জলপাইগুড়ি, 20 সেপ্টেম্বর : তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা কি রয়েছে ওএসডি হওয়ার ? কোন যোগ্যতায় একজন চোখের ডাক্তার উত্তরবঙ্গের ওএসডি (OSD) ? জন স্বাস্থ্য বিভাগের (North Bengal Public Health Department) ওএসডি সুশান্ত রায়ের (Dr. Sushanta Roy) যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে উত্তরবঙ্গজুড়ে । তাঁর ওএসডি হওয়ার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি ও আরএসপি ।
জনস্বাস্থ্য বিভাগের ওএসডি ডাঃ সুশান্ত রায় পেশায় একজন সদর হাসপাতালের চোখের ডাক্তার ছিলেন । চলতি বছরেই তিনি অবসর গ্রহণ করেছেন । অভিযোগ, করোনাকালে হঠাৎ করে তিনি চোখ দেখা বন্ধ করে দেন । তাঁর পদোন্নতি হয় । চোখের ডাক্তার থেকে রাতারাতি তিনি হয়ে যান উত্তরবঙ্গের করোনা মোকাবিলার ওএসডি ।
অবসর গ্রহণের আগে করোনার ওএসডি থেকে হয়ে যান জনস্বাস্থ্য বিভাগের উত্তরবঙ্গের ওএসডি । কিছুদিন আগে পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ-এর শিবিরে গিয়ে চক্ষু পরীক্ষা করতেন সুশান্ত রায় । হাসপাতালের যে কোনও অনুষ্ঠানে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও হাসপাতাল সুপারের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যেত তাঁকে । কিন্তু এখন হাসপাতালের যে কোনও উদ্বোধনে তাঁকেই ফিতে কাটতে দেখা যায় বলে অভিযোগ ।
কিন্তু জনস্বাস্থ্যের ওএসডি হতে গেলে বা প্রশাসক হতে গেলে যে শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন, তা কি চক্ষু বিশেষজ্ঞ সুশান্ত রায়ের আছে ? এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বাস্থ্য কর্তা জানান, পাবলিক হেলথের ওএসডি হতে গেলে মাস্টার ডিগ্রি লাগে । যা সুশান্ত রায়ের নেই বলে অভিযোগ । তাঁকে কীভাবে ওএসডি করা হল, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা । রাজ্য সরকার কীভাবে তাঁকে এই পদে বসালেন, এই প্রশ্নে সরব বিরোধীরা ৷
আরও পড়ুন: Kolkata Metro Rail: 25 সেপ্টেম্বর থেকে শনি ও রবিবার বাড়ছে মেট্রো পরিষেবা
এই পদ আগে ছিল না উত্তরবঙ্গে । করোনা চলাকালীন এই পদ সৃষ্টি করা হয়েছে । একজন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বা একজন হাসপাতাল সুপার পড়াশোনা করে তারপর ওই পদে আসীন হন । কিন্তু জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের একজন চোখের ডাক্তার কীভাবে উত্তরবঙ্গের 9 জেলার স্বাস্থ্য দফতরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের মাথার উপর বসে গেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ ।
আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রকাশ রায়ের অভিযোগ, "ডাঃ সুশান্ত রায় সম্পর্কে বলতে বলতে আমরা ব্যর্থ হয়ে গিয়েছি । আসলে এটা মোটা চামড়ার সরকার তো ! আমরা জানি একজন অ্যাডমিনিস্ট্রেটর যিনি থাকবেন, তাঁর কিছু শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা দরকার । তিনি চোখের ডাক্তার । নিশ্চয়ই তিনি ডাক্তার । কিন্তু চোখের ডাক্তার নিশ্চয়ই মানুষের শারীরিক সমস্যা নিয়ে কিছুই জানেন না । একজন ফিজিশিয়ান হতেন, একজন সার্জেন হতেন । চোখের ডাক্তার হলেই অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হওয়া যায় না । তাহলে আইএএস, আইপিএস পড়তে হলে এত ট্রেনিং এত কিছু কেন করা হয় ! দলতন্ত্র রক্ষা করতে হবে, নিজের মানুষকে ক্ষমতায় বসাতে হবে ! তাতে জনগণ পরিষেবা পাক আর না-পাক । আমার দলের কোষাগার যাতে পুর্ণ হয়, সেই জন্য এখানে ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে । যোগ্যতাবিহীন লোককে বসানো হয়েছে । তার ফলে জলপাইগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের সমস্ত মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন । তাঁকে অপসারিত করতে হবে ৷ এবং যোগ্যতা সম্পন্ন সরকারি একজন ডাক্তার যিনি প্রশাসক হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করেছেন তাঁকে ওই পদে আনতে হবে ৷ যিনি মানুষকে পরিষেবা দেবেন ।"
আরও পড়ুন: Weather Update : মঙ্গলে বৃষ্টি বাড়বে পশ্চিমাঞ্চলের জেলায়, কলকাতায় আবহাওয়ার উন্নতির পূর্বাভাস
জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ তথা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তার জয়ন্তকুমার রায় জানান, "একজন পাবলিক হেলথের অফিসার হতে গেলে পড়াশোনা করতে হয় । সরকার থেকে অনেক ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করানো হয় । যেমন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বা ডেপুটি সিএমওএইচ-দের একটা শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকে ৷ জনস্বাস্থ্যের জন্য তাঁদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ৷ কিন্তু জানি না সুশান্ত রায় কবে এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিলেন বা তাঁর কোনও ডিগ্রি আছে কি না ৷" তিনি ট্রেনিং নিয়ে থাকলে বা পড়াশোনাটা করে ডিগ্রি নিয়ে থাকলে তিনিও যোগ্য হতে পারতেন বলেও কটাক্ষ করেন সাংসদ ।
এদিকে ওএসডি সুশান্ত রায়ের কাছে তাঁর ডিগ্রি নিয়ে জানতে চেয়ে ফোন করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন । ফলে তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি । যদিও তিনি আগেও বলেছেন, সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন না । শুধুমাত্র একটি চ্যানেলের সঙ্গেই কথা বলবেন ।
আরও পড়ুন: Suvendu-Kunal : টুইট যুদ্ধে শুভেন্দুর ‘মা কালী’ স্মরণ, পাল্টা ‘মা দুর্গা’র শরণাপন্ন কুণাল
এ দিকে উত্তরবঙ্গের জন স্বাস্থ্য বিভাগের ওএসডি পদমর্যাদা বা ডিগ্রির বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের (DHS) ডিরেক্টর অব হেলথ সার্ভিস ডাঃ অজয় চক্রবর্তীকে ফোন করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি ৷