জলপাইগুড়ি, 7 জুলাই : জঙ্গল সংলগ্ন গ্রামে হাতি ঢুকলেই বেজে উঠবে সাইরেন । আর তাতে সতর্ক হয়ে যাবেন বনকর্মীরা । সজাগ হবেন গ্রামবাসীরাও । ফলে একদিকে যেমন জীবনহানি থেকে রক্ষা পাবেন মানুষ, তেমনই ফসল নষ্ট হওয়াও আটকাতে পারবেন তাঁরা । গ্রামে হাতি ঢোকার আগেই বনকর্মী ও গ্রামবাসীদের সতর্ক করতে তৈরি হল অটোমেটেড এলিফ্যান্ট ট্র্যাকিং ডিভাইস ।
গতকাল সূচনা হল অটোমেটেড এলিফ্যান্ট ট্র্যাকিং ডিভাইস প্রোজেক্টের । সোসাইটি ফর নেচার এন্ড অ্যানিমেল প্রোটেকশন (SNAP)-এর উদ্যোগেই এই ডিভাইসটি চালু করা হয় । জলপাইগুড়ি গরুমারা জাতীয় উদ্যানের কালীপুর ইকো ভিলেজের চারপাশে 150 মিটার অন্তর অন্তর পরীক্ষামূলকভাবে চারটি ডিভাইস লাগানো হয়েছে । হাতি ওই এলাকায় প্রবেশ করলেই সাইরেন বেজে উঠবে । তাতে বনকর্মীরা সহজেই হাতির অভিমুখ ঘুরিয়ে দিয়ে গ্রামে ঢোকা আটকাতে পারেন । আর হাতি যদি ঢুকেও যায় তাহলে সবাই সতর্ক থাকবেন । অন্তত, জীবনহানি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না । কালীপুর ইকো ভিলেজে এই ডিভাইসটি চালু হওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন DFO নিশা গোস্বামী, ADFO রাজু সরকার,বাদল দেবনাথ, রেঞ্জার অয়ন চক্রবর্তী সহ অন্যরা ।
এই বিষয়ে, SNAP-র সভাপতি কৌস্তভ চৌধুরি বলেন, "আমরা দীর্ঘদিন থেকেই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করে চলেছি । মানুষ ও বন্যপ্রাণীর সংঘাত প্রায়শই হচ্ছে । সে দিক থেকে বিষয়টা আমাদের নাড়া দিয়েছিল । তাই আমাদের টিম মেম্বাররা এই ডিভাইসটা বানানোর পরিকল্পনা করি । ডিভাইসটির নাম প্যাসিভ ইনফারেড রেফিয়েশন । অটোমেটেড এলিফ্যান্ট ট্র্যাকিং ডিভাইসটির পিছনে দেড় বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন এই সংস্থার সিমু সাহা, সনাতন গোস্বামী, দীপায়ন বিশ্বাস, সঙ্গীত রায়, কৌশিক সরকার, সন্দীপ চৌধুরিরা । আমরা পরীক্ষামূলকভাবে চারটি ডিভাইস লাগিয়েছি । 20 টি ডিভাইস লাগানো হবে গরুমারা জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন বনবস্তিগুলির চারপাশে । প্রতিটি ডিভাইস বানাতে 18-20 হাজার টাকা খরচ হয়েছে ।"
জলপাইগুড়ি গরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগের DFO নিশা গোস্বামী বলেন, "আজ আমরা SNAP নামে এক সংস্থার সহযোগিতায় চারটি অটোমেটেড এলিফ্যান্ট ট্র্যাকিং ডিভাইস প্রোজেক্টের পরীক্ষামূলকভাবে সূচনা করলাম । প্রায়শই জঙ্গল থেকে লোকালয়ে বেরিয়ে আসে হাতি । কখনও জঙ্গল সংলগ্ন এলাকার মানুষের চাষজমির ক্ষতি করে কখনও বা জীবনহানির ঘটনা ঘটে । এই অ্যালার্মিং সিস্টেমের জেরে হাতি গ্রামের আশপাশে এলেই আমাদের কাছে সংকেত পেয়ে যাব । আমাদের বনকর্মীরাও বুঝতে পারবে হাতি ঢুকছে । আমরা আশাবাদী এই ডিভাইসের মাধ্যমে আমরা ভালো ফল পাব । আমরা এই সংস্থাকে আর্থিকভাবে কোনও সহযোগিতা করছি না ।"
কালীপুর ইকো ভিলেজের বাসিন্দা রবীন ওড়াও বলেন, "খুব ভালো উদ্যোগে নেওয়া হল । হাতির হানার ভয়ে আমাদের রাত জাগতে হত । এখন থেকে শান্তিতে ঘুমোতে পারব । কারণ হাতি আসার আগেই সাইরেন বাজবে ।" গতকালের অনুষ্ঠানে, সংস্থার পক্ষ থেকে কালীপুর ইকো ভিলেজের পড়ুয়াদের স্কুলব্যাগ, খাতা ,পেনসিল দেওয়া হয় । এছাড়া বন্যপ্রাণী বিভাগকে তিনটি নাইট ভিশন ক্যামেরাও দেওয়া হয় SNAP-র পক্ষ থেকে ।