জলপাইগুড়ি, 25 জানুয়ারি: পাঁচ শতাধিক বছরের পুরনো বাদ্যযন্ত্র সারিঞ্জাকে আপন করে 2017 সালে ভূষিত হয়েছিলেন 'বঙ্গরত্ন' সম্মানে ৷ তারপর সরকারি শিল্পী হিসেবে টুকটাক অনুষ্ঠানের বরাত পেতেন বটে, কিন্তু লকডাউনে গিয়েছে সেটুকুও ৷ তবে উত্তরবঙ্গের প্রখ্যাত লোকসংগীত শিল্পী মংলাকান্ত রায় একশো পেরিয়ে পেলেন কেন্দ্রের পদ্ম সম্মান (Mangala Kanta Roy awarded by Padma Sri) ৷ লকডাউনে সরকারি অনুষ্ঠান না-থাকায় ভিক্ষাবৃত্তিও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছিলেন মংলাকান্ত। সেই খবর তুলে ধরেছিল ইটিভি ভারত। তবে ভালোই লাগছে পদ্ম সম্মান পেয়ে, আজ অসুখ বিসুখ আমার নেই। ইটিভি ভারতকে জানালেন লোকসংগীত শিল্পী ৷
জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম ধওলাগুড়ি। সেখানেই মংলা রায়ের বাড়ি। স্ত্রী চম্পা রায়কে নিয়ে অসহায় দিন গুজরান করছেন তিনি। বিপিএল তালিকা ভুক্ত মংলা রায়ের তিন ছেলে, চার মেয়ে থাকলেও আলাদা থাকেন তাঁরা। 2017 শুধু বঙ্গরত্ন সম্মানটুকুই মিলেছিল, আর্থিক কোনও সুরাহা হয়নি, এমনটাই জানাচ্ছেন শিল্পী। উত্তরবঙ্গের পাঁচশো বছরের প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র সারিঞ্জা বাজান এই শিল্পী। 'বঙ্গরত্ন' ভূষিত হওয়ার পর বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে ডাক পেলেও লকডাউনের পর সেসব বন্ধ। সরকারি অনুষ্ঠান করলে মিলত এক হাজার টাকা। পাশাপাশি গলা আর আগের মত সাথ দেয় না।
শিল্পী বলেন, "সবাই বলে আমি বড়লোক। গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান বলে তোর কীসের অভাব। তাই দুঃখ-কষ্টের কথা আর কাউকে বলি না। সারিঞ্জাটাই আমার সবকিছু। সারিঞ্জা যখন বাজাই আমার থেকে বড়লোক আর কেউ মনে হয় না। বার্ধক্যভাতার জন্য দরখাস্ত দিয়েও লাভ হয়নি। এরপর সাংবাদিকরা সব খবর তুলে ধরে। তখন আধিকারিকরা আমার বাড়ি আসে। সরকারি লোক আমার কথা শোনেই না। গ্রামের থেকে কিছুই পাইনা।সারিঞ্জা বাজিয়েই যা পাই তাই দিয়েই চলি। বয়স হয়েছে গালাটাও সায় দেয় না। বাড়িঘরের অবস্থাও খারাপ। মুলি বাঁশের বেড়া দেওয়া হাওয়া ঢোকে তাই প্লাস্টিক দিয়ে রেখেছি। পুরনো বাড়ি ভেঙেও গেছে। তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর থেকে কিছু টাকা পাই। আর বঙ্গরত্ন নামটাই শুধু পেয়েছি। আর কিছুই পাইনি।"
আরও পড়ুন: ঘোষিত পদ্ম সম্মান! মরণোত্তর পদ্মবিভূষণে সম্মানিত 'ওআরএস' আবিস্কারক দীলিপ মহালনবিশ
পদ্মশ্রী জানান, টলমন গোসাই মারা যাওয়ার পর তার ছেলের কাছ থেকে গুরুর সারিঞ্জা তিনি কিনেছিলেন পাঁচ টাকায়। সেই সারিঞ্জাই এখনো বাজিয়ে চলেছেন। এরপর তিনি গ্রামের ঘুমা কীর্তনীয়ার কাছ থেকে তালিম নেন। আর ফিরে তাকাতে হয়নি। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় তাঁর ডাক পড়ত অনুষ্ঠান করার জন্য। কিন্তু এখন ভিক্ষা না-করলে সংসার চালানো দায়। লকডাউনের জেরে সেটাও বন্ধ। বয়সের ভারে গলাও আর সায় দেয় না।কতদিন এভাবে চলব বুঝতে পারছেন না মংলা গোসাই।