জলপাইগুড়ি, 5 জুলাই : ফের পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনে নামতে চলেছে কামতাপুর পিপলস পার্টি । কামতাপুর রাজ্যের সমর্থনকারী সংগঠনগুলোকে একছাতার তলায় এনে আন্দোলনে নামতে চায় নিখিল রায় গোষ্ঠী । পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে উত্তরবঙ্গে । উত্তরবঙ্গ বঞ্চিত, তাই আলাদা রাজ্যের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন বিজেপির সাংসদ ও বিধায়করা । কেন্দ্রের শাসকদলের জনপ্রতিনিধিদের এই দাবিতে পালে হাওয়া পেয়েছে কামতাপুর পিপলস পার্টি (ইউনাইটেড) ।
2019-এর লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের 8টির মধ্যে 7টি আসন জিতেছে বিজেপি । এদিকে বিধানসভা নির্বাচনেও দক্ষিণবঙ্গের তুলনায় উত্তরবঙ্গে ভাল ফল করেছে বিজেপি । সম্প্রতি আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বারলা উত্তরবঙ্গ বঞ্চিত এই অভিযোগ তুলে আলাদা রাজ্যের দাবি করেন । এরপর বেশ কয়েকজন বিজেপির বিধায়ক ও সাংসদ আলাদা রাজ্যের দাবি তুলতে শুরু করেন । এই দাবি উঠতেই ফের একবার সংগঠিত হচ্ছেন কামতাপুর রাজ্যের পুরানো দাবিদাররা ।
পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনকে পুনরায় উজ্জীবিত করার জন্য ময়নাগুড়িতে গোপন বৈঠক হয়েছে । ময়নাগুড়ির খাগড়াবাড়ি 2 নং গ্রাম পঞ্চায়েতের জাবুরা বাড়ির টেকাটুলি প্রাইমারি স্কুলে এই গোপন বৈঠক হয় । পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে একছাতার তলায় লাড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করেছে বিভিন্ন সংগঠন ৷ কামতাপুর পিপলস পার্টি (ইউনাইটেড), কামতাপুর ডেমোক্রেটিক পার্টি, কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টি, গ্রেটার কোচবিহার ডেমোক্রেটিক পার্টি-সহ আরও অনেক সংগঠনের সদস্যরা জোট বাঁধছেন ।
উত্তরবঙ্গকে নিয়ে আলাদা কামতাপুর রাজ্যের দাবি দীর্ঘদিনের । 1998 সাল থেকে 2004 সাল পর্যন্ত কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে উত্তাল হয়েছিল উত্তরবঙ্গ । বিশেষ করে অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলা । পৃথক রাজ্যের দাবিতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন এলাকার যুবক-যুবতীরা । সেই সময় তাঁদের গ্রেফতার করা হয় । এদিকে 2011 সালে সরকার পরিবর্তনের পর একে একে ছাড়া পেয়েছেন অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়া KLO জঙ্গি ও তাঁদের লিঙ্কম্যানরা । বর্তমানে তাঁরা সমাজের মুল স্রোতে ফিরে এসেছেন । কেউ হোমগার্ডের চাকরি করছেন কেউ বা পুর্নবাসন পেয়েছেন ।
আলাদা রাজ্যের দাবিতে ফের একবার উত্তরবঙ্গ উত্তাল হতে চলেছে? প্রশ্নটা কিন্তু ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে । কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে একটা সময় সশস্ত্র আন্দোলনে নেমেছিল কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (KLO) । জীবন সিংহের নেতৃত্বে ভুটানে আস্তানা গেড়ে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে নেমেছিল KLO। সেই সময় একাধিক বাম নেতাদের গুলি করে খুন করা হয় ।
সশস্ত্র আন্দোলন রুখতে ভারতীয় সেনা ও ভুটান সেনা যৌথ অভিযান করে ৷ 2003 সালের 14 ডিসেম্বর থেকে 2004 সালের 14 জানুয়ারি পর্যন্ত ‘অপারেশন ফ্ল্যাশ আউট’ চলেছিল । ভুটানে কেএলওদের ক্যাম্প গুঁড়িয়ে ফেলা হয় । গ্রেফতার হয় KLO জঙ্গিদের , উদ্ধার হয় প্রচুর অস্ত্র । তারপর থেকেই KLO প্রধান জীবন সিং আত্মগোপন করে রয়েছেন ।
এবারের বিধানসভা নির্বাচনের পর ফের আলাদা রাজ্যের দাবি তোলেন KLO প্রধান জীবন সিং ৷ ভিডিয়ো বার্তায় পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে জোট বাঁধার আহ্বান জানান তিনি ৷ প্রশ্ন উঠছে তাহলে কী তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়েই ফের কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে জোটবদ্ধ হতে শুরু করল বিভিন্ন সংগঠন?
আরও পড়ুন : ক্ষুধা মিটিয়ে শিল্পীসত্তা বাঁচিয়ে রাখাই দায় ভাওয়াইয়া শিল্পীদের
কামতাপুর পিপলস পার্টির (ইউনাইটেড) সভাপতি নিখিলকুমার রায় বলেন, "পৃথক রাজ্যের আন্দোলন জোরদার করার জন্য বিভিন্ন সংগঠন মিলে আলোচনায় বসেছিলাম । যাঁরা এই রাজ্যের দাবিতে সমর্থন করেন, তাঁদের একছাতার তলায় নিয়ে এসে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে নামার জন্যই প্রাথমিকভাবে এই আলোচনা সভা করেছি । আমরা একজোট না হতে পারলে বৃহত্তর আন্দোলন করা যাবে না । পৃথক পৃথক ভাবে হচ্ছে বলেই পৃথক রাজ্যের আন্দোলন একটা রূপ নিতে পারছে না । "