ETV Bharat / state

World Elephant Day: ট্রেনের বলি বহু, বিশ্ব হাতি দিবসে গজরাজের অস্তিত্ব কি সংকটে ; উঠছে প্রশ্ন

ডুয়ার্সের রেললাইনে ট্রেনের বলি হয়েছে 69টি হাতি। 1973 থেকে 2023 সালের মধ্যে এই বিপুল সংখ্যক হাতির প্রাণ গিয়েছে ৷ যত দিন বাড়ছে ততই বাড়ছে ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যুর সংখ্যা ৷ ট্রেনের ধাক্কায় হাতি মারা যাওয়ার পর রেল ও বনবিভাগ একে অপরের উপর দায় চাপায়, এমনই বলছেন পরিবেশ থেকে পশু প্রেমীরা ৷ সবমিলিয়ে আজ বিশ্ব হাতি দিবসে গজরাজের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে।

World Elephant Day
ট্রেনের বলি হয়েছে বহু হাতি
author img

By

Published : Aug 12, 2023, 8:29 AM IST

Updated : Aug 12, 2023, 10:33 AM IST

জলপাইগুড়ি, 12 অগস্ট: ডুয়ার্সে ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই চলেছে। ডুয়ার্সের রেললাইনে ট্রেনের বলি হয়েছে 67টি হাতি। আর তার জেরে হাতি দিবসে, হাতিদের অস্তিত্ব নিয়েই সংকট দেখা দিয়েছে। রেল ও বন দফতর ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যুর ঘটনা এড়াতে নানা উদ্যোগ নিলেও হেরিটেজ প্রাণীর মৃত্যু কিন্তু কোনওভাবেই আটকানো যাচ্ছে না।

ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ প্রেমী সংগঠনের সদস্যরা। আলিপুরদুয়ার থেকে শিলিগুড়িগামী ডুয়ার্সের রেললাইনে ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু নতুন ঘটনা নয়। উত্তরবঙ্গে বিশেষ করে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান, গরুমারা জাতীয় উদ্যান, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প, মহানন্দা, চাপড়ামারি অভয়ারণ্যে হাতির সংখ্যা বেশি। আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি জেলার 977.51 বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলে হাতির সংখ্যা বেশি রয়েছে।

শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার রুটে 1973 সাল থেকে 2013 সাল পর্যন্ত ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু হয়েছিল 53টি। এই রেললাইনটি মিটার গেজ থেকে ব্রডগেজ লাইনে রুপান্তরিত হওয়ার পরই ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকে। 2004 সাল থেকে 2013 সাল পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইনে ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু হয়েছে 30টি। 2015 সালে 2টি হাতির মৃত্যু হয়। 2016 সালে 4টি হাতির মৃত্যু হয়। 2017 সাল থেকে ফের হাতির মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। 2018 সালে ট্রেনের ধাক্কায় 4টি হাতির মৃত্যু হয়। 2019 সালে 3টি হাতি মারা যায় । 2022 সালে 1টি ও 2023 সালে 11 অগস্ট পর্যন্ত 1টি হাতির মৃত্যু হয়েছে।

World Elephant Day
ট্রেনের বলি হয়েছে বহু হাতি
  • কোথায় বেশি ট্রেনের ধাক্কায় হাতির দুর্ঘটনা ঘটে-

আলিপুরদুয়ার রেলওয়ে ডিভিশন সূত্রে জানা গিয়েছে শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ারের মাঝে ব্রডগেজ লাইনের রেল এলাকায় হাতির মৃত্যু বেশি হয়েছে। 2010 সালে সেপ্টেম্বর মাসে বানারহাটের মরাঘাটে ট্রেনের ধাক্কায় 8টি হাতির মৃত্যু হয়। রেল ও বনবিভাগের সমন্বয়ের অভাবেই হাতির মৃত্যু হচ্ছে বলে মনে করছেন পরিবেশ প্রেমীরা। রেললাইন থেকে হাতি তাড়ানোর জন্য আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের গেট নম্বর এসকে ওয়ান 71, এসএকওয়ান 26-এ মৌমাছির শব্দ লাগানো হয়েছে। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। উল্লেখ্য, রেললাইনের পাশে হাতি এলেই মাইকে মৌমাছির শব্দ চালিয়ে দেওয়া হয় ফলে হাতি চলে যায়।

