জলপাইগুড়ি, 10 নভেম্বর: জলপাইগুড়ি জেলার গোশালা মোড়ের দেবী চৌধুরানী শ্মশানকালী মন্দির ৷ উত্তরবঙ্গে দেবী চৌধুরানীর একাধিক ডেরা ছিল ৷ তার মধ্যে এটি অন্যতম ৷ এই শ্মশানকালী মন্দিরে পুজো দিয়ে গিয়েছিলেন দেবী চৌধুরানী ৷ সেই কারণেই পরবর্তীকালে এই মন্দিরের নাম দেবী চৌধুরানী শ্মশানকালী মন্দির দেওয়া হয় ৷ আর এই মন্দিরের অন্যতম বিশেষত্ব, মন্দিরের প্রধান সেবায়েত হলেন একজন মুসলমান ৷ বংশপরম্পরায় ওই পরিবারের সদস্যরা, মন্দিরের নিত্যদিনের কাজ করেন ৷ বর্তমানে সেই দায়িত্ব পালন করেন মমতাজ মহম্মদ ৷
দেবী চৌধুরানী শ্মশানকালী মন্দিরে দেবীকে ভোগ দেওয়া হয়, বোয়াল মাছ, শোল মাছ ও মাংস দিয়ে ৷ আর মমতাজ মহম্মদ নিজে সেই সব আয়োজন করেন ৷ রোজ সকালে মন্দিরে পুজো জন্য ফুল তোলা, মন্দির প্রাঙ্গন পরিষ্কার রাখা-সহ অন্যান্য সব কাজই করেন তিনি ৷ আর দু’দিন পরেই কালীপুজো, এই সময় মমতাজ মহম্মদের দম ফেলার সময় থাকে না ৷ মায়ের পুজোর সব আয়োজনের দায়িত্ব যে তাঁরই উপরে ৷ ভক্তি ভরে কালীপুজোর আয়োজন করেন তিনি ৷ গোশালা মোড়ের এই দেবী চৌধুরানী শ্মশানকালী মন্দির সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য পীঠস্থান হয়ে উঠেছে ৷
এমনকী এই মন্দিরে হিন্দুরা যেমন মা কালীর দর্শনে আসেন, তেমনি মুসলমানরাও দু’বেলা মন্দিরে প্রণাম করে যান ৷ তেমনই এক ভক্ত মহম্মদ সাইদুল হক ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি সকালে কাজে যাওয়ার আগে ও কাজ থেকে ফেরার পরে, মা কালীকে দর্শন করে প্রণাম করে যাই ৷ আমার সব মনের বাসনা মা পূরণ করেন ৷ আমি রোজ নমাজ না পরতে পারলেও, মা কালীকে দর্শন করে মানসিক শান্তি পাই ৷’’
জলপাইগুড়ির দেবী চৌধুরানী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত সুভাষ চৌধুরী ৷ তিনি বলেন, ‘‘দেবী চৌধুরানী শ্মশানকালী মন্দিরে কালী ঠাকুরকে ভোগ দেওয়া হয় বোয়াল মাছ, শোল মাছ ও মাংস দিয়ে ৷ তন্ত্র মতেই মায়ের পুজো হয় ৷ এই মন্দির সব ধর্মের মানুষের মিলন স্থল ৷ প্রায় আড়াইশো বছর থেকে এই পুজো হয়ে আসছে ৷ শ্মশানকালী হিসেবে পুজো হন দেবী ৷ আমিষ ভোগে দেওয়া হয় বোয়াল মাছ, শোল মাছ, ডাল, ভাত আর নিরামিষ তরকারিও দেওয়া হয় ৷
মন্দির কমিটির সম্পাদক দেবাশিস সরকার বলেন, ‘‘শোনা যায় দেবী চৌধুরানী এখানে এসেছিলেন ৷ এই মন্দিরে মা কালীর পুজো দিয়ে গিয়েছেন ৷ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের দেবী চৌধুরানীর ডেরা ছিল ৷ তার একটা ডেরা ছিল জলপাইগুড়ি ৷ দেবী চৌধুরানী দরিদ্র মানুষকে দান করতেন ৷ এই মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রুকরুকা নদী থেকে বজরায় করে তিস্তা নদী হয়ে যাতায়াত করতেন দেবী চৌধুরানী ৷ এই মন্দির সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটা বার্তা বহন করে ৷ এখানে যিনি প্রধান সেবায়েত তিনি মুসলমান ৷ মমতাজই সব কাজ করে আসছেন বংশপরম্পরায় ৷’’
আরও পড়ুন: