গোপীবল্লভপুর, 17 জানুয়ারি : জয়ে বা পরাজয়ে তফাত সামান্য । পরাজয়েও আসে মুক্তি । তবে হেরে গেলে ঝুঁটি একটু কেটে উড়িয়ে দেওয়া হয় । আর যে জয়ী হয় তারও জোটে মুক্তির স্বাদ । বিজয়ীকে ঘরে নিয়ে গিয়ে বেশ কিছু দিন যত্ন করে খাইয়ে জঙ্গলে ছাড়া হয় । বনের পাখি যায় বনে । আর মানুষের খাঁচায় আটকে থাকতে হয় না । খাদ্যের লড়াই শুধু মানুষে মানুষে হয় না । পাখির মধ্যেও লড়াই হয় । বুলবুল পাখির লড়াই । প্রায় চারশ বছরের গোপীবল্লভপুরে সামিয়ানা খাটিয়ে দুটো বুলবুল পাখির লড়াই চলে । আর এই লড়াই দেখতে মানুষ আসে ঝাড়খণ্ড , ওড়িশা থেকে ।
ওড়িশার রাজ্য সীমান্তে ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর । দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য মেনে এখানে মকর সংক্রান্তির দিনে বুলবুল পাখির লড়াই হয় । প্রতি বছর মকর সংক্রান্তির দিনে রীতিমতো সামিয়ানা খাটিয়ে বুলবুল পাখির লড়াই বসে এখানে । এই লড়াই মূলত দুই পাড়ার সম্মান বা ইজ্জতের লড়াই । এখানে আছে দুটি পাড়া । বাজার সাই ও দক্ষিণ সাই । যে পাড়ার বুলবুল বেশি জেতে সেই এলাকার আরও একটি নিয়ম বা ঐতিহ্য আছে এই খেলায় । যে পাখি হেরে যায় তার ঝুঁটি একটু কেটে উড়িয়ে দেওয়া হয় । আর যে পাখি জেতে তাকে ঘরে নিয়ে গিয়ে কিছু দিন রাখা হয় । খাইয়ে যত্ন করে তারপর জঙ্গলে ছাড়া হয় । জঙ্গলমহলে বিভিন্ন এলাকায় মোরগ লড়াইয়ের মতো কিন্তু গোপীবল্লভপুরে বুলবুল পাখির লড়াইয়ে কোনও রক্তপাত হয় না l পরম্পরাও প্রায় চারশ বছরের বেশি ।
![bulbul bird's fight at gopiballavpur](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/5739038_wb_bulbul.jpg)
ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে গোপীবল্লভপুরের মানুষ মকর সংক্রান্তির দিনে বুলবুল পাখির লড়াই নিয়ে মেতে ওঠেন । বিজয়ীকে ট্রফি দেওয়া হয় । খেলার নিয়ম, সকাল থেকে না খাইয়ে রাখতে হবে বুলবুলকে । খেলার জায়গাতে একটা মঞ্চে রাখা হয় কলার টুকরো । সেই এক টুকরো কলা খেতে হবে তাও আবার লড়াই করে নিতে হবে । আর এই খাদ্যের অধিকারের জন্যই যুদ্ধ । সম্মুখ সমরে দুটি বুলবুল পাখি । এদের ঘিরে রয়েছে হাজার হাজার মানুষ । দুটি পাখির লড়াই দেখতে ঝাড়খণ্ড ,ওড়িশা থেকে আসেন বহু মানুষ ।
![bulbul bird's fight at gopiballavpur](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/5739038_wb_fight.jpg)
মকর সংক্রান্তির দিন গোবিন্দ জিউর মন্দিরের সামনে বসে বুলবুলের লড়াই । দু'মাস ধরে চলে এই বুলবুল লড়াইয়ের প্রস্তুতি । পাখি ধরা থেকে শুরু করে পাখিকে বেঁধে রেখে লড়াইয়ের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া দু'মাস ধরে চলতে থাকে । বিজয়ী পাখির মালিককে ট্রফিসহ আরও আনুসাঙ্গিক উপকরণ দিয়ে পুরস্কৃত করা হয় । সুবর্ণরেখা নদীর তীরে অবস্থিত গোপীবল্লভপুরকে বলা হয় গুপ্ত বৃন্দাবন । এখানে গোবিন্দ জিউর মন্দিরের সামনে বুলবুলির লড়াই আয়োজন করা হয় । লড়াইয়ের পর পাখিগুলিকে আবার ছেড়ে দেওয়া হয় । গোপীবল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সত্যরঞ্জন বারিক বলেন, "এটা আমাদের এখানে কয়েকশো বছরের পুরাতন সংস্কৃতি । মকরের দিন বুলবুলের লড়াই দেখতে ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড থেকেও অসংখ্য মানুষ এখানে আসেন ।"
বুলবুলের লড়াই হয় । তবে মানুষে মানুষে সম্প্রীতি নষ্ট হয় না ।