ঝাড়গ্রাম, 13 এপ্রিল : আদিবাসী সম্প্রদায়ের অন্যতম উৎসব হল ছাতু সংক্রান্তি বা ছাতু পরব ৷ ছাতু উৎসবের ঐতিহ্য নেগাচার আদিবাসীরা আজও পালন করেন ৷ মূলত গরমের সমস্যা ও পোকামাকড় থেকে মুক্তি পেতেই এই উৎসব পালন করেন আদিবাসীরা ৷ দীর্ঘ লকডাউনে চলায় আজ বাড়ি থেকেই সেই উৎসব পালন করল ঝাড়গ্রামের আদিবাসীরা ৷
জঙ্গলমহল তথা সমগ্র ছোটোনাগপুরের আদিবাসী সম্প্রদায়ের আজ ছাতু পূজা বা ছাতু সংক্রান্তি ৷ আদিবাসীরা মূলত প্রকৃতির পূজারি ৷ কুড়মি তথা সমগ্র আদিবাসী সম্প্রদায়ের অন্যতম উৎসব হল এই ছাতু সংক্রান্তি বা ছাতু পরব ৷ এই উৎসবে নিজ নিজ বাড়িতে বা দেশওয়ালিভাবে ছাতু, গুড়, আম, ধূপ, দীপ, শঙ্খধ্বনি সহযোগে কাঁচা শাল পাতায় গ্রাম দেবতাকে নিবেদন করার পর স্বর্গগত পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে ছাতু গুড় আমের তৈরি নৈবেদ্য নিবেদন করা হয় ৷ তারপর ওই প্রসাদ নিজেরা গ্রহণ করেন আদিবাসীরা ৷ আজ থেকে আম ও ছাতু খাওয়া শুরু করবেন তাঁরা ৷ তাঁদের বিশ্বাস এতে স্বর্গীয় পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদ পাওয়া যায় ৷ পরের দিন সকালে চাষের জমিসহ বিভিন্ন স্থানে শুকনো খড় জ্বালিয়ে ধোঁয়া দেন তারা ৷ তারপর গবাদি পশুকে স্নান করানো ৷ এরপর হয় আঁশ পইড়ান ৷ দলবেঁধে নদী-পুকুরে মাছ ধরে, দুপুরে আম ও মাছের ঝোল সহযোগে মধ্যাহ্ণ ভোজ করা হয় ৷
এটি প্রত্যেকটি পরিবারেই পালন করা হয় । কুড়মি সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি বিপ্লব মাহাত বলেন, " আমরা প্রকৃতির পূজারি ৷ মানুষ এই ছাতু উৎসবের ঐতিহ্য আজও পালন করেন পূর্বপুরুষের বিশ্বাস থেকেই ৷ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এরও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে ৷ গরমের সময় মানুষ বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন ৷ গরমে গবাদি পশু স্নান করালে তাদেরও শরীর ঠিক থাকে ৷ আর ধোঁয়া দেওয়ার ফলে পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে বাঁচা যায় ৷ আর এইসময় আমে-মাছের ঝোল বা আম-ছাতু-গুড় খেলে পিত্ত, জন্ডিস, মাথা ঘোরা প্রভৃতি থেকে উপশম পাওয়া যায় ৷ আর ছাতু পেট ঠান্ডা রাখে ফলে ডায়ারিয়ার মতো রোগ থেকেও মানুষ রক্ষা পায় ৷ "