চন্দননগর, 15 জুন : আমাদের দেশে আসবে কি সেই দিন ? যেদিন রকমারি ব্যঞ্জনের সামনে লাজুক মুখে বসে থাকবেন বৌমা ৷ শাশুড়ি মা থালা সাজিয়ে দিয়ে বলবেন, সোনামুগের ডালটা আর একটু দিই মা ৷ অদূরে মোড়ায় বসা শ্বশুরমশাই দেবেন তালপাতার পাখার হাওয়া ৷ প্রদীপ, ধান, দূর্বা আর চন্দনের ফোঁটায় মাথা ছুঁয়ে যাবে আশীর্বাদ ৷ অনেক তো হল জামাই ষষ্ঠী ৷ বাড়ির জামাইয়ের মন জয় করার প্রয়াস ৷ এবার হোক না বৌমা ষষ্ঠী !
করোনার এই দুর্দিনেও আগামীকাল জামাই ষষ্ঠী পালনে মাতবে গোটা বাংলা ৷ করোনা বিধিনিষেধের মধ্যেই শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশে রওনা দেবে জামাইরা ৷ সঙ্গে থাকবে মেয়েরা ৷ সকাল থেকে বাজারে দৌড়াবেন শ্বশুর মশাই ৷ কোমর বেঁধে রান্নার কাজে লেগে পড়বেন শাশুড়ি মা ৷ ইলিশ, চিংড়ি, ভেটকি, খাসির মাংস, রকমারি মিষ্টি দিয়ে সাজানো থাকবে জামাইয়ের থালা ৷ প্রতিবছরের মতো এবারও সেই একই দৃশ্যের দেখা মিলবে ৷ ঠিক এখানেই একটু বদল আনতে চাইছেন চন্দননগরের বিখ্যাত মিষ্টি প্রস্তুতকারক সংস্থা সূর্যকুমার মোদক ৷ জামাইদের জন্য স্পেশাল 'জামাই ষষ্ঠী' মিষ্টি তো রয়েছেই ৷ তার পাশাপাশি এবার সূর্য মোদকের ভিয়েনে তৈরি হয়েছে 'বৌমা ষষ্ঠী' মিষ্টি ৷ সাদা-গোলাপি সন্দেশের উপর বড় বড় করে লেখা 'বৌমা ষষ্ঠী' ৷
আরও পড়ুন : বাঁশের ডালি, কুলোর দাম কমায় হতাশ হস্তশিল্পীরা
প্রতিবারের মতো এবারও জামাই ষষ্ঠীর আগে হরেককরমের মিষ্টির ডালি সাজিয়ে বসেছে চন্দননগরের বিখ্যাত মিষ্টি প্রস্তুতকারক সূর্যকুমার মোদক ৷ রসমাধুরী, মতিচুর, আম ও গোলাপের স্বাদের রসগোল্লা প্যাকেটবন্দী হয়ে গেরস্থের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিতে তৈরি ৷ সঙ্গে রয়েছে সূর্য মোদকের বিখ্যাত জলভরা ৷ পাকা আমের কুলফি, গোলাপি-সাদায় মেশানো জামাই ষষ্ঠী লেখা ট্র্যাডিশনাল সন্দেশ ৷ আর এবছরের সূর্য মোদক স্পেশাল বৌমা ষষ্ঠী সন্দেশ ৷
শুধু জামাইদের জন্য যদি একটা দিন হয় তাহলে বাড়ির বৌমাদের জন্য কেন হবে না ? প্রশ্ন সূর্য মোদকের কর্ণধার গীতাশ্রী মোদকের ৷ তিনি বলছেন, "এর জন্য পুরুষদের উপোস বা ষষ্ঠী পালনের প্রয়োজন নেই ৷ নারী প্রগতির কথা আমরা অনেকদিন ধরেই বলছি ৷ কিন্তু অনেক জায়গাতেই আটকে রয়েছি ৷ জামাই ষষ্ঠী, ভাইফোঁটা বা রাখির মতো অনুষ্ঠানগুলি পুরুষদের কেন্দ্র করে ৷ খুব কম বাড়তেই বোন বোনকে ফােঁটা দেয় বা ভাই বোনকে ফোঁটা দেয় ৷"
সূর্যকুমার মোদক কেন আলাদা করে তৈরি করল বৌমা ষষ্ঠী মিষ্টি ? গীতাশ্রী মোদক বলছেন, "বৌমা ষষ্ঠীর কনসেপ্টটা শুধুমাত্র মেয়েদের সেই যোগ্য সম্মানটুকু দেওয়ার জন্য ৷ তাঁর জন্যও যে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ভাবছে এটা বৌমাকে বোঝানো ৷ বাড়ির বৌমা বা মেয়ের গুরুত্ব বোঝাতেই সূর্য মোদকের এই অন্যরকম প্রয়াস ৷ কোনও একটা জায়গা থেকে তো শুরু করতে হবে ৷ আমরা মিষ্টির মধ্য দিয়ে তা শুরু করলাম ৷"
পছন্দের মিষ্টি প্রস্তুতকারক সংস্থার এই উদ্যোগে খুশি চন্দননগর ও তার আশপাশের এলাকার মানুষরা ৷ স্থানীয় বাসিন্দা আহেলি চক্রবর্তী বলেছেন, "একটা দারুণ প্রয়াস ৷ এটার খুব প্রয়োজন ছিল ৷ যদি পুরুষদের জন্য একটা দিন উৎসর্গ করা থাকে তাহলে মেয়ে বা বৌমাদের জন্য কেন নয় ? বৌমাদের জন্যও একটা আলাদা দিন থাকুক ৷ যেখানে শাশুড়িরা বৌমাদের যত্নে, আদরে রেঁধে বেড়ে খাওয়াবে ৷ আর সেটার শুরু যদি মিষ্টি দিয়ে হয় তাহলে এর থেকে ভাল আর কিছু হতে পারে না ৷"