হাওড়া, 31 জুলাই : দেশব্যাপী কোরোনার জেরে চলছে লকডাউন ৷ তার উপর সীমান্তে ভারত-চিন টানাপোড়েনের জের ৷ এই দুইয়ের চাপে বিপাকে হাওড়ার মোল্লাপাড়া গ্রামের শতাধিক রাখি শিল্পী ৷ কর্মহীনতায় ভুগছে গোটা গ্রাম ৷ তাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের উৎসবের আগেই এই গ্রামে হারিয়েছে চেনা ব্যস্ততার ছবি ৷ প্রতি বারের মতো নেই লাইন দিয়ে রাখি বানানোর তাড়া ৷ আসেনি বেশি অর্ডারও ৷
রাখি বন্ধন উৎসবের আগে যে গ্রামে কর্মব্যস্ততা তুঙ্গে থাকত, সেই গ্রাম আজ যেন নিস্তব্ধ । প্রতি বছর গ্রামের শতাধিক মহিলা পুরুষ মিলিয়ে প্রায় ঘর পিছু এক থেকে দেড় লাখ টাকার ব্যবসা করতেন ৷ কিন্তু এই মরশুমে 50 হাজার টাকার কাজও করতে পারেননি তাঁরা । কারণ দেশব্যাপী কোরোনা আবহে টানা লকডাউনে রাখির চাহিদায় ভাটা পড়েছে । বাজার থেকে সাপ্লাইয়ের যে অর্ডার অন্যবার আসে এবার তার সিকিভাগ এসেছে মাত্র । তাই এবছর লাভের অঙ্কটা দেখতে পাননি রাখি ব্যবসায়ীরা । তবে সমস্যা আরও আছে ৷
চাহিদা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ, আগের বারের তুলনায় এবছর রাখির দাম এক লাফে বেশ কিছুটা বেড়ে যাওয়া । কিন্তু কেন হঠাৎ বাড়ল রাখির দাম? ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত-চিন সীমান্তে দুই দেশের উষ্ণ সম্পর্কের জেরে বাজারে চিনা দ্রব্য কম আসছে । সেই সঙ্গে তাঁরাও ঠিক করেছেন চিনা দ্রব্য দিয়ে আর কাজ করবেন না । তাই ভারতীয় কাঁচামাল ব্যবহার করছেন রাখি তৈরিতে । কিন্তু তাতে যে সমস্যাটা হচ্ছে, তা হল কাঁচামালের দাম । কারণ, রাখি তৈরিতে যে সমস্ত জিনিস ব্যবহার হয় সেই চিনা দ্রব্যগুলির দাম ছিল ভারতীয় কাঁচামালের দামের তুলনায় অনেকটাই কম ৷ ফলে রাখি তৈরি করতে খরচ পড়ছে আগের থেকে বেশি । আগে যে রাখিটা তৈরি করতে খরচ পড়ত 5 টাকা থেকে 6 টাকা । এখন সেই রাখিটা ভারতীয় কাঁচামালে তৈরি করতে খরচ পড়ছে প্রায় 8 থেকে 9 টাকা । সেই সঙ্গে শ্রমিকদের মজুরি তো আছেই । রাখি তৈরি করে তা বাজারজাত করতে যে খরচ পড়ছে সেই মূল্যে সাপ্লায়ার নিতে চাইছেন না । অথচ এর চেয়ে কম দাম দিলে যাঁরা তৈরি করছেন তাঁদের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে । ফলে দু'পক্ষের এই টানাপোড়েন এবং চিনা দ্রব্যের রাখি তৈরি না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন শতাধিক রাখি শিল্পী ।
শিল্পীরা বলছেন, কোরোনা আবহের জেরে দেশব্যাপী টানা লকডাউন চলায় বাজারে তেমনভাবে কাঁচামাল পাননি তাঁরা ৷ সেই সঙ্গে ফের ভাগে ভাগে লকডাউন জারি হওয়ায় যারা রাখি কিনে নিয়ে যান তাঁরাও আসছেন না । ফলে অর্ডার এসেছে অনেক কম । এক-একটি ঘর থেকে যেখানে 90 হাজার থেকে 1 লাখ টাকার রাখি বিক্রি হয় ৷ সেখানে এবছর 50 হাজার টাকারও ব্যবসা হয়নি ৷ ফলে শ্রমিকদের মজুরি দিয়ে এবছর কানাকড়িও লভ্যাংশ ঘরে আসেনি । এভাবে চলতে থাকলে এই ব্যবসা ধরে রাখা বড়ই সমস্যার হয়ে পড়বে ৷
অনেকেই এখান থেকে রাখি কিনে নিয়ে গিয়ে ছোটো দোকানগুলিতে সাপ্লাই দেন ৷ তাঁদের বক্তব্য, "চিনা কাঁচামাল ব্যবহার না করতে পারায় ভারতীয় কাঁচামাল দিয়ে রাখি তৈরি করতে গিয়ে কারিগররা প্রতিটি রাখি পিছু যে মূল্য চাইছেন সেই মূল্যে আমরা কিনে নিয়ে গিয়ে তা অন্যত্র সাপ্লাই করতে পারব না । ফলে এই দামে রাখি কিনলে তা আমাদের ঘরে পড়ে থাকবে । আমরাও সেই ঝুঁকিটা নিতে চাইছি না । সেইসঙ্গে কোরোনার জেরে লকডাউন কবে থাকবে, কবে থাকবে না এরকম সাত-পাঁচ ভেবে আমরা ব্যবসা করতে পারিনি ।"
অন্যবার যে অঙ্কের ব্যবসা হয় এবার তেমনটা হয়নি । ফলে, রাখি উৎসবের আগে চিন্তায় রাখি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত এই গ্রাম ৷ কোরোনা ও ভারত-চিন টানাপোড়েনে উদ্বেগে দিন কাটছে রাখি শিল্পীদের ৷