জলপাইগুড়ি, 11 মে: ঝড়ে উড়ে গিয়েছে বড়ির চাল । প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচতে তাই অগত্যা ঘরের ভিতরে মাটি খুঁড়ে চৌবাচ্চা বানিয়ে তাতেই বসবাস করছেন 5 জন । দীর্ঘ 6 বছর ধরে জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি আমগুড়ি অঞ্চলের চাপগড় গ্রামের এক পরিবার এভাবেই দিন কাটাচ্ছেন । আশ্চর্যের বিষয় এটাই যে, সরকারি সুযোগ-সুবিধা তো দূর অস্ত; 6 বছর ধরে স্থানীয় প্রশাসন জানতেও পারল না এভাবে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে তাদেরই এলাকার একটি পরিবার ৷
গৃহকর্তার নাম লক্ষ্মীমোহন রায় ৷ তিনি পেশায় একজন শ্রমিক । পরিবার বলতে তাঁর দুই নাবালিকা মেয়ে, এক নাবালক পুত্র ও শাশুড়ি । তাঁদের অভিযোগ, স্থানীয় পঞ্চায়েতের কাছে একাধিকবার গিয়েও কোনও সাহায্য মেলেনি । বাধ্য হয়ে তাই ঝড়বৃষ্টির সময়ে নিজেদের জীবন বাঁচাতে ঘরের ভিতরেই মাটি খুঁড়ে চৌবাচ্চা বানিয়েছেন । ঝড়বৃষ্টি হলেই পরিবারের বাকি চার সদস্যকে নিয়ে ওই চৌবাচ্চার মধ্যে থাকেন লক্ষ্মীমোহন ৷ শুধু তাই নয়, বিশুদ্ধ পানীয় জলটুকুও পান না তাঁরা ৷ বাড়ির বাইরে একটি ছোট কুয়ো খুঁড়ে সেখান থেকেই জল তুলে খান ৷
শাশুড়ি শোভা রায়ের কথায়,"ভোটের সময় আমাদের খোঁজ পড়ে । অন্য সময় আমাদের খোঁজ নেওয়ার কোনও লোক নেই । বহু কষ্ট করে আমরা ফের ঘর তৈরি করেছি । এর আগে ঝড়ে ঘরের টিন উড়ে গিয়েছে বহুবার । ভেঙে গিয়েছে ঘর । কিন্তু ফের বৃষ্টি ও ঝড় হলে যে কোনও সময় বিপদ হতে পারে । সেই কারণেই আমরা মাটি খুঁড়ে মাটির ভিতর থাকছি । ঝড় এলেই নাতি-নাতনিদের নিয়ে এখানে রাত্রিযাপন করি । সরকারিভাবে একটি ঘর পেলে সুবিধা হয় ।"
বিষয়টি জানতে পেরে আমগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দিলীপ রায়ের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "লক্ষ্মীমোহন রায় একসময় আলিপুরদুয়ারে থাকতেন । তাঁর রেশন কার্ড আলিপুরদুয়ারের । ফলে সরকারি সুযোগ সুবিধা দেবার জন্য সমস্যা হচ্ছে । তবে আমরা সব পরিষেবা দেবার ব্যবস্থা করছি । কিছুদিন আগে এই পরিস্থিতির কথা আমরা দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচির পর জানতে পেরেছি । তাঁর বাড়িতে টিউবওয়েল বসানো হচ্ছে । একটি শৌচাগারও তৈরি করে দেওয়া হবে ।
গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে আমরা নিজেদের উদ্যোগে একটি ঘর তৈরি করে দেব । পাশাপাশি তাঁদের বাড়িতে চাল, ডাল-সহ যাবতীয় খাদ্য সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে ।" আজকের যুগে লক্ষ্মীমোহনদের বেঁচে থাকার কথা প্রকাশ্যে এলে তা আমাদের উন্নত সমাজের বুলিকে বিরাট প্রশ্নচিহ্ণের মুখে ফেলে দেয় ৷ সমাজ কতটা এগিয়েছে তা স্পষ্ট করে দেয় এ যুগের লক্ষ্মীমোহনরা ৷ আশ্বাস তো মিলেছে, এবার কাজের কাজ কবে হয় সেটাই এখন দেখার ৷
আরও পড়ুন : বাঁকুড়ার ছাতিফাটা গরমে নদীর বালি খুঁড়ে মিটছে তেষ্টা ! হেলদোল নেই প্রশাসনের