কলকাতা, 17 ফেব্রুয়ারি: ব্যাঙ্কের আর্থিক দূর্নীতি নিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য সরকারি অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। সিবিআই নির্দিষ্ট প্রমাণ পেলেই এফআইআর দায়ের করতে পারবে। এফআইআরের আগে সিবিআইকে অভিযোগ সম্পর্কে নির্দিষ্ট ব্যাঙ্কে বিষয়টি সম্পর্কে জানাতে হবে। এমনই নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। দুই রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাঙ্কের তিন শাখায় কয়েক কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতির মামলায় সিবিআইকে এফআইআর করার নির্দেশ দেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ।
স্টেট ব্যাঙ্ক ও ইউকো ব্যাঙ্কের তিন শাখায় কোটি কোটি টাকার দুর্নীতিতে কয়েক বছর আগে অভিযোগ হলেও সিবিআই এতদিনেও এফআইআর করেনি। এতদিন সিবিআই রাজ্যের অনুমতি পাওয়ার অপেক্ষায় এফআইআর না করায় তাদের ভর্ৎসনা করে আদালত। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের বক্তব্য, "ব্যাঙ্কের টাকা তছরুপের অভিযোগে সরকারি কর্মচারী যুক্ত, এই যুক্তিতে কেন সিবিআই রাজ্যের কাছে অনুমোদন চাইছে? ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রেও যদি রাজ্যের অনুমতি চাওয়া হয়, সেটা ডাস্টবিনে গিয়ে পড়বে। কারণ, ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে রাজ্যের অনুমোদন দরকার নেই। এই ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশ দিচ্ছি। সিবিআই নিজের বুদ্ধি খাটাক। কী কী নথি, তথ্য, প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, তার উপরে বিশ্লেষণ করে এফআইআর করবে কি না, সিদ্ধান্ত নিক।"
বিচারপতির আরও বক্তব্য, "SBI, UCO-সহ কোনও রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় অফিসারদের ব্যাপারে রাজ্যের SANCTION নিষ্প্রয়োজন। বিনয় মিশ্র মামলায় হাইকোর্ট নির্দেশ আগেই দিয়েছে এই ব্যাপারে। সিবিআই বনাম সতীশ কুমার মামলাতেও সুপ্রিম কোর্ট এই ব্যাপারে রায় দিয়েছে।" সেই নির্দেশে বলা হয়েছিল, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী বা পাবলিক সেক্টর সংস্থার কর্মীদের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে রাজ্যের অনুমোদন দরকার নেই। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেন, "সিবিআই কি কাজ করবে না বলে এটা করছে ? বাংলায় থেকে সিবিআইয়ের এমন হয়েছে ! পাবলিক মানি ফ্রড হয়েছে ৷"
উত্তরে সিবিআইয়ের তরফে ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল রাজদীপ মজুমদার বলেন, "আজ সিবিআই FIR করল, আর কাল ব্যাঙ্ক বলল, এটা দুর্নীতির মামলা নয়, তখন কী হবে ? সেই জটিলতার জন্যই সবটাই আটকে রয়েছে। এমনিতেই সিবিআইয়ের মামলার চাপ বেশি, সেই তুলনায় লোক কম। কোর্ট অর্ডার দিলে আমাদের কোনও সমস্যা নেই।" বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর নির্দেশে বলেন, "এফআইআর করার আগে সিবিআই প্রাথমিক অনুসন্ধান করে ব্যাঙ্কগুলিকে জানাবে। তাদের কোনও আপত্তি থাকলে জানাবে। না হলে দ্রুত সিবিআই FIR করবে।"
2022 সালের মার্চ মাসে একটি আর্থিক দূর্নীতি নজরে আসে স্টেট ব্যাঙ্কের। ব্যাঙ্ক কতৃপক্ষ সিবিআই তদন্তের আর্জি জানায়। কিন্তু, সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয়, এর জন্য রাজ্য সরকারের অনুমতি প্রয়োজন। কিন্তু, রাজ্য সরকার তাতে অনুমতি দেওয়া বন্ধ রেখেছে। 1946 সালের দিল্লি পুলিশ এসটাবকিশমেন্ট অ্যাক্টের 6 ধারা অনুযায়ী রাজ্যের অনুমতি বাধ্যতামূলক। তারপরই ব্যাঙ্কের তরফে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল।