জলপাইগুড়ি, 3 নভেম্বর: কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হল জলপাইগুড়ি কোতয়ালি থানার এক আধিকারিককে । তাও আবার সামান্য কিছু সময়ের জন্য নয় ৷ টানা ছয় ঘণ্টা কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয় অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার ওই আধিকারিককে ৷ কাঠগড়ায় তোলার আগে পুলিশের ওই আধিকারিকের কোমরের বেল্ট ও কাঁধের কাছে উর্দিতে থাকা ব্যাচ খুলে নেওয়া হয় ৷ শেষে আইসি গিয়ে ভুল শুধরে নেওয়ার আশ্বাস দেন ৷ তার পর জলপাইগুড়ি আদালতের বিচারক আরকে গুপ্তা সতর্ক করে ওই অফিসারকে ছেড়ে দেন ৷
জলপাইগুড়িতে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্য়ায়, যিনি আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার একটি মামলায় অভিযুক্ত, এ দিন আদালতে ঘটে যাওয়া ঘটনার সঙ্গেও তাঁর যোগসূত্র রয়েছে ৷ কারণ, যে মামলায় ওই পুলিশ আধিকারিককে শাস্তি পেতে হল, সেই মামলা তাঁর বিরুদ্ধেই দায়ের হয় 2010 সালে ৷
জলপাইগুড়ি আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই মামলায় সৈকত চট্টোপাধ্যায়কে সমন পাঠায় আদালত ৷ সমন সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে পাঠানোর কথা কোতয়ালি থানার ৷ তার পর আদালতে রিপোর্ট দেওয়ার কথা ৷ সেই রিপোর্ট গত 18 অক্টোবর আদালতে পাঠিয়ে দেয় থানা ৷
শুক্রবার শুনানির সময় নজরে আসে যে একটি সাদা কাগজে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে ৷ সেখানে অভিযুক্ত সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি তালাবন্ধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে ৷ কিন্তু সেই রিপোর্টে কোতয়ালি থানির আইসির কোনও ফরোয়ার্ডিং নেই ৷ থানারও কোনও সিলমোহর নেই ৷
আদালত সূত্রে খবর, এই ধরনের ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে না পাওয়া গেলে আদালতের সমনের পিছনে থানার তরফে রিপোর্ট লিখে জমা দেওয়া হয় ৷ এক্ষেত্রে তা না হওয়াতেই ক্ষুব্ধ হন বিচারক আরকে গুপ্তা ৷ তিনি সংশ্লিষ্ট এএসআই-কে ডেকে পাঠান৷ তার পর তাঁর কোমরের বেল্ট ও কাঁধে থাকা ব্যাচ খুলিয়ে কাঠগড়ায় তোলেন ৷ এভাবে টানা ছ’ঘণ্টা কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ওই আধিকারিককে ৷ এই ভুল করার জন্য তাঁকে বিচারকের ভর্ৎসনার মুখেও পড়তে হয় ৷
এমন পরিস্থিতির কথা জানতে পেরে আদালতে হাজির হন কোতয়ালি থানার আইসি অর্ঘ্য সরকার ৷ আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি ভুল শুধরে নেওয়ার কথা বলেন ৷ তার পর ওই আধিকারিককে সতর্ক করে বিচারক ছেড়ে দেন ৷ এই নিয়ে জলপাইগুড়ির জেলা পুলিশ সুপার খাণ্ডবাহালে উমেশ গণপত জানান, কোর্টের রিপোর্টে একটা ভুল হয়েছিল । সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।
উল্লেখ্য, সৈকত চট্টোপাধ্যায় আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা চলাকালীন দীর্ঘসময় বেপাত্তা ছিলেন ৷ সম্প্রতি তিনি জলপাইগুড়ি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন ৷ সেদিনই তাঁকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয় ৷ সূত্রের খবর, সেই সময়ই কোতয়ালি থানা থেকে পুরনো মামলায় সমন ধরাতে তাঁর বাড়ি যাওয়া হয়েছিল ৷ স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে পাওয়া যায়নি ৷ সেই বিষয়টিই আদালতে জানাতে গিয়ে বিপত্তি বাঁধিয়ে ফেলেন ওই আধিকারিক ৷
আরও পড়ুন: দম্পতিকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলায় 14 দিনের জেল হেফাজত সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের