হাওড়া , 17 জুলাই : দেশব্যাপী কোরোনা ভাইরাস মোকাবিলায় লকডাউনে কর্মহীন হয়েছে সমাজের বহুস্তরের মানুষ । চাকুরীজীবী বহু মানুষ যেমন চাকরি হারিয়েছে, তেমনি বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকা মানুষ পড়েছে সংকটে । বিশেষ করে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের সংকট সবথেকে বেশি । যেমন ধোপারা ৷ এই পেশার সঙ্গে যুক্তরা বিভিন্ন আবাসন এবং বাড়ি থেকে জামা কাপড় নিয়ে আসে ৷ কাচাকুচি, ইস্ত্রির পর আবার সেগুলি বাড়ি দিয়ে আসে ৷ বিভিন্ন হোটেল থেকেও জামা-কাপড় আসে তাদের কাছে । এভাবেই কেউ কেউ বছরের পর বছর আবার কেউ কেউ বংশপরম্পরায় জীবিকা নির্বাহ করে আসছে । কিন্তু, কোরোনা আতঙ্কে ধোবিঘাটগুলিতে জামাকাপড় আসার পরিমাণ কমেছে অনেকটাই । ফলে ব্যবসাও কমেছে ৷ আর তাই জীবিকা সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে ধোবিঘাটের ধোপারা ।
ধোবিঘাটের কথা বললেই মনে পড়ে মুম্বইয়ের ধোবিঘাটের কথা ৷ কলকাতাজুড়ে এরকম অনেক ধোবিঘাট আছে ৷ এরকমই একটি ধোবিঘাট আছে হাওড়ার টিকিয়াপাড়ায় ৷ বহু বছরের পুরোনো ৷ বাম আমলে হাওড়া সদর লোকসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন CPI(M) সাংসদ সদেশ চক্রবর্তীর আমলে এই ধোবিঘাটটি তৈরি হয়েছিল ৷ আগে এই জায়গায় পার্ক ছিল ৷ পরে ওই জায়গায় ধোপাদের জন্য এই ধোবিঘাটটি তৈরি করা হয় ৷ তারপর থেকেই এই ধোবিঘাটে আনা-গোনা শুরু হয় ধোপাদের ৷ বর্তমানে টিকিয়াপাড়ার ধোবিঘাটে প্রায় 100 জন এই পেশার সঙ্গে যুক্ত ৷ লকডাউনের আগে দিনে যা জামাকাপড় আসত, তাতে কোনওরকমে সংসার চলে যেত তাদের ৷ শুধুমাত্র কাচা নয়, পোশাকও ইস্ত্রি করে দিত ৷ কিন্তু, কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণের পর থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে দফায় দফায় লকডাউন শুরু হয় ৷ যদিও বর্তমানে লকডাউন শিথিল হয়েছে ৷ আনলকডাউন চলছে ৷ ফলে বিভিন্ন পরিষেবা স্বাভাবিক হয়েছে ৷ কিন্তু স্বাভাবিক হয়নি ধোবিঘাটগুলি ৷ টিকিয়াপাড়ার ধোবিঘাটে যেখানে আগে সবসময় ব্যস্ততা দেখা যেত, বর্তমানে সেখানে শুধুই নিস্তব্ধতা ৷ আগের মতো আর কাচার ধপাধপ শব্দ নেই ৷ এখন সেখানে হাতেগোনা কয়েকজন জামা-কাপড় কাচে ৷ সারি দেওয়া চৌবাচ্চা ৷ অন্যসময় প্রত্যেকটি চৌবাচ্চা ভরতি থাকত ৷ কিন্তু, বর্তমানে সবগুলিই প্রায় ফাঁকা ৷ কারণ সংক্রমণের ভয়ে এখন কেউ জামাকাপড় দিতে চাইছে না ৷ সেক্ষেত্রে ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে ৷ ধোপাদের সংসার চালানো মুশকিল হয়ে যাচ্ছে ৷
ধোবিঘাটে বহুদিন ধরে জামা-কাপড় কাচছেন চম্পাদেবী ৷ তিনি বলছেন, "এখন সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ কেউ জামা-কাপড় দেয় না ৷ জামা-কাপড় চাইতে গেলে বলে সবার জামা-কাপড় একসঙ্গে মিলিয়ে কাচলে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকবে ৷ কিন্তু, কেউ না দিলে আমরা কী খাব? কীভাবে সংসার চলবে? আগে একটা অটোতে জামা-কাপড় নিয়ে আসতাম ৷ এখন সেখানে মাথায় করে দু-চারটে জামা-কাপড় নিয়ে আসছি ৷ যাও বা টেনেটুনে সংসার চলে যেত এখন আমরা খুব কষ্টে আছি ৷" আশাদেবী নামে একজন বলছেন, "লকডাউনের পর থেকেই আমরা একদম বসে গিয়েছি ৷ এখন 10 দিন হল আবার চালু হয়েছে ৷ কিন্তু, কারও কাছে জামা-কাপড় চাইতে গেলে তারা বলছে দু্ই-চারটে জামা-কাপড় তারা নিজেরাই ধুয়ে নিচ্ছে ৷ কিন্তু, আমরা তো খেতে পাচ্ছি না ৷ আমাদের কি না খেয়েই মরতে হবে?"
গিনৌরি নাম আরও একজন বলছেন, "আগে দিনে 100টি করে কাপড় আসত ৷ এখন 10টা কাপড় পাওয়া যাচ্ছে ৷ আগে মোটামুটি আয় হত ৷ কিন্তু, এখন সেরকম কিছুই হচ্ছে না ৷ খুব কষ্টের মধ্যে আছি ৷ সংসার চালানো মুশকিল হয়ে যাচ্ছে ৷ "
ধোপারা বলছেন, এই পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকার ফলে তাঁদের কোরোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি ৷ কারণ, অন্যের জামা-কাপড় তাদের পরিষ্কার করতে হয় ৷ অভিযোগ, প্রশাসনের তরফে তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে না ৷ তারা রেশনও পাচ্ছে না ৷ এই বিষয়ে রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায় জানাচ্ছেন , "প্রশাসনের তরফে এইভাবে কোথাও মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার দেওয়া হয়নি ৷ তাঁদের আমি ব্যক্তিগতভাবে মাস্ক বা স্যানিটাইজ়ার দিতে পারি ৷ আর যাঁদের রেশন কার্ড নেই তাঁদের জন্য সরকার কুপনের ব্যবস্থা করেছে ৷ কুপন দেখালেই চাল পাবেন ৷ "