রিষড়া, 4 সেপ্টেম্বর : জাতীয়স্তরের সাঁতারুকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ কোচের বিরুদ্ধে । অভিযোগ, দিনের পর দিন তার সঙ্গে অশালীন আচরণ করতেন ওই ব্যক্তি । শেষে বাধ্য হয়ে মোবাইলে গোটা ঘটনার ভিডিয়ো করে রাখে । সেই ভিডিয়ো সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে । যা নিয়ে সরগরম ক্রীড়া মহল ।
ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, মোবাইলের রেকর্ডার অন করে একটা জায়গায় রাখছে কিশোরী । তারপর কোচের ডাকে খোঁড়াতে খোঁড়াতে এগিয়ে যায় দরজার দিকে । পায়ে বাঁধা ক্রেপ ব্যান্ডেজ । কোচ ঘরে ঢোকেন । প্রথমে দেখেন চোটের জায়গা । পায়ে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করে দেন । এরপরই শুরু হয় তাঁর 'কুকীর্তি' । ওই কিশোরীকে জড়িয়ে ধরেন । শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হাত দেন । এরপর তিনি চলে যান । পরে ভিডিয়ো রেকর্ডার অফ করে দেয় ওই কিশোরী ।
ঘটনার কথা প্রথমে বাবা-মাকে জানাতে পারেনি সে । দিনকয়েক ধরে মনমরা ছিল । সাঁতার শিখতে যেতে চাইছিল না । একদিন বাবা তাকে মারধরও করে । তখনই কাঁদতে কাঁদতে সব কথা খুলে বলে । ভিডিয়োটিও দেখায় । এরপরই গোয়া থেকে রিষড়ার বাড়িতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন তার বাবা ।
কিশোরীর বাবা বলেন, "ওই কোচের কাছেই আমার মেয়ে 2015 থেকে সাঁতার শিখছে । কোনওদিন সমস্যা হয়নি । 2017-18 সাল নাগাদ তিনি গোয়া চলে যান । আমার মেয়েও বলে, বাবা, আমি স্যারের কাছেই সাঁতার শিখব । ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করি । উনি গোয়া যেতে বলেন । গতবছরই গোয়া যাই । আমি একটি স্কুলে গাড়ি চালাতাম । গাড়ি বিক্রি করে দিই মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে । প্রথম কিছুদিন গোয়াতে সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল । মেয়েও মনের আনন্দে সাঁতার শিখছিল । সমস্যা শুরু হয় মাস পাঁচ-ছয় আগে থেকে । তখন থেকে মেয়ে মনমরা থাকত । সাঁতার শিখতে যেতে চাইত না । আমি কিছুদিন আগে বকাবকি করি । চড়ও মারি । তখনই ও ভিডিয়ো দেখায় । আমরা অবাক । যে স্যারকে আমরা ভগবান বলে মানতাম, তিনিই কি না মেয়ের সঙ্গে এসব করছেন । তড়িঘড়়ি ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিই ।"
সোমবার বাড়ি ফিরে মঙ্গলবার রাতেই তাঁরা যান রিষড়া থানায় । কিন্তু, সেখানে তাঁদের বলা হয়, গোয়ায় ঘটনাটি ঘটেছে । সেখানকার কোনও থানাতেই অভিযোগ জানাতে হবে । কিশোরীর বাবা বলেন, "ওই স্যারের নামডাক আছে । গোয়ার বিধায়ক, সাংসদের ছেলে-মেয়েকেও সাঁতার শেখান । তাই, গোয়ায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করতে পারব না । ভয় লাগছে । যদি মেয়েটার কিছু করে দেয় ।"
কিশোরী বলে, "স্যার আমার শিক্ষাগুরু । ওঁর হাত ধরেই এত মেডেল পেয়েছি । উনি কী করে এরকম কাজ করলেন জানি না । অনেকদিন ধরে এসব করছেন । আমাকে ভয় দেখাতেন । বলতেন, কাউকে বলবি না । ভবিষ্যৎ রয়েছে । তাই, কাউকে কিছু বলতে পারিনি । পরে আর থাকতে পারছিলাম না । বাধ্য হয়ে ভিডিয়ো তুলেছিলাম । চাই, ওঁর শাস্তি হোক ।"
প্রথমে নিতে না চাইলেও পরে কিশোরীর বাবার অভিযোগ নেয় রিষড়া থানা । ঘটনার তদন্তও শুরু হয়েছে ।
এদিকে, এই ঘটনায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ বাংলার ক্রীড়ামহল । একাধিক প্রাক্তনী জানান, তাঁর বীতশ্রদ্ধ । একই সঙ্গে ওই কোচের শাস্তিও চেয়েছেন ।
বেঙ্গল সুইমিং অ্যাসোসিয়েশনের সচিব স্বপন আদক বলেন, "আমরা বিষয়টি দেখেছি । অন্যান্য সাঁতারুদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।"
অভিযুক্ত সাঁতার কোচের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি ।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : কিশোরীর তোলা ভিডিয়ো ফুটেজের সত্যতা যাচাই করেনি ইটিভি ভারত ।