জলপাইগুড়ি, 13 জুলাই : অক্সিজেনের অভাবে বন্ধুদের হারিয়েছেন । আর কাউকে হারাতে চান না । হারাতে দিতে চান না ৷ এই ভাবনা থেকে শুরু হয় অক্সিজেনের চাহিদা মেটানোর উদ্যোগ । অবশেষে বানিয়ে ফেললেন অক্সিজেন কনসেনট্রেটর । স্বল্প মূল্যে জলপাইগুড়ি শহরের বুকেই অক্সিজেন কনসেনট্রেটর পাওয়া যাচ্ছে ৷ উদ্যোক্তা ইন্টিগ্রেটেড ফায়ার প্রোটেকশন প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর অনুজিৎ কুমার মুখোপাধ্যায় । জলপাইগুড়ি শহরের রাজবাড়ি পাড়ায় এই সংস্থার কারখানায় তৈরি হচ্ছে স্বল্প মূল্যের অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ।
2020-র ফেব্রুয়ারি মাস ৷ করোনার প্রথম ঢেউ আছড়ে পড়েছিল দেশে ৷ হাজার হাজার মানুষ সংক্রামিত ৷ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে বহু মানুষ ৷ তারপর লকডাউন ৷ ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে ৷ স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে শুরু করে দেশ ৷ কিন্তু, তা ক্ষণিকের ৷ করোনার আবার একটা ঢেউ ৷ এবার তা আরও ভয়ংকর ৷ তার উপর দেশজুড়ে অক্সিজেনের অভাব ৷ একের পর এক মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে ৷ অক্সিজেনের অভাবে কোথাও একদিনে 11 জনের মৃত্যু, কোথাও আরও বেশি ৷ শ্মশানে মৃতদেহ পোড়ানোর লাইন ৷ যেন মৃত্যুমিছিল ৷ কত মানুষ এভাবে তাঁদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন ৷ অক্সিজেন না পেয়ে চোখের সামনে প্রিয়জনকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখেছেন ৷ জলপাইগুড়ি শহরের বাসিন্দা অনুজিৎ কুমার মুখোপাধ্যায়ও প্রিয়জনকে হারিয়েছেন ৷ যাতে আর কাউকে সেই যন্ত্রণা না ভোগ করতে হয় তার জন্য দুর্গাপুরের এনআইটি(NIT)-র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর তৈরি করেছেন ৷ অনুজিৎ কুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, "আমি করোনার সময় আমার পাঁচ বন্ধুকে হারিয়েছি । অক্সিজেনের সমস্যায় আমিও পড়েছি । সেই বিষয়টি মাথায় ছিল । আমি জলপাইগুড়ি থেকেই এই উদ্যোগ শুরু করেছি । কেন মফস্বলের শহর থেকে কিছু করা যাবে না । তাই আমি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর বানানোর উদ্যোগ নিয়েছি । সফলও হয়েছি । আমাদের দুর্গাপুরের NIT-র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এটা করা হচ্ছে । আর এটা দেশীয় পদ্ধতিতে ভারতে তৈরি হচ্ছে ।"
আরও পড়ুন, সুন্দরবনে রোগীদের ঘরে দু'চাকায় পাড়ি দেন অক্সিজেন ম্যান
তাঁদের সংস্থা মূলত ফায়ার ফাইটিং নিয়ে কাজ করে । 1984 থেকে এই ফায়ার ফাইটিং প্রোডাক্ট তৈরি করা হচ্ছে । অনুজিৎবাবু বলেন, "করোনাকালে আমরা অক্সিজেন সিলিন্ডার ও কনসেনট্রেটর পাচ্ছিলাম না । এরপরেই আমাদের সংস্থার সদস্য অর্ক আমাকে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর তৈরির কথা বলেন । মাত্র একমাসের মধ্যেই আমরা এটা বানাতে পেরেছি । এটা আগামীতে সবার বাড়ির চাহিদা মেটাবে ৷ মাত্র 29 হাজার 999 টাকা দিয়ে বিক্রি করা হবে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর । এর বেশি টাকা দিয়ে নয় । আগে বাইরে থেকে আসত বলে অনেক টাকা খরচ হত ৷ এখন স্বল্প মূল্যেই সাধারণ মানুষের হাতে এটা আমরা তুলে দেব । আমার ইচ্ছা জলপাইগুড়িতে কর্মসংস্থান তৈরি করার ৷ জলপাইগুড়ির উন্নতি করতে চাই ৷ এটাই আমার লক্ষ্য । মেডিকেল যন্ত্রও আমরা তৈরি করব। "
সংস্থার ডাইরেক্টর অশ্বিনী কর্মকার জানান, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে অক্সিজেনের হাহাকার পড়ে যায় ৷ আমরা আগে স্যানিটাইজ়ার বানিয়েছি । আমাদের মাথায় ছিল অক্সিজেনের বিষয়টি । আমরা দিন রাত পরিশ্রম করেই এই অক্সিজেন কনসেনট্রেটর বানিয়ে ফেলেছি । বিশেষ করে ইলেকট্রিক ছাড়াও ব্যাটারিতে চলবে এই কনসেনট্রেটর । যেখানে সেনাবাহিনী থাকে, বিদ্যুৎ নেই, সেখানেই সৌরচালিত বা ব্যাটারি দিয়ে 20 ঘণ্টা অক্সিজেন দেওয়া যাবে ।
আরও পড়ুন, স্বদেশের টানে 1 হাজার অক্সিজেন কনসেনট্রেটর পাঠালেন আমেরিকাবাসী বাঙালি অর্থনীতিবিদ
তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শহরবাসী । এদিন শহরের ব্যবসায়ী পুরজিৎ বক্সী গুপ্ত বলেন, "আমাদের গর্বের দিন । জলপাইগুড়ি ইন্টিগ্রেটেড ফায়ার প্রোটেকশন প্রাইভেট লিমিটেড আজ অক্সিজেন কনসেনট্রেটর বানিয়ে নতুন দিগন্ত খুলে দিল । দুর্গাপুর এনআইটি(NIT)-র সঙ্গে যৌথভাবে করা হয়েছে । পিছিয়ে পড়া জলপাইগুড়ির গর্ব এই ফ্যাক্টরি । যে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর বিভিন্ন দেশ থেকে আনা হত । তা আজ জলপাইগুড়ির মতো জায়গা থেকেই তৈরি হচ্ছে ।"