আমতা, 19 ফেব্রুয়ারি : আইএসএফে যোগদান করাই কি কাল হল আনিশ খানের ? তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যুর উত্তর খুঁজছে পরিবার, পরিচিতরা ৷ গভীর রাতে পুলিশ পরিচয় দিয়ে বাড়িতে ঢুকে হাওড়া আমতার যুবক আনিশ খানকে (Anish Khan, youth from hawrah amta) ছাদ থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে খুন করা হয় ৷ এমনই অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহলে আলোড়ন শুরু হয়েছে ৷
মৃত আনিশ খানের বাড়ি হাওড়ার আমতার সারদা দক্ষিণ খাঁ পাড়া এলাকায় । তাঁর পরিবারের অভিযোগ, 4 জন লোক শুক্রবার গভীর রাতে বাড়ির ভিতরে ঢুকে আনিশকে খুন করে । আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া (Student of Aliah University) আনিশ আগাগোড়া কলকাতাতেই থাকতেন । তিন দিন আগে বাড়িতে আসেন । শুক্রবার সন্ধ্যায় পাড়ার একটি জলসাতে যান । এরপরে গভীর রাতে বাড়ি ফেরেন । বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ চারজন লোক রাত 1টা নাগাদ তাঁর বাড়িতে যায় ৷ ওই চারজনের মধ্যে একজন পুলিশের পোশাক পরে থাকলেও বাকিদের শরীরে জলপাই রঙের পোশাক ছিল ৷
ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, ওই চার ব্যক্তি বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে গ্রিল ধরে জোরে জোরে ধাক্কা দিচ্ছিল । আওয়াজ শুনে আনিশের বাবা গেটের সামনে এসে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা নিজেদের আমতা থানার পুলিশ বলে দাবি করে । জানায়, আনিশকে তারা খুঁজতে এসেছে ৷ আনিশ বাড়িতে নেই বলে জানান তাঁর বাবা ৷ তখন ওই চার ব্যক্তি উল্টে বলে, তাদের কাছে খবর আছে কিছুক্ষণ আগেই আনিশ বাড়ি ফিরেছে । তাই তারা থানা থেকে আসছে । আনিশের সঙ্গে কথা বলার আছে । এরপর গেট খোলা হলে আনিশের বাবাকে পুলিশের পোশাক পরা ওই ব্যক্তি বন্দুক দেখিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে বলে ৷ এরপর বাকি তিনজন বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে । তারা সিঁড়ি দিয়ে তিনতলায় উঠে যায় । তিনতলার সিঁড়ির ঘরের বারান্দার সামনে চৌকিতে বসে ছিলেন আনিশ । অভিযোগ, সেখান থেকে আনিশকে ধাক্কা দিতে দিতে তিনতলার ছাদে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ সেখান থেকে ফেলে দেওয়া হয় নিচে ৷
আরও পড়ুন : বিধানসভার অধিবেশন ডাকা নিয়ে রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রী নয়া সংঘাত
এই ঘটনার পর ওই তিন ব্যক্তি নিচে নেমে আসে, নিচে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের পোশাক পরা অপর ব্যক্তিকে তারা স্যার বলে সম্বোধন করে ৷ বলে 'স্যার কাজ হয়ে গিয়েছে' । এরপরই আর বিলম্ব না করে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় ওই চারজন । গভীর রাতে কিছু পড়ে যাওয়ার আওয়াজ শুনে পরিবারের অন্যান্য লোকেরা ছুটে এসে দেখেন আনিশ বাবার পায়ের সামনে পরে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে । এরপর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ পথেই আনিশের মৃত্যু হয় ৷
ঠিক কী কারণে তাঁদের ছেলের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটল তা এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না আনিস খানের পরিবারের সদস্যরা । শুক্রবার রাতে যে চার ব্যক্তি পুলিশ পরিচয় দিয়ে বাড়িতে এসেছিল তারা আদৌ পুলিশ কিনা সেই তদন্তের দাবি উঠেছে ৷ ছেলের মৃত্যুতে গোটা ঘটনার তদন্ত দাবি করেছে আনিশের পরিবার ৷ এনআরসির বি বিরোধিতা-সহ একাধিক আন্দোলন ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আনিশ ৷ সম্প্রতি তিনি যোগ দিয়েছিলেন আইএসএফে ৷ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে আমতা থানার পুলিশ ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে ৷ এই মৃত্যুর তদন্তের দাবিতে সরব হয়েছে একাধিক সংগঠন ও মানবাধিকার কর্মীরা ৷