হাওড়া, 10 মে : ছেলে দু'টোকে একা রেখে আসতে মন চাইছিল না পিঙ্কির । তাই সঙ্গে নিয়েই বাগনান থেকে কলকাতার বড়বাজারের দিকে রওনা দিয়েছিলেন তিনি । তখন দেশে কোরোনা সংক্রমণ শুরু হয়েছে কিছুদিন হল । কোরোনা সংক্রমণ রুখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ করছে ভারত সরকার । তাই তৃতীয়বারের সন্তানসম্ভবা পিঙ্কি অধিকারী দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে স্বামীকে বাড়ি ফেরানোর চেষ্টায় বেরিয়ে পড়েছিলেন ।
শুধু জানতেন স্বামী বড়বাজার এলাকায় কোনও দোকানে কাজ করেন । এর থেকে বেশি কিছুই জানতেন না তিনি । তবে, স্বামীকে ঘরে ফেরাতে ওইটুকুই যথেষ্ট । দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বড়বাজার এলাকা, হাওড়ার কিছু জায়গায় স্বামীকে খুঁজে বেড়িয়েছেন সন্তানসম্ভবা পিঙ্কি । শেষপর্যন্ত মিলেছে স্বামীর দেখা । পরিবারের কচিকাঁচা থেকে পিঙ্কি সকলে খুশি । এবার সকলে মিলে বাড়ি ফিরবে তারা ।
দিনটা ছিল 24 মার্চ । বিকেলে বাড়ি ফেরা হবে । বাবাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবে বলে আনন্দে আটখানা দুই ভাই । কিন্তু বাধ সাধল কোরোনা । কোরোনা সংক্রমণ রুখতে দেশজুড়ে লকডাউনের ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ । কার্যত আকাশ ভেঙে পড়ে পিঙ্কির মাথায় । পুরো পরিবার নিয়ে কোথায় যাবেন কী করবেন কিছুই ভেবে পান না । হাজার চেষ্টা করেও বাড়ি আর ফেরা হয়নি তাঁদের । বর্তমানে রেল মিউজ়িয়ামের পাশের ফুটপাতই তাঁদের ঠিকানা ।
আজ বিশ্ব মাতৃ দিবস । রাস্তার ধারে ফুটপাতে মায়ের পাশে শুয়ে আছে ওরা । একজন ছয় আর একজনের সব সাড়ে তিন হয়েছে । ওরা জানে না আলাদা করে মায়েদের কোনও দিন হয় । ওরা শুধু জানে পাশে মা আছে মানে সব সম্ভব । মা আছে বলেই বাবাকে খুঁজে পেয়েছে তারা । তারা জানে মা আছে মানে কোনও চিন্তা নেই তাদের । মায়েরা সব সামলে নেয় । তবে, শুধু আর্থিক পরিস্থিতি নয়, মাথার উপর ছাদটাও গত দেড় মাস ধরে নেই পিঙ্কির । শেষ এখানেই নয়, তিনি সন্তানসম্ভা । যে কোনও দিন শুরু হতে পারে প্রসব যন্ত্রণা ।
প্রথমদিকে, বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে দু'বেলা খাবার জুটত । কিন্তু, বর্তমানে তা জোগাড় করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে পিঙ্কিকে । শুধু দুই ছেলের জন্য নয়, নিজেরও এই সময় প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবারের । তবে, যেখানে দু'বেলা ডাল ভাত জোটানোটাই কষ্টকর, সেখানে পুষ্টিকর খাবার তাঁর কাছে আড়ম্বরের চেয়ে কম কিছু নয় । পাশাপাশি চিকিৎসাও দরকার । কিন্তু, অর্থের অভাবে সেটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে । তিনি একাধিকবার থানা-সহ বিভিন্ন জায়গায় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন । তবে, কোনও উপায় হয়নি । অভিযোগ, এই অবস্থায় প্রশাসনের কেউ খুব সহজেই এগিয়ে আসতে পারতেন । কিন্তু, দেড় মাস কেটে গেলেও কোনও প্রশাসনিক কর্তা বা থানার পুলিশ এগিয়ে আসেনি সাহায্যের জন্য ।
তাই ফুটপাতেই দুই ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে যাচ্ছেন সন্তানসম্ভবা পিঙ্কি অধিকারী । এই মায়ের লড়াইকে সত্যিই কুর্নিশ ।