জলপাইগুড়ি, 21 সেপ্টেম্বর : হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে পড়ে রইল রোগী । পাহারা দিল কুকুর । অসুস্থ-উলঙ্গ অবস্থায় রোদে কাতরাতে দেখেও এগিয়ে আসেননি কোনও স্বাস্থ্যকর্মী ৷ সাহায্য করেনি ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ (Maynaguri Rural Hospital) । বারবার হাসপাতালের এমারজেন্সিতে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের চিকিৎসা দেওয়ার অনুরোধ করলেও লাভ হয়নি । উলটে 'কেন অনুমতি ছাড়া ভিডিয়ো করছেন ?' বলে হুমকি-ও দেন কর্তব্যরত নার্সরা । তবে খবর দেওয়া হলে এগিয়ে আসে ময়নাগুড়ি থানার পুলিশ ৷ হাসপাতালে পৌঁছে তাঁরা বৃদ্ধের চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন । সেই সময়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক ও কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মহুয়া গোপের ।
অভিযোগ, গত পরশু রাত থেকে ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালের এমারজেন্সির সামনে পরে রয়েছেন অসুস্থ এক বৃদ্ধ । তাঁর পরনেও পোশাক ছিল না ৷ সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অবশেষে অন্যান্য রোগীর আত্মীয়রা অসুস্থ বৃদ্ধকে জল খাওয়ান । হাসপাতালের বারান্দায় তুলে শোয়ান ৷ কিন্তু তারপরও হুঁশ ফিরল না স্বাস্থ্যকর্মীদের ৷ একটি বারও দেখতে এলেন না রোগীকে ৷
এক রোগীর আত্মীয় শম্পা দাস এগিয়ে এসে বৃদ্ধের পরনে গামছা জড়িয়ে দিয়ে তাঁকে জল খাওয়ান । তারপর এগিয়ে আসেন অন্যান্যরাও ৷ তবে তারপরও স্বাস্থ্যকর্মীদের দেখা পাওয়া যায়নি ৷ মোহিনীমোহন রায়, অঞ্জনা রায় বলেন, "আমরা এসে থেকেই দেখছি লোকটি এমারজেন্সির সামনে উলঙ্গ অবস্থায় কাতরাচ্ছেন । হাসপাতালের সামনে এমন ঘটনা কাম্য নয় । এটা অমানবিক । হাসপাতাল চত্বরে কেউ বিনা চিকিৎসায় পড়ে থাকবেন এটা হতে পারে না ।"
সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা জরুরি বিভাগে অসুস্থ ওই বৃদ্ধ সম্পর্কে জানালে কর্তব্যরত নার্সরা জানান, ওই বৃদ্ধকে সেখান থেকে তোলার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করলেও নাকি তাঁদের তোলা যায়নি ৷ থানায় খবর দেওয়া হয়েছে ৷ এবার বিষয়টি পুলিশই দেখবে ৷ সেই খবর পেয়ে ময়নাগুড়ি থানার আইসি তমাল দাস পুলিশ পাঠিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন । পুলিশের সামনেও তাঁরা চিকিৎসা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি বলেও অভিযোগ । এরপর মেডিক্যাল অফিসার এসে চিকিৎসা শুরু করেন । গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বৃদ্ধকে হাসপাতালের পক্ষ থেকে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে রেফার করা হয় । এমনকি ময়নাগুড়ির বিডিও'র নির্দেশে রোগীর জামাকাপড়ের ব্যবস্থাও করা হয় ।
জেলার ভারপ্রাপ্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জ্যোতিষচন্দ্র দাস বলেন, "এমনটি হওয়ার কথা নয় । আমি ময়নাগুড়ির বিএমওএইচকে (BMOH) বিষয়টি জানাচ্ছি ।"
এদিকে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মহুয়া গোপ বলেন, "এটা কখনওই বরদাস্ত করা যাবে না । আমার দল এটাকে মান্যতা দেয় না ৷ যেখানে মুখ্যমন্ত্রী সবাইকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে এত উদ্যোগ নিচ্ছেন সেখানে এই ধরনের ঘটনা কাম্য নয় । যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার । যাতে আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় তার জন্য আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব ৷"
আরও পড়ুন : OSD Controversy : কোন যোগ্যতায় উত্তরবঙ্গের জনস্বাস্থ্য বিভাগের ওএসডি সুশান্ত রায়, প্রশ্ন বিরোধীদের