জলপাইগুড়ি, 7 জুন: তীব্র তাপপ্রবাহে নাজেহাল অবস্থা রাজ্যবাসীর ৷ আর্দ্রতার জেরে ঘামে ভিজছে জামাকাপড় ৷ স্বাভাবিকভাবেই রাস্তায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশদেরও নাজেহাল অবস্থা ৷ এই অবস্থায় তাদের কষ্ট একটু লাঘব করতে জলপাইগুড়িতে ট্রাফিক পুলিশদের জন্য বাড়ি থেকে লেবুর সরবৎ করে এনে খাওয়ালেন এক গৃহবধূ ৷
স্বামী পেশায় টোটো চালক ৷ তাই গরমে রাস্তায় সারাদিন যে কী কষ্ট হয়, তা তিনি খুব ভালোভাবে বোঝেন ৷ তীব্র গরমে রোদে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ট্রাফিক পুলিশদের । সেবাকে পরম ধর্ম পাথেয় করে তাই স্বামীকে সঙ্গে নিয়েই ট্রাফিক পুলিশের বুথে বুথে ঘুরে কর্মীদের সরবৎ খাওয়ালেন গৃহবধূ সুমি দেবনাথ । স্বামী স্ত্রীর ট্রাফিক পুলিশের প্রতি এমন মানবিক রূপ দেখে আপ্লুত পুলিশ সুপারও ।
পাতকাটা কলোনীর বাসিন্দা টোটো চালক মানিক দেবনাথ ৷ রোজ সকাল থেকে জলপাইগুড়ি শহরে টোটো চালান তিনি । পাতকাটা থেকে গোশালামোড় হয়ে জলপাইগুড়ি শহরে টোটো করে যাত্রী নিয়ে চলাচল করেন মানিক । তাঁর চলার পথে এই রোদে প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন তিনি ট্রাফিক পুলিশদের ৷ তাদের কর্মব্যস্ততা দেখে প্রায়ই তাঁর মনে নাড়া দিত । বাড়িতে গিয়ে স্ত্রী সুমি দেবনাথকে রোদে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক পুলিশের কষ্টের কথা জানান । এরপরেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন ট্রাফিক পোস্টে কর্মরত পুলিশ কর্মীদের সরবৎ বানিয়ে খাওয়াবেন ।
আরও পড়ুন: উত্তর থেকে দক্ষিণ তাপপ্রবাহের সতর্কতা, ভ্যাপসা গরম চলবে পাঁচ দিন
সুমি দেবনাথ বলেন, "আমি একজন গৃহবধূ । আমার স্বামী একজন টোটো চালক । সারাদিন রোদে তিনি টোটো চালান । তাঁর কষ্টটা আমি বুঝি । ফলে রাস্তার কড়া রোদে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক পুলিশদের কতটা কষ্ট হয় তাও আমি বুঝতে পারি । তাই আমি আজ স্বামীকে সঙ্গে করে নিয়ে লেবুর সরবৎ বানিয়ে তাদের খাওয়াচ্ছি । গোশালামোড়, দিনবাজার, বেগুনটারি-সহ বিভিন্ন ট্রাফিক পোস্টে গিয়ে পুলিশ কর্মীদের আমি জল খাওয়ালাম ।"
মানিক দেবনাথ জানান, সকালে টোটো চালিয়ে দুপুরে স্ত্রীকে নিয়ে সরবৎ বানিয়ে তা বিতরণ করছেন । ট্রাফিক পুলিশে যারা কাজ করেন তাদের মাথার ওপরে কোন শেড নেই । তীব্র গরমে তারা ডিউটি করছেন । মাথার উপরে রোদ আবার পায়ের নীচে পিচের তাপ । তারা যে কী কষ্ট করেন, তা তিনি জানেন । জল তেষ্টা তাদেরও পায় । তাই ট্রাফিক পুলিশদের তাই সরবৎ খাওয়াচ্ছেন মানিক ও তাঁর স্ত্রী ।
আরও পড়ুন: গরমে সুস্থ থাকতে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন
সরবৎ খেয়ে ট্রাফিক পুলিশ বীরেন মোহন্ত বলেন, "আমাদের জন্য এই দম্পতি যে সরবৎ করে এনেছেন এটাই অনেক । উনি আমাদের কথা ভেবেছেন এটাতেই আমরা খুশি ।" জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার খান্ডালবাহালে উমেশ গণপত বলেন, "মানিক ও সুমি দেবনাথ ট্রাফিক পুলিশের কষ্টটা যে বুঝতে পেরেছেন তাতে ধন্যবাদ না জানিয়ে পারা যায় না । তারা বাড়ি থেকে সরবৎ করে নিয়ে এসে খাওয়ালেন এটাই আমাদের বিরাট প্রাপ্তি ।"