জলপাইগুড়ি, 21 এপ্রিল : জলের দামে বিক্রি হচ্ছে ফল । তবুও দেখা নেই ক্রেতার ৷ অন্যসময় বাজারে চাহিদা থাকে আকাশছোঁয়া, দামও ভালোই মেলে তাই ৷ তবে এবার বাজারে ফলের যোগান থাকলেও, নেই চাহিদা ।
হঠ্যাৎ এই আমূল পরিবর্তন এসেছে কোরোনা ভাইরাসের কারণে ৷ একদিকে সংক্রমণের ভয়, অন্যদিকে লকডাউন- দুইয়ে মিলে করুণ অবস্থার সম্মুখীন রাজ্যের ফল ব্যবসায়ীরা ৷ খাবার কেনার সামান্য টাকা জোগাতেও মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হচ্ছে তাদের ৷ পেটের দায়ে প্রাণের ভয় নিয়ে প্রতিদিন বাজারে হাজির হলেও ক্রেতা না জোটায় অধিকাংশই একবেলা খেয়েই দিন কাটাচ্ছেন ৷
জলপাইগুড়ির দিনবাজারের এক ফল ব্যবসায়ী সঞ্জু রজক জানান, ‘‘আমাদের ফলের বাজার আর আগের মতো নেই । কোরোনা ভাইরাসের প্রভাব যত দিন না কাটছে, তত দিন আমাদের ফলের বাজার ঠিক হবে না । খাবার এই বেলা জোটে তো ওই বেলা জোটে না । ফলের বাজার একদম শেষ, যে ফল আগে 80 টাকা কেজি দরে বিক্রি হত, সেটা এখন কেউ ৩০ টাকাতেও নিচ্ছে না । ডেকে ডেকে বিক্রি করছি, তাও কেউ নিচ্ছে না । সবার মনেই ভয়, তাই বাজারে কেউ আসছে না ।’’
একই সুর রাহুল রায় নামে এক ফলের ব্যবসায়ীর মুখে, তিনি বলেন ‘‘ফল এখন জলের দামে বিক্রি হচ্ছে । তবুও কেউ ফল কিনছে না । অন্য বছরে এই সময় আঙুর ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতাম । কিন্তু এবার ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে । ফল বিক্রি করেও অনেক ক্ষতি হচ্ছে । কিন্তু তাও করছি ।’’
ফুটপাতে ফল নিয়ে বসেন সাদ্দাম আনসারি ৷ তিনি জানান, ‘‘ ফলের বাজার খুব খারাপ । সারাদিনে ৫০০-৬০০ টাকার বিক্রি হচ্ছে । বাজার বন্ধ, তাই এই সমস্যা । ফলের আমদানি অনেক, কিন্তু চাহিদা অনেক কম । অন্যান্য বছর চড়া দামে আঙুর বিক্রি করতাম কিন্তু এবার প্রায় 50 শতাংশ দাম কমে গেছে । কিভাবে সংসার চালাব বুঝতে পারছি না ।’’
আরেক ফল ব্যবসায়ী কানাইয়া মণ্ডল বলেন,‘‘আমরা ফল বেশি দামে কিনছি কিন্তু বিক্রি করতে হচ্ছে কম দামে । বিক্রি নেই, লকডাউনের জন্য বাজারে কেউ আসছে না । স্থানীয় লোক কত খাবে? এমন অবস্থায় বাঁচার আর কোন উপায় দেখছি না । আমরা গরীব মানুষ৷ পেট চালাতে তাই বাধ্য হয়েই কম দামে বিক্রি করছি ।’’
সরকারের তরফ থেকে লকডাউনে ফল বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি না করা হলেও বিক্রি না হওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে ব্যবসায়ীদের ৷ সংসার চালাতে কেউ জলের দরে ফল বিক্রি করছেন, কেউ খুঁজছেন রোজগারের বিকল্প পথ ৷