হুগলি, 11 ফেব্রুয়ারি: কথায় বলে চেষ্টা করলে কি না হয় ৷ যেমন সরকারি সাহায্য় ছাড়াই নিজেদের চেষ্টায় অসাধ্য সাধন করেছেন হরিপালের বাসিন্দারা (villagers built hospital in haripal without govt help) । সরকারি কোনও সাহায্য ছাড়াই লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে এই চারতলা হাসপাতাল তৈরি করেছে ফেলেছেন হরিপালের পাঁচগাছিয়া গ্রামের বাসিন্দারা ৷ 2021 সালে পথচলা শুরু হয়েছে এই হাসপাতালের ৷
কোনও হাসপাতাল না-থাকায় চিকিৎসা জন্য দূর-দূরান্তে যেতে হত পাঁচগাছিয়ার বাসিন্দাদের (villagers built hospital without help of govt) । যে কারণে বহু মানুষ সেই গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছেন । মানুষের কষ্ট লাঘব করতে এগিয়ে আসেন স্থানীয় বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার ৷ নিজেদের বসতবাড়ি-সহ দেড় বিঘা জমি দান করেন হাসপাতালের জন্য । সেই সঙ্গে পরিকাঠামো ও আইনি কাজের জন্য শ্রমজীবি হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন । ছোট আউটডোর পরিষেবা মধ্যে দিয়ে যাত্রা শুরু হয় হরিপালের শ্রমজীবী হাসপাতালের । আজ সেখানে বিশাল চারতলা বাড়ি তৈরি হয়েছে । কেবল গ্রামের মানুষের সাহায্যেই নয়, আশেপাশের বহু ব্যবসায়ী চিকিৎসক ও শিক্ষকদের আর্থিক সাহায্যে গড়ে উঠেছে এই হাসপাতাল ।
স্থানীয় গ্রামবাসীরাই কুপনের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের কাজে এগিয়ে আসেন । অনেকে আবার হাসপাতাল তৈরির ইট থেকে টাইলস স্বল্পমূল্যে দেন । যার কান্ডারি সম্পাদক সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, তুলসীদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, চিরঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুশান্ত ভাণ্ডারীর মতো মানুষজন । জমিদাতাদের পরিবারের সদস্য হিসাবে আছেন আলোক বন্দ্যোপাধ্যায় ও অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ হাসপাতালে আউটডোর পরিষেবা ও ইনডোর পরিষেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে । গ্রামেরই এক চিকিৎসক অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় সবসময় এই হাসপাতালে থাকবেন । শীঘ্রই অপারেশন থিয়েটার, আইসিইউ থেকে চিকিৎসক ও নার্সদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। বর্তমানে 60 লক্ষ টাকারও বেশি ব্যয় হয়ে গিয়েছে এই হাসপাতাল তৈরির জন্য। এখনও বিপুল পরিমাণের অর্থ চিকিৎসার যন্ত্রপাতি কেনার খরচ আছে। তবে গ্রামের মানুষের আত্মবিশ্বাস সকলের সহযোগিতায় থাকলে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে যাবেন বলে বিশ্বাস গ্রামবাসীদের।
আরও পড়ুন: কর্নিয়া সংগ্রহ করে দৃষ্টি ফেরাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সুরজিৎ
হরিপাল শ্রমজীবী হাসপাতালের সম্পাদক সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, "বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার তাঁদের জায়গা ভালো কাজের জন্য দান করেছেন । 2021 সালে শ্রমজীবী ও গ্রামের মানুষের সাহায্যে এই হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল । ভাবা মাত্রই কাজ শুরু হয় এবং সে বছরই প্রাথমিকভাবে হাসপাতালটি চালু হয়ে গিয়েছিল ৷ গ্রামের মানুষদের নিয়ে মিটিং হওয়ার পর আউট ডোর পরিষেবা শুরু হয় । 11 টাকা টিকিটের মাধ্যমে বহির্বিভাগ চালু করা হয়।"
তাঁর কথার রেশ ধরেই গ্রামের বাসিন্দা সমর সাঁতরা বলেন, "বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সাহায্যের জন্য এই হাসপাতালের স্বপ্ন দেখি আমরা ৷ সকলে মিলে প্রতিদিন আলোচনায় বসতাম । কীভাবে এই হাসপাতাল হবে, তার একটা জেদ চেপে যায় ৷ বিল ছাপিয়ে প্রতিটা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অর্থ সংগ্রহ করি ৷ আমিও আমার স্ত্রী চাঁদা তুলে সাহায্য করি ৷ আমার স্ত্রী লক্ষী ভান্ডারের টাকাও দান করে। আগামিদিনে নায্যমূল্যে হাসপাতাল তৈরি করার চিন্তাভাবনা রয়েছে আমাদের।"