চন্দননগর, 12 জানুয়ারি : চন্দননগরের আলোকশিল্পীদের জন্য তৈরি হওয়া আলো-হাব উদ্বোধনের প্রায় এক বছর পূর্ণ হবে ফেব্রুয়ারিতে । এখনও পুরোপুরি চালু হয়নি এই হাব । প্রায় 14 কোটি 7 লক্ষ টাকা দিয়ে বিশাল আবাসন তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে । করোনা পরিস্থিতি, শিল্পীদের সঙ্গে নানা জটিলতায় আটকে রয়েছে আলো-হাব । আসন্ন পৌর নির্বাচনে একে হাতিয়ার করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি (Oppositions target TMC over Chandernagore light Hub controversy) ।
আলোকশিল্পীদের ক্ষোভ, করোনা আবহে আলোক শিল্প থমকে গিয়েছে । তার মধ্যে কোনও রকমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কয়েকশো আলোকশিল্পী, কারিগর । সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, আলো-হাবের জন্য শিল্পীদের থেকে 25 হাজার টাকা ও দোকান ভাড়াবাবদ আড়াই হাজার দিতে হবে । এ প্রসঙ্গে চন্দননগরের এক আলোকশিল্পী রবীন সাউ বলেন, "করোনায় গতবারের তুলনায় এ বছরে কিছুটা হলেও কাজ হয়েছে ৷ আড়াই-তিন হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে ওখানে ব্যবসা করা সম্ভব নয় । করোনা পরিস্থিতির পর বাজার যদি ভাল হয়, তখন ভাড়া নেওয়ার কথা চিন্তাভাবনা করব ।" তিনি জানালেন চন্দননগরে প্রায় আড়াইশো জন আলোকশিল্পী, কুড়ি হাজার কারিগর আছেন । আলো-হাবে গিয়ে ব্যবসা জমাতে অন্তত দশ বছর সময় লাগবে । সরকার যদি মাসে হাজার টাকা ভাড়া নেয়, তাহলে সেখানে যাওয়া সম্ভব ।
আরও পড়ুন : Bad Road Condition : পাঁচ দশকেও পাকা হয়নি রাস্তা, চন্দননগরে ক্ষোভ স্থানীয়দের
বিরোধী দল বাম, বিজেপি উভয়ই শাসক দলকে দোষারোপ করছে । একদিকে, চন্দননগর পৌরনিগমের ওয়ান্ডার ল্যান্ড পার্কে গাছ কেটে আলো-হাব গড়ে পরিবেশ নষ্ট করা হয়েছে । অন্যদিকে, শিল্পীদের কাছ থেকে অত্যধিক টাকা চাওয়ায় এই পরিস্থিতিতে সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা । তার মধ্যেও বেশ কিছু শিল্পী টাকা দিয়ে ও ঘর নিয়ে দোকান শুরু করতে পারেনি । তাই সরকার এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করুক, আবেদন আলোকশিল্পীদের ৷
গত বছর 5 ফেব্রুয়ারি আলো-হাবের উদ্বোধন হয় । তিনতলা ভবনের এই আলো-হাবে 60টি কর্মশালা রয়েছে ও বিশেষ প্রশিক্ষণ ঘরেরও ব্যবস্থা করা আছে । যাতে পুরানো শিল্পীরা ব্যবসার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের আলোকশিল্পীদের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন । এতে রাজ্যে আলোক শিল্পের সম্ভবনা বাড়বে । দূর হবে বেকার সমস্যা । কিন্তু করোনা আবহে আলো-হাবের জন্য নির্ধারিত টাকা দেওয়ার কারণে পিছিয়ে যাচ্ছেন অনেক শিল্পী । শহরের মাঝে তৈরি হয়েছে একটা আলাদা মার্কেট । সে জায়গা ছেড়ে নতুন করে আলো-হাবে গেলে কতটা বিক্রি হবে, তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন অনেকে । তার উপরে মন্দা বাজারে ওই টাকা ভাড়া দিয়ে কোনওভাবেই লাভের মুখ দেখতে পাবেন না তাঁরা ।
10 নম্বর ওয়ার্ডের বাম প্রার্থী শোভনলাল সেনগুপ্ত বলেন, "সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে গাছ কেটে আলো-হাব তৈরি হয়েছে । কিন্তু এখন সেখানে কোনও আলোকশিল্পী নেই । ওখানে সরকার তখন 50 হাজার টাকা ডিপোজিট মানির ঘোষণা করেছিল । কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে আলোক শিল্পীরা খেতে না পেয়ে পেশা পরিবর্তন করেছেন । এই শিল্পটা নষ্ট হতে বসেছে । সেই অবস্থায় সরকার পাশে না দাঁড়িয়ে সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে ভবন তৈরি করে কাটমানি খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে ।"
আরও পড়ুন : Chandernagore Municipal Corporation : চন্দননগর পৌরভোটের আগে তৃণমূল, বামফ্রন্ট আর বিজেপিতে সরগরম রাজনীতি
বিজেপি যুব নেতা সুরেশ সাউ সরকারের এই আলো-হাবকে কটাক্ষ করে বলেন, "কোনওদিন ল্যাংচা হাব হবে, কোন দিন শুনব চপেরও হাব করবেন মুখ্যমন্ত্রী ।" তিনি জানান, এগুলো সব পড়ে থাকবে, কেউ যাবে না । হাব তৈরি করে কাটমানি খাওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে শুধু, অভিযোগ গেরুয়া শিবিরের নেতার ।
বিদায়ী মেয়র রাম চক্রবর্তী বলেন, "আলো-হাব ইতিমধ্যে নির্মিত হয়েছে ৷ আলোক শিল্পীদের সঙ্গে আলোচনা সম্পূর্ণ হয়েছে । কিছুদিনের মধ্যে এই ঘরগুলি নিয়ে আলোক শিল্পীরা কাজ শুরু করবেন । এই দেড় বছরের অতিমারীর মধ্যে আলোক শিল্পীদের মধ্যে অনেকে কাজ হারিয়েছেন । বিরোধীরা অহেতুক নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য আলো-হাব নিয়ে বিরোধিতা করছে । পৌরনিগম ভোটে মানুষ এর যোগ্য জবাব দেবে ।"