জলপাইগুড়ি, 18 এপ্রিল: জলপাইগুড়ির দুই সমাজসেবী স্বামী-স্ত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর মেয়েকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে ৷ এমনকী জলপাইগুড়ি পৌরসভায় চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখানোর অভিযোগ উঠল সুইসাইড নোটে নাম থাকা ভাইস চেয়ারম্যান সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে । ঘটনা ধামাচাপা দিতে দেওয়া হচ্ছে চাকরির প্রলোভনও ৷ এমনটাই অভিযোগ করেছেন মৃত অপর্ণা ও সুবোধ ভট্টাচার্যের মেয়ে তানিয়া ।
তিনি জানান, যেখানে মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশন ছাড়া চাকরি হয় না । সেখানে মূল অভিযুক্ত তাঁকে চাকরির প্রলোভন দিচ্ছেন । এদিকে চারদিক থেকে চাপ আসার কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তানিয়া । যে কারণে তিনি জেলা পুলিশ সুপারের কাছেও লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন । যদিও তাঁর বাড়িতে নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে । তানিয়া বলেন, "আমাকে বিজেপি মদত দিচ্ছে বলে রটাচ্ছেন সৈকত চট্টোপাধ্যায় । তাঁর সৎ সাহস থাকলে রাজনীতি না করে আমার প্রশ্নের উত্তর দিক ।" অন্যদিকে সুইসাইড নোটে নাম থাকা আর এক অভিযুক্ত জলপাইগুড়ি পৌরসভার কাউন্সিলর সন্দীপ ঘোষ পলাতক । তিনি ঘটনার পর থেকে নাকি বাড়িতেই নেই । এমনই দাবি তাঁর বাবার । সন্দীপের বাবা জানান, ছেলে কলকাতায় গিয়েছেন । তাঁর সঙ্গে যোগাযোগও হচ্ছে না ।
চলতি মাসের 1 তারিখ জলপাইগুড়ি শহরের পাণ্ডাপাড়া মেইন রোডের বাসিন্দা আইনজীবী সুবোধ এবং অপর্ণা ভট্টাচার্য বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন । ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ায় । একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার হয় । সুইসাইড নোটের বয়ান অনুযায়ী, মৃত্যুর পিছনে পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সৈকত চট্টোপাধ্যায়, কাউন্সিলর সন্দীপ ঘোষ, মনোময় সরকার ও সোনালি বিশ্বাসের হাত রয়েছে ৷ তাদেরই দায়ী করা হয়েছে । এরপর এই চারজনের নামে কোতয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সুবোধ ভট্টাচার্যের দিদি তথা বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায় । তারপর থেকেই দম্পতির মেয়ে তানিয়া ভট্টাচার্যের উপরে চাপ আসছে বলে অভিযোগ করেন তিনি । তানিয়া জানান, এতদিন সৈকত চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন মৃতের মেয়ে কেন অভিযোগ করছেন না । এরপরেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে অভিযুক্তদের নাম দিয়ে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেন তানিয়া ।
তানিয়া বলেন, "এই ঘটনাকে এখন রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্টা করছেন সৈকত চট্টোপাধ্যায় । বলা হচ্ছে, বিজেপি এসব করাচ্ছে । আমার পিসি আমার অভিভাবক ৷ পিসি অভিযোগ করতে পারবে না । এই মৃত্যু কী রাজনৈতিক ? সেটা আমি মনে করি না । বিভিন্নভাবে বিরক্ত করার পাশাপাশি আমাকে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে প্রলোভন দেখিয়ে যাচ্ছেন প্রধান অভিযুক্ত সৈকত চট্টোপাধ্যায় ।"
এদিকে এই বিষয়ে অভিযুক্ত তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা যুব সভাপতি তথা পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সৈকত চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, গত 6-7 বছরে তানিয়া ভট্টাচার্যকে তিনি দেখেননি । তানিয়া হাকিমের কাছে গিয়ে গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন । তারপরে বিজেপি নেতারা তাঁকে কোথায় নিয়ে গিয়ে কী করছেন জানা নেই । পৌরসভায় চাকরি দিতে গেলে নিয়মকানুন আছে সেটা ছাড়া হয় না বলেও তিনি জানান ।
আরও পড়ুন: দম্পতির অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় নয়া মোড়, মৃতার মেয়েকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