হুগলি, 24 মার্চ: নিয়োগ দুর্নীতিতে (Recruitment Scam) জড়াল রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষকের নাম (President award-winning teacher)৷ তিনি চাকরি দেওয়ার নাম করে অনেকের থেকে কয়েক লক্ষ টাকা তুলেছেন বলে অভিযোগ । জানা গিয়েছে, এই মামলায় ধৃত অয়ন শীলের এজেন্ট (Agent of Ayan Sil) হিসেবে কাজ করতেন পাণ্ডুয়ার শিক্ষক আব্বাস আলি । তিনি দাবরা হাই মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন । বর্তমানে তিনি অবসর নিয়েছেন ।
অভিযোগ, তিনি তাঁর পদের পরিচয় খাটিয়ে চাকরি করে দেওয়ার নাম করে টাকা তুলেছেন । একদা তিনি পাণ্ডুয়া (Hooghly News) তৃণমূল পঞ্চায়েতের সদস্য ছিলেন । তৃণমূলে থাকাকালীন পাণ্ডুয়া পঞ্চায়েতের কর্মী অয়নের সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর । 2015 সালে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছিলেন এই শিক্ষক । পাণ্ডুয়ায় একাধিক চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে তিনি টাকা নিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে । তিনি কয়েক লক্ষ টাকা তুলেছিলেন বলে অভিযোগ ।
যদিও আব্বাস আলির দাবি, তিনি কোনও টাকা নেননি । কোদালিয়ার শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায় এ সব কাজ করতেন । এর মূল অপরাধী অয়ন । তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে । চাকরি প্রার্থীরা যখন টাকা ফেরত চেয়ে ঝামেলা শুরু করেছিলেন, তখন রাজনৈতিক গন্ডগোল শুরু হতেই 2021 সালে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেন আবাস আলি । তাঁর দাবি, ইডি ডাকলে তিনি সহযোগিতা করবেন ।
যদিও পাণ্ডুয়ার এক চাকরিপ্রার্থী নাসিরা খাতুন বলেন, আব্বাস আলি 2015 সালে প্রাথমিক স্কুলে চাকরি দেওয়ার নাম করে পাঁচ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন । নাসিরা টেট দিয়েছিলেন কয়েকবার । তাঁর পরিবারের লোকজনকে আব্বাস বলেছিলেন যে, তিনি কয়েক জনকে চাকরি করে দিয়েছেন । একজন শিক্ষক এ কথা বলছেন, তাই তাঁরা বিশ্বাস করে আব্বাসের হাতে টাকা তুলে দেন বলে জানান নাসিরা ৷
2017 সালে যখন বিষয়টা পরিষ্কার হয়, তখন আব্বাসের কাছে টাকা চাইতে গেলে তিনি জগু দাস পাড়ার অয়ন শীলের কথা বলেন । অয়নের কাছে গিয়েও কোনও সদুত্তর না মেলায় টাকা ফেরত চান নাসিরা ৷ পাণ্ডুয়া থেকে তিনি ছাড়াও অয়নের কাছে গিয়েছিলেন আরও দু জন ৷ এছাড়াও গ্রুপ ডি পদেরও কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী ছিলেন ।
আরও পড়ুন: টিভি চ্যানেলের মালিক হওয়ার স্বপ্ন ছিল অয়নের, দিল্লিতে হয়েছিল বৈঠক
নাসিরা বলেন, "আমাদের বিকাশ ভবনে ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । একটা ছোট খাতায় নাম, ফোন নম্বর লিখে চলে আসি । আমাদের দেবানন্দপুরের বিষ্ণু ও সুশান্তদা বিকাশ ভবনে নিয়ে গিয়েছিলেন । শিক্ষক আব্বাস এঁদের ফোন নম্বর দিয়েছিলেন । ব্যান্ডেল থেকে যোগাযোগ করে আমরা যাই । যখন বুঝি আমাদের চাকরি হবে না, তখন টাকা ফেরত চাইলে আব্বাস অয়নকে দেখাতেন । গোটা বিষয়টা অয়ন ও আব্বাস বলতে পারবেন । আব্বাস অয়নের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন । আমি পুলিশে অভিযোগ করেছিলাম ।"
রাজ্যে বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার সহ-সভাপতি অভিযুক্ত আব্বাস আলি এ ব্যাপারে বলেন, তিনি আগে তৃণমূল করতেন । বর্তমানে বিজেপি করেন ।তাঁকে পরিকল্পনা মাফিক মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি । সে জন্যই নাকি 2021 সালে তিনি তৃণমূল ছাড়েন । তারপর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণ চলছে বলে অভিযোগ আব্বাসের ৷
অয়ন শীল পাণ্ডুয়ায় চাকরি করতেন বলে জানান আব্বাস । তাঁর অভিযোগ, "আজিজুল ও নাসিরা সব এক যোগে এ সব করেছে । এর আগেই 500 জন লোক নিয়ে পাণ্ডুয়ায় মারার চেষ্টা করেছিল আমাকে । চন্দননগর কমিশনারেটের পক্ষ থেকে আমাকে ডাকা হয়েছিল ৷ আমার বক্তব্য জানিয়েছিলাম । আত্মঘাতী শিক্ষক শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায় অয়ন শীলকে টাকা তুলে দিয়েছিল, এটা সত্যি । কিন্তু শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায় নির্দোষ । আসল দোষী অয়ন শীল । আমি টাকা তোলার সঙ্গে কোনও ভাবে যুক্ত নই ।"