কলকাতা, 18 নভেম্বর : প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রোষে পড়লেন উত্তর হাওড়ার বিধায়ক গৌতম চৌধুরী ৷ বৃহস্পতিবার তাঁকে উদ্দেশ্য করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দলের বিধায়ক রাস্তায় বসে গিয়েছে খালি গায়ে, এটা একদিন টিভি-তে দেখালেও লোকে 365 দিন মনে রাখে ।’’
যদিও হাওড়ায় আজ প্রশাসনিক বৈঠকে বেশ খোশ মেজাজেই ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ বৈঠকের মাঝখানেই হাওড়া জেলা থেকে সদ্য নির্বাচিত বিধায়কদের দেখতে চান তিনি ৷ সেখানেই হল ছন্দপতন ।
আরও পড়ুন : Calcutta High Court : সোমবার ফের হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ এসএসসিকে, তলব মধ্যশিক্ষা পর্ষদকেও
অনেকে তাঁদের পরিচয় দেওয়ার পরেই পালা আসে হাওড়া উত্তরের বিধায়ক গৌতম চৌধুরীর । আর বলতে উঠতেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ধমক খেলেন বিধায়ক । তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি বললেন, ‘‘রাস্তায় বসে গেছ খালি গায়ে, এ আবার কী ! মনে রাখবে এসব করে একদিন টিভিতে দেখা যায় ৷ কিন্তু মানুষ 365 দিন মনে রাখে । এটা তৃণমূলের সংস্কৃতি নয় ৷’’
স্বভাবতই মমতার কোপে পড়লেন পৌরনিগমের বিরুদ্ধে ধরনা দেওয়া বিধায়ক । এই ঘটনাটি ঘটে প্রায় দু‘মাস আগে । উত্তর হাওড়ায় তাঁর এলাকায় কয়েক মাস ধরে জল জমেছিল । পৌরসভার প্রশাসকদের বলেও কাজ হচ্ছে না । স্থানীয় বাসিন্দারা নিত্যদিন নাজেহাল হচ্ছিলেন । এই অভিযোগ তুলে তাই নিজের বিধানসভা এলাকাতেই গত অক্টোবর মাসে চেয়ার নিয়ে ধর্নায় বসে ছিলেন উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক ।
আরও পড়ুন : Dilip Ghosh-Prabir Ghoshal : প্রবীর ঘোষালকে তৃণমূলের ‘এঁদো পুকুরে’ যাওয়ার পরামর্শ দিলীপের
সেদিন কালো নোংরা জলে বসে নবান্ন থেকে তৈরি করা পৌর নিগমের প্রশাসকমণ্ডলীর বিরুদ্ধেই ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন গৌতম । আর আজকে সেই কারণেই প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর কোপে পড়লেন তিনি । আজ তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি প্রশ্ন করেন, “তুমি গৌতম চৌধুরী ? তুমি রাস্তায় বসে ছিলে কেন একদিন ?”
উত্তরে গৌতম চৌধুরী কাঁচুমাচু হয়ে বলতে শোনা যায়, “দিদি ওই জায়গাটা জল জমে গিয়েছিল ।” তৎক্ষণাৎ মমতা বলে ওঠেন, “তাতে কী হয়েছে, জল জমে গিয়েছিল… প্রকৃতি কি আমাদের হাতে ? তুমি জানো যে, 80 বছরে এত বৃষ্টি হয়নি ?’’
আরও পড়ুন : Bidhannagar & Kolkata Police : মুখ্যমন্ত্রীর ধমকের পর নড়েচড়ে বসল বিধাননগর ও কলকাতা পুলিশ
এরপরে আরও বলেন, “তুমি কাজ করবে, কো-অপারেশন করবে, আস্তে আস্তে…” এরপর বিরক্ত ভঙ্গিতে হাত তুলে মমতা বলেন, “তা নয়, তুমি রাস্তায় বসে গেছ খালি গায়ে, এ আবার কী ! তৃণমূল কংগ্রেসের একটা কালচার আছে । খবরদার এটা কর না ।”
গৌতমকে মমতা বলে দেন, “টিভিতে একদিন দেখাবে । কিন্তু মানুষ মনে রাখবে 365 দিন । আমি বাধ্য হয়েছি এটা তোমাকে বলতে যে করবে না । কেন করবে ? দরকার হলে জলটা সরানোর চেষ্টা করবে ।’’ তিনি আরও যোগ করেন, “তোমাদের এখানে, হাওড়ায় জল জমা একটা প্রবলেম । পুরনো ড্রেনেজ । তার জন্য তিনটে ফেজের টাকা দিয়ে করা হচ্ছে । কাজ হয়েছে শর্ট টাইমে ।’’
আরও পড়ুন : West Bengal Assembly : বিধানসভায় শুভেন্দুদের আচরণে ক্ষুব্ধ অধ্যক্ষ বিমান
মমতা দাবি করেন, গত 70 বছরে এত কাজ কেউ করেনি । পাশাপাশি এদিন নতুন বিধায়কদের ধারণা জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী । বলেন, “লক্ষ্মীর ভান্ডার থেকে জনগণের ভান্ডার ঠিকমতো চলছে তো ? সবাইকে সহযোগিতা করে করবে ।’’
জানান, অনেক নতুন স্কিম চলছে । আর নতুন কিছু যেন বিধায়করা না চান । উলুবেড়িয়া স্টেডিয়ামের নামকরণ কী হবে, এটা নিয়ে ভাবতে বসেন মমতা । বিডিও ও থানার আইসিদের স্কুলে স্কুলে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি ।
আরও পড়ুন : School Reopening : প্রথম দিনে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার সন্তোষজনক, জানালেন শিক্ষামন্ত্রী
প্রসঙ্গত, ঠিক একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল এর আগের প্রশাসনিক বৈঠকে । সেবার হাওড়া পৌর নিগমের 1400 অস্থায়ী কর্মীদের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে ধমক খান পৌর নিগমের তৎকালীন মেয়র ও এখন বিজেপি নেতা রথীন চক্রবর্তী ।