শ্রীরামপুর(হুগলি), 29 এপ্রিল: শ্রীরামপুরের দিল্লি রোডে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি । পুলিশি গাফিলতির অভিযোগ তুলে রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে পথ অবরোধ বাসিন্দাদের । শনিবার সকালে পেয়ারাপুর মোরে দিল্লি রোডে এক মহিলা সাইকেল আরোহীকে পিষে দেয় একটি ডাম্পার । মৃতের নাম পুষ্পা সাঁতরা(56) । স্থানীয় মনসাতলার বাসিন্দা ছিলেন তিনি ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তার পাশ দিয়ে সাইকেলে চড়ে যাচ্ছিলেন মহিলা । ঠিক সে সময় বেপরোয়াভাবে একটি ডাম্পার গাড়ি তাঁকে পিষে দেয় । ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয় । সামনেই পেয়ারাপুর ফাঁড়ি ৷ একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা এটি । ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন থাকা সত্ত্বেও একাধিকবার দুর্ঘটনা ঘটছে দিল্লি রোডে । ফলে এ দিনের দুর্ঘটনার পরই উত্তেজিত হয়ে পরে এলাকাবাসী । প্রতিবাদে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে দিল্লি রোড় অবরোধ করা হয় ।
উত্তেজিত জনতা পেয়ারাপুর মোড়ে থাকা ট্রাফিক কিয়স্ক ভাঙচুর করে । পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় ঘটনাস্থলে হাজির হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী ও র্যাফ । ঘটনাস্থলে আসেন শ্রীরামপুর থানার আইসি দিব্যেন্দু দাস ও এসিপি 2 শুভঙ্কর বিশ্বাস । টানা সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে অবরোধ চলে । অবরোধের জেরে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় দিল্লি রোডে । পেয়ারাপুর ফাঁড়ির পুলিশ ড্রামপার টিকে আটক করেছে । তবে চালক এখনও পলাতক । পুলিশের আধিকারিকরা উত্তেজিত জনতার সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারেনি ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, নিত্যদিনের মতো কাজের জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন পুষ্পা । তিনি লিলুয়ার একটি কারখানায় কাজ করেন । প্রতিদিন সকালে এই রাস্তা ধরে গিয়েই কাজে যোগ দেন । শনিবার সকাল সাতটার সময় পেয়ারাপুর ফাঁড়ির সামনে দিয়ে সাইকেল নিয়ে শ্রীরামপুর স্টেশন যাচ্ছিলেন তিনি । সেই সময় একটি ডাম্পার বর্ধমানের দিকে যাচ্ছিল । রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলা সাইকেল আরোহীকে পিষে দিয়ে পালিয়ে যায় । পরে গাড়িটিকে আটক করলেও ড্রাইভারের খোঁজ মেলেনি । পুলিশ তার খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে ।
স্থানীয় বাসিন্দারা চালকের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান । ট্রাফিক পুলিশ থাকা সত্বেও একাধিকবার এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে । গত কয়েকমাস আগে শ্রীরামপুরে বাঙ্গিহাটি মোড়ে বেপরোয়া লরির ধাক্কায় বাইক আরোহী-সহ দুজনের মৃত্যু হয় । তারও আগে শ্রীরামপুর থানারই বৈদ্যবাটি দীরঘাঙ্গী মোড়ে মাটির লরির ধাক্কায় কয়েকজন আহত হয় । অভিযোগ, এই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে বেপরোয়াভাবে মাটি ও বালির লরি চলে । স্থানীয় মানুষ মাঝে মধ্যেই অবরোধ বিক্ষোভ করে ৷ তাও কোন ভুরুক্ষেপ নেই পুলিশের ।
মৃতের আত্মীয় সুকুমার মালিক বলেন, "সকাল সাতটার সময় বাড়ি থেকে লিলুয়ায় কাজে যাচ্ছি বলে বেরিয়েছিল । রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিল জেঠিমা । বেপরোয়া ডাম্পার এসে তাঁকে পিষে দিয়ে চলে যায় । যারা ট্রফিকে ডিউটি করেন তারা পয়সা নিয়ে গাড়ি ঢোকায় । আমরা তাদের শাস্তি চাই ।" সাবিত্রী মালিক নামে এক মহিলা বলেন, "অধিকাংশ দিন ট্রাফিক পুলিশ গাছের তলায় বসে মোবাইল ফোন দেখে । তারা মানুষকে দেখতে পারে না । সাতটা বাজলেই রোজ লিলুয়ায় কাজে যায় পুষ্পা সাঁতরা । বাড়িতে তাঁর অসুস্থ একটি মাত্র ছেলে রয়েছে । রোজগার বলতে তাঁর একার উপর সংসার চলত ।"
আরও পড়ুন: বেপরোয়া গতি প্রাণ কাড়ল 3 জনের, বলাগড়ে আহত আরও 1