উদয়নারায়ণপুর, 4 অগস্ট : অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের দরুণ ডিভিসির জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত কয়েকদিন আগেই জানানো হয়েছিল নবান্নকে। সেই মতো গত শনিবার 1 লক্ষ 30 হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়ে। রবিবার সকালে সেই জল দামোদর বয়ে এসে উদয়নারায়ণপুরের 5 টি পঞ্চায়েত এলাকাকে ভাসিয়ে দেয়।
রবিবার বিকেলে ডিভিসি জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়িয়ে করে 1 লক্ষ 55 হাজার কিউসেক। তার জেরে সোমবার উদয়নারায়ণপুরের প্লাবিত পঞ্চায়েতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় 10 টি। এ দিন ডুবে যায় উদয়নারায়ণপুর ছাড়াও আমতা-2 ব্লকের 5 টি পঞ্চায়েত। ওই দিন বিকেলেও ডিভিসি জল ছাড়ে 1 লক্ষ 40 হাজার কিউসেক হারে। ফলে ভোগান্তি কমার কোনও লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন না প্লাবিত এলাকার বাসিন্দারা।
তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাওড়ায় বেড়ে চলেছে প্লাবিত মানুষের সংখ্যা। সরকারি হিসেব বলছে, সোমবার রাত পর্যন্ত উদয়নারায়ণপুর ও আমতা-2 ব্লকের প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ দামোদর ও মুণ্ডেশ্বরীর জলে প্লাবিত হয়েছেন। অন্য দিকে, মুণ্ডেশ্বরী ও রূপনারায়ণের সাঁড়াশি আক্রমণে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন ভাটোরা এবং ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান পঞ্চায়েতের প্রায় 60 হাজার মানুষ। পানীয় জলের জন্যও চলছে হাহাকার।
আরও পড়ুন : ভাঙল বাঁশের সেতু, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হাওড়ার দ্বীপাঞ্চলের মানুষের
উদয়নারায়ণপুরের যে দশটি পঞ্চায়েত প্লাবিত হয়েছে সেগুলি হল রামপুর-ডিহিভুরসুট-আসন্ডা, হরালি-উদয়নারায়ণপুর, কুর্চি-শিবপুর, কানুপাট-মনসুকা, সিংটি, ভবানীপুর-বিধিচন্দ্রপুর, গড়ভবানীপুর-সোনাতলা, পাঁচারুল, দেবীপুর এবং হরিশপুর। তার মধ্যে প্রথম 7 টি পঞ্চায়েত পুরোপুরি ডুবে গিয়েছে। শেষের 3 টি পঞ্চায়েত আংশিক প্লাবিত হয়েছে আংশিক।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ প্লাবিত হয়েছেন। 29 টি ত্রাণ শিবির করা হয়েছে। সেখানে পানীয় জলের পাউচ, শিশুখাদ্য, চিঁড়ে, গুড় এবং রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও মজুত রাখা হয়েছে অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ। প্লাবিত এলাকায় করোনা টিকাকরণের কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। জেলা প্রশাসন সূত্রে এও খবর পাওয়া গিয়েছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের নতুন করে টিকাকরণের দিনক্ষণ ঠিক করা হবে।
ত্রাণ শিবির ছাড়াও বহু মানুষ এখনও বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন। যাঁরা চাইছেন, তাঁদের কাছে নৌকায় করে রান্না করা খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য খোলা হয়েছে একাধিক লঙ্গরখানা।
আরও পড়ুন : Howrah Flood : ডিভিসির ছাড়া জল ঢুকে উদয়নারায়ণপুরে ডুবল ফসল, আতঙ্কে গ্রামবাসীরা
জাতীয় ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা ত্রাণ ও উদ্ধার কাজে নেমেছেন। তবে একজন ছাড়া এখনও কারোর প্রাণহানি বা আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন।
উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজা বলেন,"পরিস্থিতি ভয়াবহ। মুখ্যমন্ত্রীকে সব খুঁটিনাটি জানানো হচ্ছে। তাঁর নির্দেশে ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজে প্রশাসন প্রয়াস চালাচ্ছে।" দামোদরের জলে আমতা-2 নম্বর ব্লকের বিকেবাটি, থলিয়া এবং অমরাগড়ি পঞ্চায়েত প্লাবিত হয়। এছাড়া মুণ্ডেশ্বরী এবং রূপনারায়ণের জল বেড়ে যাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে আমতা-2 ব্লকেরই ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান এবং ভাটোরা পঞ্চায়েত। মালপত্র নিয়ে দোকানিরা উঠেছেন উঁচু জায়গায়। এলাকার বাসিন্দারা ডিঙি বা কলার ভেলায় চেপে জিনিস কিনছেন। ভাটোরা পঞ্চায়েতের তরফ থেকে প্রতিটি সংসদে একটি করে মোট 12 টি নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাতে চেপেও গ্রামবাসীরা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন।
যদিও এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রয়োজনের তুলনায় নৌকা অপ্রতুল। এলাকার সমস্ত নলকূপ ডুবে গিয়েছে। পানীয় জল এবং ত্রাণ সামগ্রীর জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে এলাকায়। আমতা-2 ব্লকে মোট 1 লক্ষ মানুষ প্লাবিত হয়েছেন বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন : বানভাসি হাওড়ার আমতা, নামল এনডিআরএফের দু‘টি টিম
প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে মুণ্ডেশ্বরী নদীর জলের গতি তীব্র হওয়ার দরুণ ত্রাণের নৌকা নিয়ে বন্যাদুর্গতদের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে না বরং রূপনারায়ণ দিয়ে অনেকটা ঘুরে আসার ফলে দেরি হচ্ছে। সবাইকে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে।
ইতিমধ্যে বন্যার জলে ডুবে মৃত্যূ হয় এক কিশোরীর। মৃত কিশোরীর নাম রিমা রক্ষিত বয়স 14 বছর। উদয়নারায়নপুরের জোকার বাসিন্দা। জানা গিয়েছে গতকাল দুপুরে বাড়ির সামনে দিয়ে তীব্র বেগে বয়ে যাওয়া জলে ভেসে যায় রিমা। বাড়ির বেশ কিছুটা দূর থেকে তাকে উদ্ধার করে পরিবারের লোকজন। তাকে উদয়নারায়ণপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে।
ডিভিসির ছাড়া জলে যে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে গ্রামীণ হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর, আমতা-2 ব্লকের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। ইতিমধ্যেই জলমগ্ন বহু গ্রাম। গতকাল দুপুরে আমতায় সেই বন্যা পরিদর্শনে আসেন সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র স্থানীয় বিধায়ক সুকান্ত কুমার পাল, উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক শমীক কুমার ঘোষ ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে তিনি হানিধারা এলাকায় জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। স্থানীয় মানুষের সাথে কথা বলেন। সব পরিস্থিতিতে বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেন মন্ত্রী।