সিঙ্গুর (হুগলি), 4 জুন : একসময় সিঙ্গুর থেকে কৃষিজমি রক্ষার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ৷ এবার সেই সিঙ্গুর থেকে শিল্পায়নের বার্তা দিলেন তিনি ৷ হুগলির এই এলাকায় কৃষির সঙ্গে শিল্পের সহাবস্থান তৈরি হবে বলেও দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata on Industry and Agriculture of Singur) ৷
শুক্রবার তাঁর এই ঘোষণার পর থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া মিলছে কৃষিজমি রক্ষার আন্দোলনের ধাত্রীভূমিতে ৷ সিঙ্গুরে শিল্পের পক্ষেও সওয়াল করছেন এককালে আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা ৷ একই সঙ্গে তাঁরা আবার জানাচ্ছেন যে বাম আমলে হওয়া জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্রকে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, তা এখনও পুরোপুরি মেটেনি ৷
ফলে সুযোগ বুঝে আসরে নেমে পড়েছে বিরোধীরা ৷ তাদের দাবি, সিঙ্গুরে শিল্প নিয়ে মিথ্যাচার করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় (Oppositions Slams Mamata on her Remarks about Singur industrial and agricultural future) ৷ সেখানে অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রি হবে বলে যে ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী আগেও একাধিকবার করেছেন, তার কাজ এতটুকুই এগোয়নি ৷ আছে শুধু একটা সাইনবোর্ড ৷ আর বিজ্ঞাপন ৷
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে সিঙ্গুর তৃণমূল (Trinamool Congress) নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক কেরিয়ারকে নতুন করে অক্সিজেন যুগিয়েছিল ৷ এখানে হতে চলা টাটার কারখানায় জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে গোটা রাজ্যের বাম বিরোধী হাওয়া তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ যার ফল 2011 সালে বাম জমার অবসান ৷ আর বঙ্গ রাজনীতির পালাবদল ৷
এই পালাবদলের হাত ধরেই মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাই পরবর্তী সময়ে তিনি সিঙ্গুরে যতবার পা রেখেছেন, ততবারই তা নিয়ে আগ্রহ তুঙ্গে উঠেছে ৷ শুক্রবারের পরিস্থিতিও তার ব্যতিক্রম ছিল না ৷ এদিন সিঙ্গুর থেকে মমতা বলেন, ‘‘সিঙ্গুরে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কৃষকরা জমি ফেরত পেয়েছেন । এতে আমরা সকলেই খুশি । সারা বছর সাহায্য করা হয় এখানে । সিঙ্গুরে এগ্রো ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে, কোচ ফ্যাক্টরি হচ্ছে৷ আমাকে উদ্বোধন করার জন্য আসতে বলা হচ্ছে । হুগলিতে হিন্দ মোটরের কারখানা হচ্ছে । ডানকুনিতে ইন্ডাস্ট্রিও চলবে আগামিদিনে ।’’
এই নিয়ে কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সদস্য ও আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনিচ্ছুক কৃষক মহাদেব দাস বলেন, ‘‘গতকাল দিদিকে দূর থেকে দেখেছি । আমাদের ডাকা হয়নি । দিদির কাছে আমাদের কয়েকটা দাবি, সিঙ্গুরের জমির জট কাটেনি । যে সমস্ত জমির কাগজপত্র ঠিক নেই, সেটা ঠিক করে দিন । এখনও কিছু জমি পড়ে আছে ৷ সেটাও ব্যবস্থা করে দিন । আর অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রি কী হবে, আমরা বুঝতে পারছি না । হলে খুবই ভালো হবে সিঙ্গুরের মানুষের ।’’
অন্যদিকে সিঙ্গুরের বিজেপি (BJP) নেতা সঞ্জয় পাণ্ডে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর দাবি অ্যাগ্রো-ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হয়েছে । সেটা এখনও হয়নি । কৃষকদের জমি ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও এখনও কোনও নির্দিষ্ট সীমানা ঠিক করে দেওয়া হয়নি । চাষযোগ্য হয়নি সিঙ্গুরের জমি । উনি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ছড়াচ্ছেন ৷ কিছু করেন না ।’’
তাঁর আরও দাবি, ‘‘সিঙ্গুর পঞ্চায়েত এলাকা তাই সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন । সেজন্য মানুষকে ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে । নিরপেক্ষ ভোট হলে মানুষই বিচার করবেন আগামিদিনে । মুখ্যমন্ত্রী যদি শিল্প করতেন, তাহলে শিল্পকে তাড়াতেন না । সিঙ্গুরের মানুষকে ঠকানোর জন্য উনি শিল্পের বুলি আওড়ে গেলেন ।’’
এই ইস্য়ুতে সিপিএমের (CPIM) হুগলি জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, 11 বছরের যে সরকার চলছে, তা খেলা-মেলা দিয়ে মানুষকে ভোলানোর চেষ্টা করছে । কসমেটিক ডেভলপমেন্ট করার চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী । এগুলি সবই ভাঁওতা, তৃণমূলের পক্ষের লোকজন সব বুঝতে পারছে । সিঙ্গুরের কিছু মানুষকে টাকা ও চাল দিয়ে সামনের সারিতে রেখেছে তৃণমূল, যাতে ডাকলে সঙ্গে সঙ্গে চলে আসেন তাঁরা ।’’
আর অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রির কথা বলছেন, ওখানে একটা সাইনবোর্ড ছাড়া আর কিছুই নেই । রাজ্যের উন্নতি শুধুমাত্র সাইন বোর্ডে ও বিজ্ঞাপনে হচ্ছে । সিঙ্গুরে অনেক জমি খালি পড়ে আছে । কৃষি ক্ষেত্রে গভীর নলকূপগুলো বন্ধ হয়ে পড়ে আছে বিভিন্ন পঞ্চায়েতে এলাকায় । কৃষকরা জমি ছেড়ে উঠে পড়ছে ।’’
আরও পড়ুন : Mamata Inaugurates Kamarkundu Rail Bridge : রেলকে ছাড়াই কামারকুণ্ডু রেলব্রিজের উদ্বোধন মুখ্যমন্ত্রীর