শিলিগুড়ি, 6 অক্টোবর: স্বপ্নের মতো সুন্দর সিকিম চোখের নিমেষে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে তা কে ভেবেছিল! পর্যটনের অন্যতম ডেস্টিনেশন সিকিমের নাম শুনলে এখন আঁতকে উঠছে সকলে ৷ শুক্রবার সেই জায়গা ছেড়ে কোনও রকমে প্রাণ হাতে নিয়ে শিলিগুড়ি পৌঁছেছেন সেখানে কর্মরত অনেকেই ৷ ফিরছেন আটকে পড়া পর্যটকরাও ৷ তবে এখনও সকলের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট ৷
এদিন সকাল থেকে পরিস্থিতি আর আবহাওয়া কিছুটা স্বাভাবিক হতেই সিকিম ছাড়তে শুরু করেন পর্যটক ও সেখানে কর্মরত চাকুরিজীবীরা ৷ ভীড় দেখা যায় নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে। কথা হল দম্পতি নীরজ সিং ও সুষমা সিংয়ের সঙ্গে ৷ তাঁরা বেনারসের বাসিন্দা হলেও নীরজ কর্মরত ছিলেন সিকিমে। তাঁর সঙ্গে থাকতেন স্ত্রী সুষমা ৷ তিনি বলেন, "সিকিমের এখন যা পরিস্থিতি তা সম্পূর্ণ ঠিক হতে অনেক সময় লেগে যাবে। আমি 10 বছর রংপোতে চাকরি করছি। আমার দুটো ছোট ছেলে রয়েছে। রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম। সকালে উঠে দেখি গোটা বাড়ি জলের তলায় ৷ কোনওক্রমে সেখান থেকে পালিয়ে এসেছি। আর যাব না। অন্য চাকরি খুঁজব।"
স্ত্রী সুষমা সিং বলেন, "চারিদিকে খালি মৃত্যু আর ধ্বংস। সেই কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।" রাজস্থানের বাসিন্দা তুলসি কুমার বলেন, "এত ভয়ঙ্কর মুহূর্ত আর মনে করতে চাই না। ওখানে চাকরি করতাম ৷ তবে আর ফেরত যাব কি না, ভেবে দেখব ৷ আপাতত সিকিমের আগের পরিস্থিতিতে ফিরতে সময় লাগবে ৷"
বুধবার ভোররাতে সিকিমের লোনাক লেক ভেঙে তীব্র জলচ্ছ্বাস তছনছ করে দেয় গোটা সিকিমকে। তিস্তার জল ও পলির নিচে চাপা পরে যায় বাড়ি-ঘর। মৃত্যু মিছিল গোটা সিকিম জুড়ে। এই প্রলয় থেকে যারা প্রাণ বাঁচিয়ে ফিরে এসেছেন তাঁরা যেন এখনও সেখানকার কথা চিন্তা করে কেঁপে উঠছেন। আটকে থাকা প্রায় দু'হাজারের বেশি মানুষকে উদ্ধার করেছে বিপর্যয় মোকাবিলা দল।
আরও পড়ুন: লোনাক লেকে মেঘভাঙা বৃষ্টি ! তছনছ গোটা উত্তর সিকিম, নিখোঁজ 23 সেনা আধিকারিক
পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ এখনও সিকিমে রয়েছেন। যাঁরা একটু ভালো অবস্থায় ছিলেন তাঁরা কোনওক্রমে সিকিম ছেড়ে বাড়ি ফেরার পথ ধরেছেন ৷ তবে সেখানেও কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে 10 নম্বর জাতীয় সড়ক। সেই সড়ক সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়ায় প্রায় সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুরপথে চলাচল করতে হচ্ছে যাত্রীদের।