  • আলিপুরদুয়ার রেলওয়ে ডিভিশনের (ডিআরএম) অমরজিৎ গৌতম বলেন, "ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যুর ঘটনা অনেক কমিয়ে এনেছি আমরা। আসলে হঠাৎ করে রেললাইনের পাশে হাতি চলে এলে ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এমারজেন্সি ব্রেক কষার পরেই পণ্যবাহী গাড়ি আটকানো সম্ভব হয় না যার ফলেই দুর্ঘটনা ঘটে যায়। আমরা চাই না একটিও বন্যপ্রাণী ট্রেনের ধাক্কার মারা যাক। হাতির মৃত্যু ঠেকাতে আমরা ইতিমধ্যেই রেললাইনের পাশে থার্মাল ডিভাইস লাগিয়েছি ৷
  • উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণী) রাজেন্দ্র জাখর বলেন, "ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যুর ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। রেলের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে তথ্য আদানপ্রদানের মাধ্যমে রেললাইনে আসা হাতির গতিবিধি আগাম জানিয়ে দিয়ে হাতির মৃত্যু অনেকটাই কমানো গিয়েছে। রেললাইনের পাশে কোনও হাতির গতিবিধি জানতে পারলেই আমরা রেলকে জানিয়ে দিয়ে থাকি। এমনকী রেললাইনে হাতি এলে পটকা ফাটিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। আমরা চেষ্টা করি হাতিকে সব সময় বাঁচানোয়। কিন্তু দুর্ঘটনাও ঘটে যায়।
  • পরিবেশ প্রেমী সংগঠনের সদস্য নন্দু রায়ের অভিযোগ , ট্রেনের ধাক্কায় হাতি মারা যাওয়ার পর রেল ও বনবিভাগ একে অপরের উপর দায় চাপায়। রেল ও বন দফতরের মধ্যে অনেকে আলোচনা হলেও বাস্তব রুপ পায় না। ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু ঠেকাতে রেল ও বনবিভাগ উভয়কেই মানবিক হতে হবে। বিশ্ব হাতি দিবসে আমাদের সবাইকে অঙ্গিকার বন্ধ হতে হবে যাতে আর একটি হাতিও মারা না-যায়।

আরও পড়ুন: গর্ভবতী হাতির মৃত্যুর ঘটনায় রেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের বনবিভাগের

জলপাইগুড়ি, 12 অগস্ট: ডুয়ার্সে ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই চলেছে। ডুয়ার্সের রেললাইনে ট্রেনের বলি হয়েছে 67টি হাতি। আর তার জেরে হাতি দিবসে, হাতিদের অস্তিত্ব নিয়েই সংকট দেখা দিয়েছে। রেল ও বন দফতর ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যুর ঘটনা এড়াতে নানা উদ্যোগ নিলেও হেরিটেজ প্রাণীর মৃত্যু কিন্তু কোনওভাবেই আটকানো যাচ্ছে না।

ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ প্রেমী সংগঠনের সদস্যরা। আলিপুরদুয়ার থেকে শিলিগুড়িগামী ডুয়ার্সের রেললাইনে ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু নতুন ঘটনা নয়। উত্তরবঙ্গে বিশেষ করে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান, গরুমারা জাতীয় উদ্যান, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প, মহানন্দা, চাপড়ামারি অভয়ারণ্যে হাতির সংখ্যা বেশি। আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি জেলার 977.51 বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলে হাতির সংখ্যা বেশি রয়েছে।

শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার রুটে 1973 সাল থেকে 2013 সাল পর্যন্ত ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু হয়েছিল 53টি। এই রেললাইনটি মিটার গেজ থেকে ব্রডগেজ লাইনে রুপান্তরিত হওয়ার পরই ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকে। 2004 সাল থেকে 2013 সাল পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইনে ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু হয়েছে 30টি। 2015 সালে 2টি হাতির মৃত্যু হয়। 2016 সালে 4টি হাতির মৃত্যু হয়। 2017 সাল থেকে ফের হাতির মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। 2018 সালে ট্রেনের ধাক্কায় 4টি হাতির মৃত্যু হয়। 2019 সালে 3টি হাতি মারা যায় । 2022 সালে 1টি ও 2023 সালে 11 অগস্ট পর্যন্ত 1টি হাতির মৃত্যু হয়েছে।

World Elephant Day
ট্রেনের বলি হয়েছে বহু হাতি
  • কোথায় বেশি ট্রেনের ধাক্কায় হাতির দুর্ঘটনা ঘটে-

আলিপুরদুয়ার রেলওয়ে ডিভিশন সূত্রে জানা গিয়েছে শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ারের মাঝে ব্রডগেজ লাইনের রেল এলাকায় হাতির মৃত্যু বেশি হয়েছে। 2010 সালে সেপ্টেম্বর মাসে বানারহাটের মরাঘাটে ট্রেনের ধাক্কায় 8টি হাতির মৃত্যু হয়। রেল ও বনবিভাগের সমন্বয়ের অভাবেই হাতির মৃত্যু হচ্ছে বলে মনে করছেন পরিবেশ প্রেমীরা। রেললাইন থেকে হাতি তাড়ানোর জন্য আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের গেট নম্বর এসকে ওয়ান 71, এসএকওয়ান 26-এ মৌমাছির শব্দ লাগানো হয়েছে। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। উল্লেখ্য, রেললাইনের পাশে হাতি এলেই মাইকে মৌমাছির শব্দ চালিয়ে দেওয়া হয় ফলে হাতি চলে যায়।

  • আলিপুরদুয়ার রেলওয়ে ডিভিশনের (ডিআরএম) অমরজিৎ গৌতম বলেন, "ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যুর ঘটনা অনেক কমিয়ে এনেছি আমরা। আসলে হঠাৎ করে রেললাইনের পাশে হাতি চলে এলে ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এমারজেন্সি ব্রেক কষার পরেই পণ্যবাহী গাড়ি আটকানো সম্ভব হয় না যার ফলেই দুর্ঘটনা ঘটে যায়। আমরা চাই না একটিও বন্যপ্রাণী ট্রেনের ধাক্কার মারা যাক। হাতির মৃত্যু ঠেকাতে আমরা ইতিমধ্যেই রেললাইনের পাশে থার্মাল ডিভাইস লাগিয়েছি ৷
  • উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণী) রাজেন্দ্র জাখর বলেন, "ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যুর ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। রেলের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে তথ্য আদানপ্রদানের মাধ্যমে রেললাইনে আসা হাতির গতিবিধি আগাম জানিয়ে দিয়ে হাতির মৃত্যু অনেকটাই কমানো গিয়েছে। রেললাইনের পাশে কোনও হাতির গতিবিধি জানতে পারলেই আমরা রেলকে জানিয়ে দিয়ে থাকি। এমনকী রেললাইনে হাতি এলে পটকা ফাটিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। আমরা চেষ্টা করি হাতিকে সব সময় বাঁচানোয়। কিন্তু দুর্ঘটনাও ঘটে যায়।
  • পরিবেশ প্রেমী সংগঠনের সদস্য নন্দু রায়ের অভিযোগ , ট্রেনের ধাক্কায় হাতি মারা যাওয়ার পর রেল ও বনবিভাগ একে অপরের উপর দায় চাপায়। রেল ও বন দফতরের মধ্যে অনেকে আলোচনা হলেও বাস্তব রুপ পায় না। ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু ঠেকাতে রেল ও বনবিভাগ উভয়কেই মানবিক হতে হবে। বিশ্ব হাতি দিবসে আমাদের সবাইকে অঙ্গিকার বন্ধ হতে হবে যাতে আর একটি হাতিও মারা না-যায়।

আরও পড়ুন: গর্ভবতী হাতির মৃত্যুর ঘটনায় রেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের বনবিভাগের

Last Updated : Aug 12, 2023, 10:33 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.