কোন্নগর ও গোরেগাঁও, 12 অগাস্ট : মুম্বইয়ে খুন বাঙালি আর্ট ডিরেক্টর ৷ গোরেগাঁও এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন ৷ দু'দিন নিখোঁজ থাকার পর শুক্রবার তাঁর দেহ উদ্ধার হয় । ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ । ইতিমধ্যে আটক করা হয়েছে দু'জনকে ।
কৃষ্ণেন্দু চৌধুরি (36) ৷ বাড়ি হুগলির কোন্নগরের মাস্টারপাড়ায় ৷ 2008 সালে পাড়ি দেন মু্ম্বই ৷ 2014-15 সালে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া থেকে পাশ করেন । 2015 সালে হিন্দি সিনেমা আইল্যান্ড সিটিতে আর্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজও করেছেন । পরে খোলেন প্রোডাকশন হাউজ় । সেখানে কাজ করতেন পাঁচজন । চালাতেন আর্ট স্কুলও ।
গোরেগাঁওয়ের ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন কৃষ্ণেন্দু ৷ গত চারবছর কাজের চাপে বাড়ি যেতে পারেননি । তবে মা ও ভাই দিব্যেন্দুর সঙ্গে নিয়মিত ফোনে কথা হত ৷ গত বুধবার (7 অগাস্ট) মা ছায়া চৌধুরির সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল । ছায়া জানান, বৃহস্পতিবার রাতে একটা ফোন এসেছিল । কলকাতা থেকে রণজিৎ নামে একজন ফোন করেছিলেন । তিনি কৃষ্ণেন্দুর আর কোনও নম্বর আছে কি না জানতে চাইছিলেন । গতকাল খবরের কাগজ থেকে জানতে পেরেছেন ছেলের মৃত্যুর খবর । ছায়া বলেন, "এত বড় শিল্পী এভাবে খুন হয়ে গেল এর একটা বিহিত হবে না ? পুলিশ কিছু ব্যবস্থা করবে না ? আমার ছেলে যদি অসুখ বা দুর্ঘটনায় মারা যেত, তাহলে কিছু বলার ছিল না । এখন যা অবস্থা আর কিছু করার নেই আমার ।" প্রতিবেশী গৌতম দাস বলেন, "কৃষ্ণেন্দু খুব ভালো ছেলে ছিল । মুম্বইয়ে ভালো কাজ করছিল । কিন্তু হঠাৎ কী হল বুঝতে পারছি না । কাগজে খবরটা দেখলাম । কিন্তু ব্যপারটা বিশ্বাস করতে পারছি না । দাবি একটাই, যে বা যারা জড়িত তারা যেন ধরা পড়ে । বিচার চাই আমরা ।"
কী ঘটেছিল ?
বুধবার সন্ধ্যা 7টা নাগাদ অফিস থেকে বেরিয়ে যান কৃষ্ণেন্দু । মাধে (গোরেগাঁওয়ের এক জায়গা) মহম্মদ ফুকরান নামে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে দেখা করেন । ডিজ়াইন সংক্রান্ত বিষয় কথাবার্তাও হয় দু'জনের । ফুকরান বলেন, "রাত 8টা থেকে সাড়ে 8টার মধ্যে ওর কাছে দুটো ফোন এসেছিল । এরমধ্যে একটা ফোন কোনও এক মহিলা করেছিলেন । তারপর আমরা আর কিছুক্ষণ কথা বলি । পরে উনি বেরিয়ে যান । বলেন, আরও একটি মিটিং আছে ।"
কল ডিটেলস বলছে, রাত 9 টা 15 নাগাদ কৃষ্ণেন্দু অফিসের এক মহিলা কর্মীর সঙ্গে কথা বলেন । ওই মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ । তিনি জানান, কৃষ্ণেন্দু তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন অফিসের সবাই বেরিয়েছে কি না । এক ঘণ্টা পর ওই মহিলা ফের কৃষ্ণেন্দুকে ফোন করেন । কিন্তু, তিনি ফোন সুইচড অফ পান । হোয়াটসঅ্যাপেও 9টা 16 পর্যন্ত অ্যাক্টিভ ছিলেন কৃষ্ণেন্দু ।
বুধবার রাত থেকে কৃষ্ণেন্দুর আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি । শুক্রবার দুপুরে বিরার পূর্বের খনিওয়াড়ে থেকে চাদর মোড়া মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায় । পুলিশ ঘটনাস্থানে গিয়ে দেহ উদ্ধার করে । ঘাড় ও তলপেটের কাছে ছিল ছুরির আঘাতের চিহ্ন । পুলিশের অনুমান, অন্য কোথাও তাঁকে খুন করে মাধে এলাকায় এনে দেহ ফেলে দেওয়া হয়েছিল । তবে, তাঁর ফোন, ল্যাপটপ, গাড়ির খোঁজ পায়নি পুলিশ ।
কী কারণে খুন হতে হল কৃষ্ণেন্দুকে ?
অফিস কর্মীরা জানাচ্ছেন তাঁর সঙ্গে কিছুদিন আগেই পেমেন্ট নিয়ে কয়েকজনের ঝামেলা হয়েছিল । ফুকরান বলেন, "দু'সপ্তাহ আগের ঘটনা । আমার কাছে এসেছিলেন । সেসময় ফোনে কারোর সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হচ্ছিল ।" মৃত্যু রহস্যের জট খুলতে পুলিশ কৃষ্ণেন্দুর পুরোনো ও বর্তমান কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে । এদিকে, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত এক মহিলাসহ দু'জনকে আটক করেছে পুলিশ । জিজ্ঞাসাবাদ চলছে । তবে, তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম-পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে ।
দাদার মৃত্যুর খবর পেয়ে দিব্যেন্দু গতকাল মুম্বই রওনা দেন । ময়নাতদন্তের পর তাঁর হাতেই তুলে দেওয়া হবে দেহ ।