জলপাইগুড়ি, 15 মার্চ : জামাইবাবুকে অসুস্থতার কথা জানিয়েছিলেন ৷ বলেছিলেন, গলায় সমস্যার কথা৷ কথায় কথায় বলে ফেলেছিলেন কেরালায় থাকার সময় কাশির সমস্যা ধরা পড়েছিল ৷ গল্পের ছলে বলা সেই কথা গুলোই যে এত বড় 'বিপদ' ডেকে আনবে তা একটি বারের জন্যও কল্পনা করতে পারেননি ময়নাগুড়ির তাপস পাল ৷ বছর ষাটের মানুষটি ট্রেন থেকে নামার সময় দেখেন বেশ কিছু লোক তাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন ৷ প্রথমটা কিছু আঁচ করতে পারেননি ৷ তাঁদের সামনে যেতেই স্পষ্ট হয় আসল ছবি ৷ রীতিমতো হাইজ্যাক করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে ৷
ততক্ষণে সব বুঝতে পারেন ৷ যা সন্দেহ করেছিলেন তাই যেন সত্যি হল ৷ জামাইবাবুকে কাশির কথা জানিয়েছিলেন ৷ আর সেই জামাইবাবু পাড়ার সব লোককে রটিয়ে বেরিয়েছেন শালাবাবুর কাশির গল্প ৷ এও জানাতে ভোলেননি কাশির উৎপত্তিস্থল কেরালা ৷
ব্যাস ! এইটুকুতেই যা হওয়ার হয়ে গেছে পাড়ার লোক ধরে নিয়েছেন শ্যালকের কাশির মধ্যেই লুকিয়ে আছে কোরোনা ভাইরাসের জীবাণু ৷ তখনই তাঁরা ঠিক করে নেন তাপস পালকে বাড়িতে ফেরানো যাবে না ৷ ভরতি করতে হবে হাসপাতালে ৷ যেমন ভাবনা তেমন কাজ ৷ শ্যালকমশাই কবে ফিরছেন গ্রামে তা আগে ভাগেই খোঁজ নিয়েছিলেন তাঁরা৷ জামাইবাবুও আগু পিছু না ভেবে সবই জানিয়ে দিয়েছিলেন - ট্রেনের সময়, কোচ নম্বর ৷ সেই মত আগেভাগে স্বাস্থ্য কর্মীদের জানিয়ে রেখেছিলেন পাডা়র লোকেরাই ৷ স্বাস্থ্য কর্মীরাও তৈরি ছিলেন ৷ মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস পড়ে সকাল থেকে যেভাবে স্টেশনে হন্যে দিয়ে বসেছিলেন তা দেখে থানার দুঁদে গোয়েন্দারাও লজ্জা পেয়ে যাবেন ৷ শুধু স্বাস্থ্যকর্মী কেন তাঁদের সাহায্যের জ্ন্য ( যাতে কোনও ভাবেই হাত ফসকে না যেতে পারেন কেরালা ফেরত তাপস পাল ) হাজির ছিলেন পুলিশের কয়েকজন উর্দিধারীও ৷
বিকেলে যখন মানুষটি আস্তে আস্তে বাড়ির পথে রওনা দেবেন বলে ঠিক করছেন তখনই তাঁকে ধরে ফেলেন স্বাস্থ্য কর্মীরা ৷ রীতিমতো পাকড়াও করে নিয়ে যাওয়া হয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৷ তৈরি ছিলেন চিকিৎসকরাও ৷ মুখে মাস্ক পড়া তাপস পালকে দেখে তাঁরাও শুরু করেন পর্যবেক্ষণ ৷ যদিও তেমন কিছু না পেয়ে তাঁকে ছেড়ে দেন চিকিৎসকরা ৷ কিন্তু এটা নিয়েও আপত্তি তুলেছেন স্থানীয়রা ৷ তাঁদের প্রশ্ন কেরালা থেকে ফেরা (কাশতে থাকা) একজনকে এভাবেই কি ছেড়ে দেওয়া যায় ?
আর বেশ কিছুদিন বাদে স্বামী বাড়ি আসছেন জেনে ভালো-মন্দ রান্নাও করেছিলেন স্ত্রী আলো ৷ কিন্তু যেভাবে কোরোনা সন্দেহে স্বামীকে নিয়ে যান স্বাস্থ্য কর্মীরা তা দেখে চোখের কোণা তখন ছলছল করছিল আলোর ৷ দিনের শেষে মুখে হাসি ফুটেছে তাঁর ৷ যাই হোক চিকিৎসকরা তো আর কোরোনা বলেননি ৷ কেবল বলেছেন পর্যবেক্ষণে রাখার কথা ৷ আপাতত তাই কিছুটা শান্তি পেয়ছেন আলো ৷