জলপাইগুড়ি, 6 অগাস্ট: বর্ষাকাল মূলত বন্যপ্রাণীদের প্রজননের সময় ৷ তাই প্রতিবছরই এই সময় পর্যটকদের জন্য জাতীয় উদ্যান ও অভয়ারণ্যগুলি বন্ধ রাখা হয় ৷ তবে এই বছর লকডাউনের কারণে একটানা 6 মাস বন্ধ উদ্যানগুলি ৷ যার কারণে বন্ধ মানুষের আনাগোনা ৷ ফলে অগাধ বিচরণের জায়গা পেয়েছে বন্যপ্রাণীরা ৷
পাশাপাশি লকডাউনের জেরে মানুষ ও বন্যপ্রাণীদের সংঘাত কমেছে বলে দাবি পরিবেশপ্রেমীদের ৷ তবে জঙ্গল গেলে সমস্যার সৃষ্টি হবে মত পরিবেশপ্রেমীদের । জলপাইগুড়ি সায়েন্স অ্যান্ড নেচার ক্লাবের সম্পাদক ডঃ রাজা রাউত বলেন, " লকডাউনের ফলে পরিবেশ অনেকটাই ভালো হয়েছে বন্যপ্রাণীদের জন্য ৷ পর্যটনের নামে আমরা সাধারণ মানুষরা একাধিকবার জঙ্গলে ঢুকে তাদের বিরক্ত করতাম ৷ এই বিষয়টা বন্ধ হওয়ার প্রয়োজন ছিল । বর্তমানে মানুষ ও বন্যপ্রাণীদের সংঘাত কমে গেছে । বন্যপ্রাণীরা এখন স্বাভাবিকত্ব ফিরে পেয়েছে ।"
অন্য আর এক পরিবেশপ্রেমী শ্যামা প্রসাদ পান্ডে বলেন, " লকডাউনের ফলে যানবাহন কম চলেছে । যার কারণে পরিবেশ দূষণ কমেছে । লকডাউনের ফলে একদিকে যেমন পরিবেশের ভালো হয়েছে, তেমনই ভালো হয়েছে বন্যপ্রাণীদের ৷ তারা জঙ্গলে একটা অবাধ বিচরণের জায়গা পেয়েছে ৷ জঙ্গলের বাইরে যে সমস্ত করিডরগুলি ছিল সেখানে বন্যপ্রাণী বিচরণ বেশি দেখা যাচ্ছে । কিন্তু এখানেও একটা সমস্যাও রয়েছে । চা বাগানে কাজের সময় শ্রমিকদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে চিতাবাঘের ৷ কারণ লকডাউনের সময় তারা এসে চা বাগানে আশ্রয় নিয়েছিল ৷ এখন সেখানে মানুষের বিচরণ দেখে তাদের সমস্যা হচ্ছে ৷ এক কথায় বলা যেতে পারে কয়েক দশক ধরে যা ক্ষতি করেছিলাম তার কিছুটা হলেও পূরণ হয়েছে ।"
প্রজননের কারণে ১৬ জুন থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর এই তিনমাস বন্যপ্রাণীদের জন্য জঙ্গলে পর্যটক ও সাধারণ মানুষের প্রবেশ বন্ধ থাকে । বর্তমানে লকডাউনের জেরে কয়েকমাস পর্যটকদের জন্য বন্ধ পার্কগুলি ৷ একটানা জঙ্গল বন্ধের ফলে বন্যপ্রাণীদের লাভই হয়েছে ।
অন্যদিকে, আর এক পরিবেশপ্রেমী বিশ্বপ্রিয় রাউতের বক্তব্য, "এই পরিস্থিতিকে আমরা দু'টি ভাগে ভাগ করতে পারি । একটা পরিবেশ ও একটা বন্যপ্রাণের দিক । তবে পরিবেশের কথা বলতে গেলে বলা যায় গত ৫০ বছর ধরে এটাই বোধহয় প্রথম যে পরিবেশের উপর আমরা যা অত্যাচার করে এসেছি সেই জায়গা থেকে পরিবেশ এখন নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারছে । ভালো মন্দের তিনটে মাপকাঠি আছে । নেগেটিভ, পজ়িটিভ এবং গ্রে । লকডাউনের ফলে মানুষের যাতায়াত কমে গেছে ৷ যার ফলে বন্যপ্রাণীরা মনে করছে তাদের জায়গা বড় হয়ে গেছে । লকডাউন উঠে গেলে তাদের কাছে কিন্তু এটা একটা বেগতিক ঠেকবে ৷ কারণ এতদিন যে জায়গা দিয়ে তারা যাতায়াত করেছে সেটা নিজেদের ভেবেছিল ৷ লকডাউন উঠে গেলে যখন আবারও জনসাধারণের যাতায়াত বাড়বে তখন তারা বুঝতে পারবে যে জায়গা আদৌও বাড়েনি । তখন তাদের সমস্যা তৈরি হবে ৷ তাই লকডাউনের জেরে পুরোটাই ভালে হয়েছে তা বলা চলে না ৷"