ঝাড়গ্রাম, 16 নভেম্বর: "বাংলার শ্রমিক যাঁরা বাইরে কাজ করতে যাচ্ছেন, তাঁদেরই বেশি মৃত্যু হচ্ছে ! গত তিন-চারমাসে দেখুন ৷ অন্য়ান্য রাজ্য়ের শ্রমিকরাও মারা যাচ্ছেন হয়তো ৷ কিন্তু, বাংলার শ্রমিকরাই বেশি মারা যাচ্ছেন ৷ মণিপুর, মিজোরাম, কাশ্মীরে দেখুন ! আমি জানি না কী হচ্ছে !" মিজোরামের (Mizoram) পাথর খাদান ধসের (Stone Mine Collapse) ঘটনায় বাংলার পাঁচ পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুর পর (Migrant Labour Death) এই মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ৷ তাহলে কি ভিনরাজ্য়ে বাংলার শ্রমিকদের বারবার মৃত্যুর নেপথ্যে কোনও বিশেষ কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন তিনি ? উঠছে প্রশ্ন ৷ একইসঙ্গে, এই ঘটনায় মৃত পাঁচ শ্রমিকের পরিবারের পাশে থাকারও বার্তা দিয়েছেন মমতা ৷ মৃতদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ এবং প্রত্যেকটি পরিবারের একজন করে সদস্যকে চাকরিরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি ৷
প্রসঙ্গত, একথা ঠিক যে গত কয়েক মাসে ভারতের নানা প্রান্ত থেকে বাংলার শ্রমিকদের মৃত্যুর খবর এসেছে ৷ এমনকী, সম্প্রতি গুজরাতের সেতু বিপর্যয়ের ঘটনাতেও বাংলার এক পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয় ৷ এ নিয়ে রাজ্য সরকারের উপর ক্রমশ চাপ বাড়াচ্ছে বিরোধীরা ৷ তাদের বক্তব্য, কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকাতেই এ রাজ্য থেকে দেশের অন্য়ান্য প্রান্তে কাজ করতে যেতে হচ্ছে বাংলার ছেলেমেয়েদের ৷ রাজ্য সরকার উদ্যোগী হলে এই পরিস্থিতি তৈরি হত না বলেই মনে করে বাম, বিজেপি, কংগ্রেসের মতো দল ৷
আরও পড়ুন: স্নাতক হয়েও পরিযায়ী শ্রমিক ! মিজোরামের পাথর খাদান ধসে মৃত সুব্রত
এই প্রেক্ষাপটে মমতার এদিনের মন্তব্য নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ ৷ অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকরাই দেশের অন্য়ান্য প্রান্তে বেশি মারা যাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তাহলে কি এর পিছনে কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মনে করছেন তিনি ? নাকি বিরোধীদের কর্মসংস্থান সংক্রান্ত চাপের মোকাবিলা করতেই এমন মন্তব্য করতে হয়েছে মমতাকে ? প্রসঙ্গত, সোমবারের খনি দুর্ঘটনায় মৃতদের তালিকায় রয়েছেন বাংলার পাঁচজন ৷ এঁদের মধ্যে অন্যতম সন্দেশখালির বাসিন্দা, 24 বছরের সুব্রত রপতান ৷ সুব্রত স্নাতক ৷ তারপরও রাজ্যে কোনও চাকরি জোটেনি তাঁর ! পাড়ি দিতে হয়েছে ভিনরাজ্যে ৷ তাও আবার পাথর খাদানে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ নিয়ে ! একই ঘটনায় বাংলার আরও যে চারজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে, তাঁরা সকলেই নদিয়ার বাসিন্দা ৷ এঁরা হলেন রাকেশ বিশ্বাস, মিন্টু মণ্ডল, বুদ্ধদেব মণ্ডল এবং মদন দাস ৷ প্রথম তিন যুবক নদিয়ার তেহট্টের কালীতলা পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন ৷ আর মদন দাসের বাড়ি চাপড়ার পিবরাইগাছি গ্রামে।
এদিন মমতা জানিয়েছেন, তাঁর সরকার মৃতদের পরিবারের পাশে রয়েছে ৷ এই পরিবারগুলিকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং প্রত্যেক পরিবারের একজন করে সদস্যকে চাকরিও দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ উল্লেখ্য, এদিনই মৃত শ্রমিকদের কফিনবন্দি দেহ বাংলায় ফেরার কথা ৷ তাতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্য প্রশাসনের তরফে দমদম বিমানবন্দরে সবরকম বন্দোবস্ত করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মমতা ৷ উল্লেখ্য, এই ঘটনায় মঙ্গলবার রাতেই শোকপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ টুইটে মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি ৷