জলপাইগুড়ি, 23 অগাস্ট : জল্পেশ ৷ ময়নাগুড়িতে জরদা নদীর ধারে উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রাচীন শিব মন্দির ৷ ফি বছর শ্রাবণ মাসে লাখ লাখ পুণ্যার্থী দূরদূরান্ত থেকে বাবার মাথায় জল ঢালতে আসেন ৷ কিন্তু এ বছর শুধুই শূন্যতা ৷ কোরোনা সংক্রমণের জেরে দেখা নেই পুণ্যার্থীদের ৷ সংকটে মন্দির কমিটি ৷ পুরোহিতসহ অন্য কর্মচারীদের বেতন কীভাবে দেবেন তা নিয়ে চিন্তায় কপালে ভাঁজ ৷ পরিস্থিতি এমনই মন্দিরের ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙে কর্মীদের বেতন দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে ৷ মন্দিরকে কেন্দ্র করে চলে কয়েক হাজার মানুষের পেট ৷ কিন্তু এ বছর টান পড়েছে তাঁদের রুজিরুটিতেও ৷
প্রতিবছর জুলাই, অগাস্ট মাসে লক্ষাধিক পুণ্যার্থীর সমাগম হয় ৷ নেপাল, ভুটান, অসম থেকেও আসেন অনেকে ৷ বসে শ্রাবণী মেলা ৷ চলে মাস খানেক ৷ কিন্তু কোরোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে এবারের ছবিটা কেমন যেন ফ্যাকাশে ৷ খাঁ খাঁ করছে মন্দির চত্বর ৷ আর পাঁচটা বছর যেখানে পা রাখার জায়গা থাকে না । মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেন না অনেকেই । এবার চারদিক ফাঁকা ৷ মন্দিরের ভেতরে হাতে গোনা কয়েকজন ৷ বসে আছেন পুরোহিত ।
জল্পেশ ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক গিরিন্দ্রনাথ দেব জানান, অবস্থা খুব খারাপ এবার । একদিনে দু' হাজার লোকও হয়নি । প্রতিবছর পুণ্যার্থীদের টিকিট বাবদ এক কোটি টাকার ওপর সংগ্রহ হয় । এছাড়াও দান বাক্সে যে টাকা জমা পড়ে তা দিয়ে সারা বছর পুরোহিত ও কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হয় ৷ এছাড়া অন্নভোগ থেকে শুরু করে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হয়ে থাকে । মন্দিরে 7 জন পুরোহিত ও 30 জন কর্মচারী রয়েছেন । তাঁদের বেতন দিতে প্রতিমাসে খরচ 2 লাখ টাকা ৷ এছাড়া মন্দিরের ভেতরে যা প্রণামী ওঠে তার 21 শতাংশ পুরোহিতদের দেওয়া হয় ৷ কিন্তু এবার ভক্ত সমাগম না হওয়ায় পুরোহিত ও কর্মীদের বেতন কীভাবে দেবেন তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন মন্দির কমিটির সদস্যরা । পরিস্থিতি সে-রকম হলে মন্দিরের ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙতে হতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি ৷
গিরিন্দ্রবাবু আরও জানান, প্রতিবছর শ্রাবণী মেলায় 1000-এর উপরে দোকান বসে ৷ কিন্তু এবার হাতে গোনা কয়েকজন মালা, ধূপকাঠি ও অন্য সামগ্রী বিক্রি করছেন । মেলা না হওয়ায় মাথায় হাত স্থানীয় ও বহিরাগত ব্যবসায়ীদের ৷
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী মানিক দাস বলেন, "কোরোনার জন্য পরিস্থিতি খুব খারাপ ৷ মন্দিরে লোক কম আসছে ৷ ব্যবসার অবস্থা খারাপ ৷ কামাই নেই ৷" স্থানীয় এক মিষ্টি বিক্রেতা রমেশ রায় বলেন, "লকডাউনের কারণে বন্ধ দোকান ৷ মন্দিরে এবারে একেবারে লোক নেই ৷ সারা বছর মোটামুটি তিনটে মেলা পাই ৷ তিনটে মেলা করেই সংসার চলে ৷ এবার তো বৈশাখ মাসেও মেলা হয়নি ৷ শ্রাবণ মাসেও মেলা বন্ধ হয়ে গেল ৷ এখন বেকার আছি ৷ কোনও কাজ নেই ৷ শুধু আমাকে নয়, কোরোনা ভাইরাস সব ব্যবসায়ীকেই মারল ৷ "
ফুলবালা রায়, মন্দিরের এককোণে ভিক্ষা করে দিন যাপন করেন বৃদ্ধা ৷ বলেন, "অন্য অন্য বছর মন্দিরে লোকজন বেশি আসে ৷ কিন্তু এবার লোকজন কম আসছে ৷ কেউ কেউ ভিক্ষে দিচ্ছেন ৷ কিন্তু আগের মতো অবস্থা নেই ।"
মন খারাপ ভক্তদেরও ৷ মন্দিরে আসা এক ভক্ত বাপান সরকার বলেন, "প্রতিবছর আমরা এই সময়ে এসে থাকি । কিন্তু এবার আসার পরে মনটাই খারাপ হয়ে গেল । লোকজন নেই । হৈ চৈ নেই ৷ আনন্দ নেই । সব চুপচাপ । অন্য বছর মন্দিরে পা ফেলার জায়গা থাকে না ৷ আমরা মন্দিরে প্রবেশই করতে পারি না । কিন্তু এ বছর চারদিক ফাঁকা ৷ মেলাও হচ্ছে না ৷ খুবই খারাপ লাগছে ৷ "