হুগলি, 1 অগস্ট: জগৎ জোড়া খ্যাতি রয়েছে হুগলির ধনিয়াখালি তাঁতের। পুজোর আগে এই তাঁতের সেভাবে চাহিদা নেই বাজারে। নতুন ডিজাইন ও নতুন প্রজন্মের অভাবে ধুঁকছে তাঁত শিল্প। শিল্পীদের অভিযোগ, একটি তাঁতের শাড়ি বুনতে যে সময় ও পরিশ্রম লাগে তাতে সেইভাবে রোজগার নেই। তাই নতুন প্রজন্ম তাঁত শিল্পের প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে। একমাত্র বয়স্ক তাঁতিরাই আঁকড়ে ধরে আছে তাদের পুরনো ঐতিহ্যকে। নিত্যনতুন ডিজাইনের অভাবের কারণে গ্রাহক হারাচ্ছে এই তাঁত শিল্প।
তাঁত শিল্পী সুশান্ত ভর বলেন, "বর্তমানে সুতো দাম-সহ নানা জিনিসের দাম বেড়েছে । অথচ শিল্পীদের মজুরির বৃদ্ধি পায়নি। নতুন ডিজাইন আসলে ভালো। কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম এই কাজে না এলে নতুন ডিজাইনের তাঁত বুনতে পারবে না। মজুরি কমের জন্য তাঁত বুনতে আগ্রহী নয় এখনকার ছেলেমেয়েরা ৷ সরকারিভাবে তাঁতের মজুরি বৃদ্ধি করুক। সারা দিনে 50 থেকে 60 টাকা মজুরি পাচ্ছি। এতেই কিছু হয় না। ধনিয়াখালি তাঁত শিল্প তিন ভাগের এক ভাগে দাঁড়িয়েছে। আগামিদিনে ধনিয়াখালি তাঁত কাগজে কলমে থাকবে । সরকার যদি এগিয়ে না আসে, এই তাঁতশিল্প আর থাকবে না।"
সোমসপুর ইউনিয়ন সমবায়ের ম্যানেজার বিনয় ভূষণ লাহা বলেন, "জোগারে কাজ করলে 300 টাকা মজুরি ৷ 50 টাকার জন্য কেউই তাঁত বুনতে চাইছে না। দশ বছর আগে সাড়ে তিনশো তাঁতি ছিল ৷ বর্তমানে 160 জন তাঁতি তাঁত বুনছেন।আরও পাঁচ বছর পর এই শিল্প শেষ হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, "এবছরই নতুন ডিজাইনের জন্য তন্তুজ কিছু শাড়ি অর্ডার দিয়েছিল। কিন্তু বাজার অনুপাতে শিল্পীদের তৈরি করানো দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে। নতুন নকশা প্রয়োজন। কিন্তু পুরনো শিল্পীরা তা তৈরি করতে পারছেন না ৷ অনেকে আগ্রহও দেখাচ্ছেন না ৷ কারণ মজুরি পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি তরফে ট্রেনিং দেওয়া হলেও আধুনিক প্রজন্ম এগিয়ে আসছেন না ৷ তাহলে কে নতুন ডিজাইন তৈরি করবে ?"
আরও পড়ুন: আজ কলকাতার আকাশে সুপারমুন, আবহাওয়া সহায় হলে দেখা মিলবে সবচেয়ে বড় চাঁদের
প্রসঙ্গত, একটি শাড়ি বুনতে সময় লাগে তিন থেকে চারদিন। শাড়ির ডিজাইনের উপর নির্ভর করেই সময় ও মজুরি নির্ধারিত হয়। সাধারণ একটি শাড়ি 100 টাকা থেকে বালুচরী শাড়ির মজুরি 575 টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়। এক একটি শাড়ির মূল্য 480 থেকে 3070 টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। আগে এই শিল্পের সঙ্গে কয়েক হাজার তাঁত শিল্পী যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে তা কমে প্রায় 250 জনে ঠেকেছে। নতুন ডিজাইনের কারণে সমবায় গুলিও ধুঁকছে। সেভাবে ক্রেতা নেই। সরকারিভাবে তন্তুজ ও বিশ্ব বাংলার তরফে বছরে কিছু টাকার বিক্রি হলেও তা অনেকটাই কম। পুজোর আগের মাসে 20 লক্ষ টাকা করে বিক্রি হত। বর্তমানে তা তলানিতে ঠেকেছে। এমন চলতে থাকলে, একদিন এই শিল্পতেও ধুলো পড়বে বলে আশঙ্কা তাঁতশিল্পীদের ৷