জলপাইগুড়ি, 26 মে: লকডাউনে আটকে গিয়েছে চাকা ৷ রাস্তা জুড়ে নেই আর ট্রাকের দাপট ৷ ফলে বিপাকে পড়েছে উত্তরবঙ্গের 20 হাজার ট্রাক মালিক ৷ লকডাউনের ফলে আচমকাই রুজি-রুটি খুইয়ে লক্ষাধিক মানুষ অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে ৷
লকডাউনের জেরে বন্ধ হয়েছে নদী থেকে বালি-পাথর উত্তোলন ৷ উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার জেলার বিভিন্ন নদী থেকে বালি,পাথর উত্তোলনের উপরই নির্ভর করে কয়েক লক্ষ মানুষের রুটিরুজি । লকডাউনের জেরে সবকিছুই বন্ধ থাকায় একদিকে যেমন ট্রাক মালিকরা ট্রাক চালাতে পারছেন না ৷ তেমনই ড্রাইভার, খালাসি ও ট্রাক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন শ্রমিকরাও সমস্যায় পরেছেন । একমাস পরেই বর্ষাকাল ৷ ফের নদীতে বালি, পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাবে ৷ ফলে আরও সমস্যায় পড়বেন ট্রাকমালিক সহ শ্রমিক এবং বালি-পাথর উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত মানুষেরা ।
উত্তরবঙ্গের 90 শতাংশ ট্রাকই ব্যবহার হয় বালি-পাথর উত্তোলনে ৷ আন্তঃরাজ্য ট্রাক চলাচলে তাই ছাড় দিলেও অধিকাংশ ট্রাক মালিক-চালকদেরই বাড়িতে বসে থাকতে হচ্ছে ৷ জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ি জেলাতেই পাঁচ হাজার ট্রাক চলে । আলিপুরদুয়ারেও পাঁচ হাজার ট্রাক চলাচল করে । উত্তরবঙ্গে প্রায় 20 হাজার ট্রাক চলাচল করে । ট্রাকের কর্মীসহ প্রায় 80-90 হাজার শ্রমিক সরাসরি যুক্ত । এছাড়া নদীতে বালি, পাথর উত্তোলনের সঙ্গে লক্ষাধিক মানুষ সযুক্ত রয়েছেন । আসন্ন দিনগুলিতে কীভাবে সংসার চলবে, তা নিয়ে ধন্দে রয়েছে লক্ষাধিক পরিবার ৷ বাধ্য হয়ে গাড়ির ট্যাক্স মকুব সহ একাধিক আর্থিক প্যাকেজের দাবি করছেন উত্তরবঙ্গের ট্রাক মালিকরা ।
ফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের উত্তরবঙ্গের সহ সভাপতি সঞ্জীব ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা লকডাউনের ফলে খুব সমস্যায় পরেছি । আমরা ট্রাকের মালিক ও শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে বসে আছি । আমরা জেলাশাসকের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীকে একটা চিঠি দিয়েছি যাতে জলপাইগুড়ি জেলা তথা উত্তরবঙ্গ জুড়েই ট্রাক চালানোর অনুমতি মেলে । বালি, পাথর উত্তোলনের সঙ্গে যারা যুক্ত আছি, তারা খুব বিপদের মধ্যে রয়েছি । জলপাইগুড়ির পাঁচ হাজার ট্রাক মালিক সহ কয়েক হাজার চালক, খালাসি, শ্রমিকরা কার্যত বেকার হয়ে পড়েছি । আমরা সরকারের কাছে ট্যাক্স, পারমিটে যাতে ছাড় দেওয়া হয়, তার দাবি জানিয়েছি । যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে ট্রাকগুলি চলেনি, তাই এখন চালাতে গেলেই সমস্যা হবে ইঞ্জিন বসে যাওয়ার কারণে ৷ উত্তরবঙ্গের কয়েক লক্ষ মানুষ এই কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে । আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করেছি যাতে দ্রুত ট্রাক চালানোর ব্যবস্থা করা হয় ৷ কারণ ট্রাকে কেবল একজন চালক ও একজন খালাসি থাকেন । তাঁরাও অনেকটাই দূরত্বে বসেন, ফলে সংক্রমণ হবে না বলেই আশা করা যায় ৷’’
জলপাইগুড়ির গোশালা মোড়ের ট্রাক সিন্ডিকেটের সদস্য ট্রাকমালিক শ্যাম সুন্দর রায় জানান, ‘‘ আমাদের এখানে 400টি গাড়ি রয়েছে । সব গাড়িই প্রায় সব বন্ধ ৷ কেবল রেশনে চাল নেওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে । কিন্তু এতে আমাদের সমস্যার সমাধান হচ্ছে না । গাড়ির কর, বিমা দিতে পারিনি । এরপর কাগজগুলি ফেল হয়ে যাবে । সরকার যদি ছাড় না দেয়, আমরা মাঠে মারা যাব । আগামী মাস থেকেই বর্ষাকাল শুরু হয়ে যাবে ৷ নদী থেকে আর বালি পাথর তোলা যাবে না । তখন আমরা আরও বিপদে পড়ে যাব । বালি, পাথর পরিবহনের ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা হবার কথা নয় । আমাদের এখানে প্রচুর শ্রমিক আছেন, যাঁরা খেতে পাচ্ছেন না । বালি পাথর তোলার অনুমতি দিলে আমরা অন্তত খেয়ে বাঁচতে পারব ।’’
ট্রাক চালক সুরিন্দার সিং বলেন,‘‘ লকডাউনের জেরে আমরা মারাত্মক সমস্যায় পড়েছি ৷ দীর্ঘদিন ধরে কোনও কাজ নেই । খুব তাড়াতাড়ি আমাদের গাড়ি না চললে আমরা না খেতে পেয়ে মরে যাব । বাড়িতে খাবার নিয়ে যাবার মতো টাকাও জোগাড় করতে পারছি না লকডাউনে । সরকার যদি বালি পাথর তোলার অনুমতি দেয় তাহলে আমরা বাঁচব ।’’