স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান পদে যোগ দিয়ে সৌমিত্র সরকার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানিয়েছিলেন, পার্শ্ব শিক্ষকদের জন্য দশ শতাংশ শূন্যপদ সরিয়ে রেখে মোট 13 হাজার 80টি শূন্যপদ রয়েছে । তার প্রেক্ষিতে আজকের চূড়ান্ত শূন্যপদের সংখ্যা হিসেব করে দেখা যাচ্ছে আপার প্রাইমারিতে 1259টি শূন্যপদ বেড়েছে । তবে, আপার প্রাইমারি প্রার্থীর তুলনায় এত কম শূন্যপদ বাড়াকে হাস্যজনক বলেই মনে করছেন আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীরা । কারও কাছে আবার এটা প্রহসন তো কারও কাছে লজ্জাজনকও ।
আপার প্রাইমারির চাকরিপ্রার্থী অভিজিৎ মুখার্জি এই শূন্যপদ বাড়ার বিষয়ে বলেন, "সাত বছর পরে নিয়োগ হচ্ছে । 2012 সালের পরে 2019 সালে । 2014 সালে নোটিফিকেশন দিয়ে 2015 সালে পরীক্ষা হয় । এই আজকের দিনে অর্থাৎ 16 অগাস্ট পরীক্ষা হয়েছিল । পরীক্ষার পর চার বছর কেটে গেছে । তারপরে মাত্র 1259 টা শূন্যপদ বাড়া আমাদের কাছে হাস্যকর লাগছে । যেখানে এত এত পরীক্ষার্থী আছে, কোর্টের নির্দেশেই হোক বা কমিশনের ভুলে, প্রচুর ক্যান্ডিডেটকে ভেরিফিকেশন করিয়েছে । তারপরে যে ইন্টারভিউ হয়েছে তাতে 24 হাজারের মতো প্রার্থী ডেকেছে বলে শোনা যাচ্ছিল । এরপর কত লম্বা ওয়েটিংয়ে যাব এটা ভেবেই এখন ভয় লাগছে ।"
এবিষয়ে আর এক প্রার্থী অন্বেষা বলেন, "আপনি বললেন 1259 । তার আগে আমি একটা কথা অ্যাড করি? মাত্র এটুকু? চারটে বছর । আজ 16 অগাস্ট চার বছর পূর্ণ হল । চার বছরে স্কুলগুলোতে কেউ অবসর নেননি, মাত্র এই কটা শূন্যপদ যুক্ত হয়েছে, এটা কি বিশ্বাস করা যায় ? এটা সম্ভব কখনও? এতো শেষ পাতে নকুলদানাও জুটল না । তিনটে ফেজ়ে ভেরিফিকেশন হয়েছে, ইন্টারভিউ হয়েছে । পরে আরও কয়েকটা ধাপে কোর্ট কেসের পিটিশনারদের ইন্টারভিউও হয়েছে । তাদের আবার ইন্টারভিউয়ের ডেট দেওয়া হয়েছে । এই যে এত প্রার্থী সেখানে মাত্র এই কটা সিট বাড়ানো হল?"
এই কয়েকটি সিট বাড়িয়ে তাঁদের সঙ্গে প্রহসন করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন অপূর্ব মণ্ডল নামে এক প্রার্থী । তিনি বলেন, "শূন্যপদ যেটা বৃদ্ধি পেয়েছে, বৃদ্ধি পেয়েছে মানে কী, সমুদ্রের মধ্যে এক বালতি জল ঢেলে দিয়েছে সেটা অত্যন্ত হতাশাজনক এবং লজ্জাজনক । প্রচণ্ড লজ্জাজনক ব্যাপার । আমরা চেয়েছিলাম সঠিক রেশিও মানা হোক । কমিশন গল্প দিচ্ছে লাস্ট কাট অফ, লাস্ট কাট অফ । লাস্ট কাট অফ কতদূর থাকতে পারে? তার একটা সীমা আছে তো । সবকিছু গণিতের অঙ্কে মেলাতে গেলে হয় না । বাংলা ফিমেলে 91টা শূন্যপদের জন্য 746 জনকে ইন্টারভিউতে ডাকা হয়েছে । এটা কি হতে পারে? আমরা কোন রাজ্যে বাস করছি? এটা খুব লজ্জার ব্যাপার । রীতিমতো প্রহসন হল আমাদের সঙ্গে ।"
এবিষয়ে সব আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীরই মত প্রায় এক । প্রত্যেকেই চিন্তিত ওয়েটিং লিস্ট কত লম্বা হবে । এই শূন্যপদ আরও বাড়তে পারত বলে দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা । অতনু ঘোষ নামের এক আপার প্রাইমারি প্রার্থী বলেন, "এটাতে আমরা সত্যিই আশ্চর্য । কারণ, আমরা আরও অনেকটাই আশা করেছিলাম পাঁচ বছর ধরে । যেহেতু, অনেক শিক্ষক অবসর নিয়েছেন । অনেক নতুন আপার প্রাইমারি স্কুল তৈরি হয়েছে । শূন্যপদের সংখ্যা নিয়ে আমি প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত । আমার মতে, কম সে কম এটা 25 হাজার না হলেও 22-23 হাজার হওয়ার কথা ।"