জলপাইগুড়ি, 24 অগস্ট: সারা বিশ্ব যখন টিভির পর্দায় চন্দ্রযান-3-এর অবতরণ দেখছে, ঠিক সেই সময়ে ইসরোর বিজ্ঞানীদের সঙ্গে গোলাপি শার্ট পরা ছেলেটিকে দেখে জলপাইগুড়ি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যাপকরা চমকে উঠেছিলেন । "আরে, আমাদের কৌশিক..." বলে চিৎকার করে উঠেছিলেন অধ্যাপক সৌপায়ন মিত্র । কৌশিক অর্থাৎ কৌশিক নাগ । জলপাইগুড়ি শহরের তরুণদলের বাসিন্দা । জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রাক্তন ছাত্র কৌশিক নাগ । তিনি এখন ইসরোর একজন বিজ্ঞানী । শুধু তাই নয়, চাঁদের মাটি ছুঁয়ে ভারতের ইতিহাস সৃষ্টি করার সাফল্যের অন্যতম অংশীদার ৷ চন্দ্রযান 3-এর গবেষণায় কৌশিকও রয়েছেন ।
বিজ্ঞানী কৌশিক নাগের কথায়, "আজকের দিনটা আমাদের কাছে একটা বিরাট গর্বের দিন । এতদিন কাজের পর আজ ফাইনালি সফলতা পাওয়া গিয়েছে । সমগ্র বিশ্ব ভারতের দিকে তাকিয়ে ছিল । এটাই আমাদের বড় প্রাপ্তি । দেশের হয়ে আরও বড় কাজ করতে চাই আমরা ।"
তিনি আরও জানান যে, তিনি জলপাইগুড়ি হোলি চাইল্ড স্কুলের ছাত্র । 2009 সালে মাধ্যমিক পাশ করেন । 2011 সালে দ্বাদশ শ্রেণি, তারপর জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন । 2015 সালে পাস আউট । এরপর 2016 সালে টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস কলকাতায় কাজে যোগ দেন তিনি । তারপর দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনে কাজ করার পর ইসরোতে 2018 সালে যোগ দেন । তারপর থেকে ইসরোতেই আছেন । জলপাইগুড়িবাসী হিসেবে তিনি গর্ববোধ করছেন বলে জানিয়েছেন কৌশিক ।
বিজ্ঞানী কৌশিক নাগের মা সোনালি নাগ বলেন, "আমরা ভীষণ খুশি । বিশাল একটা সাফল্য । চাঁদে আমরা পৌঁছে গেলাম । সারা বিশ্ব দেখছে চাঁদে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা বিক্রমকে পাঠালেন । সেই বিজ্ঞানীদের মধ্যে আমার ছেলেও একজন । এটাই বড় প্রাপ্তি । 2018 সালের জুলাই মাস থেকে ও এই প্রজেক্টের সঙ্গে জড়িত আছে । চার বছর ধরে ওখানেই কাজ করছে । 1992 সালের 24 সেপ্টেম্বর কৌশিকের জন্ম । টিসিএস-এ বেশ কিছুদিন কাজ করার পর ও দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনে কাজ করত । আমিও বেঙ্গালুরুতেই ছেলের সঙ্গে থাকতাম । কয়েকমাস হল এসেছি ।"
শুধু কৌশিক নন ৷ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের নয় জন প্রাক্তন ছাত্র এই প্রজেক্টে ছিলেন । তাঁদের কৃতিত্বে গর্বিত জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ অমিতাভ রায়ও ৷ তিনি বলেন, "আমাদের গর্বের দিন । আমার সঙ্গে কৌশিকের কথা হয়েছে । কৌশিকের মেধা বরাবরই ছিল । আমাদের কলেজের ছাত্রেরা এত বড় সাফল্যের পেছনে আছে এটাই বড় বিষয় ।"
ইসরোর প্রকল্পে এই কলেজের যাঁরা ছিলেন তাঁরা হলেন, মেকানিকাল ডিপার্টমেন্টের 1997 সালের পাস আউট অমরনাথ নন্দী, 2004 সালের পাস আউট সুজয় দোলুই, 2015 সালের পাস আউট কম্পিউটার সায়েন্সের কৌশিক নাগ, 2000 সালে পাস আউট সৌমিক সরখেল, 2010 সালে পাস আউট নিরঞ্জন কুমার, 2010 সালে পাস আউট মুকুন্দকুমার ঠাকুর, 2011 সালে পাস আউট বিকাশ কুমার শর্মা, 2004 সালে পাস আউট বিশ্বজ্যোতি দত্ত মজুমদার ও চিন্ময় মণ্ডল ৷
আরও পড়ুন: চন্দ্রযান 3 অবতরণে ইসরোর ইলেকট্রিক টিমে বীরভূমের বিজয়, উচ্ছ্বসিত গ্রাম