জলপাইগুড়ি, 20 অগাস্ট : কোরোনাভাইরাস সংক্রমণের জেরে বিপাকে পড়েছেন প্রতিমা গড়ার সঙ্গে জড়িত অলংকার শিল্পীরা । "ভালো করে পুজো হোক, তাহলেই আমরা ভালো থাকব।" এমনই চাইছেন শিল্পীরা । ঋণ করে অলংকার সামগ্রী বানিয়ে এখন কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। কোরোনা আতঙ্কে পুজো পার্বণেও কাটছাঁট করা হচ্ছে। মৃৎশিল্পের সাথে জড়িতরা ভরসা পাচ্ছেন না দুর্গা প্রতিমা গড়বেন কি না ৷ কারণ এখনও কোনও পুজো কমিটি বায়না দেয়নি। ফলে প্রতিমার অলংকারের চাহিদাও নেই। ময়নাগুড়ির আমগুড়ি গ্রামপঞ্চায়েতের চাপগড় গ্রামে প্রতিমার অলংকার সামগ্রী প্রস্তুত হয়ে থাকে । প্রতিবছর এই সময়টা নাওয়া খাওয়ার সময় থাকে না । প্রতিমার অলংকার সামগ্রীর চাহিদা প্রচুর থাকে । কিন্তু এবার তা নেই । বসে বসে দিন কাটছে ৷ কীভাবে সংসার চলবে তা নিয়েই চিন্তায় রয়েছেন শিল্পীরা।
চাপগড়ের শিল্পী প্রহ্লাদ সরকার বলেন, "প্রতিবছর এই সময়টা আমাদের কম করে 10-11 ঘণ্টা কাজ করতে হয় । নাওয়া খাওয়ার সময় থাকে না। শিলিগুড়ি, অসম থেকে শুরু করে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় আমরা এই অলংকার সামগ্রী গিয়ে থাকে । প্রতিবছর কম করে 8 থেকে 10 লাখ টাকা অলংকার সামগ্রীর কাজ করে থাকি। এবার মহাজন টাকা অগ্রিম দিয়ে থাকলেও অলংকার নিচ্ছে না। আর আমি যে বেশি করে অলংকার বানাব সেই ভরসাও পাচ্ছি না। কারণ এটা এমন একটা জিনিস যে বানিয়ে খুব বড় জোর 3-6 মাস থাকবে তারপর আঠা খুলে যাবে । কী করব বুঝে উঠতে পারছি না। এই কাজ করেই সংসার চলে।এমনকী আমার এই কাজের উপর নির্ভর করেই দশ থেকে 15 টি পরিবার চলে। তারাও কাজ নেই বলে সমস্যায় পড়েছেন । আমরা সারা বছরই এই অলংকার বানিয়ে থাকি। কারণ সারা বছর ধরেই কিছু না কিছু পুজো লেগেই আছে।"
কিন্তু এবার মার্চ মাস থেকে কোরোনার জন্য লকডাউনের ফলে পুজো পার্বণে নিষেধাজ্ঞা ছিল। তাই অলংকারের চাহিদা ছিল না। আস্তে আস্তে পুজো হচ্ছে ঠিকই ৷ কিন্তু তাও কোনও রকমে। যারা প্রতিমা নিত তারা ঘট বসিয়ে পুজো করছে ফলে আমাদের কাজের চাহিদা কমে যাচ্ছে। খুকুমনি সরকার, মেনকা সরকার বলেন, "আমাদের খুবই সমস্যা। বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে । সপ্তাহে 3 হাজার টাকা ঋণের টাকা দিতে হয়। অন্যান্য বছর নাওয়াখাওয়ার সময় থাকে না। এবার শুয়ে বসেই কাটাচ্ছি। আমরা চাই পুজোটা ভালো করেই হোক। তাহলে আমরা ভালো থাকব। আমরা এই কাজের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু এখনো খারাপ অবস্থা কীভাবে সংসার চলবে বুঝে উঠতে পারছি না।"
আমগুড়ির শিল্পীরা মুকুট, আদি বাংলা শাড়ির সাজ, ডাকের সাজ বানিয়ে থাকেন। আদি বাংলা শাড়ির সাজ 8000 টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হয় । এছাড়া প্রতিমার মুকুটের জন্য ভিমাল, (দশ আঙুল 20 টাকা, 12 আঙুল 24 টাকা, 14 আঙুল 28 টাকায়) বিক্রি হয়। ডাকের সাজ 500- 8000 টাকায় বিক্রি হয়। অন্যান্য বছর 8-10 লাখ টাকার মাল যায় নিম্ন অসম থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায়। সারা বছর 36000 পিস অলংকার বানিয়ে থাকেন শিল্পীরা । প্রতিদিন 100 পিস মুকুট তৈরি করতে হত । কিন্তু এবার এবার কাজই নেই। ডাকের সাজ দুর্গা পুজা, কালীপুজোয় চাহিদা বেশি ।