হুগলি, 28 মে : কম খরচে কিষান ড্রোন তৈরি করে ফেলল পোলবার এক ইঞ্জিনিয়র যুবক (Kisan Drone at Low Price in state)। আর এই কাজে তাঁকে সহযোগিতা করেছে দুই ইঞ্জিনিয়র বন্ধুও । মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সীমারেখা করে দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এই ড্রোন কাজ করবে । চাষের জমি ও মাছ চাষের ক্ষেত্রে কীটনাশক স্প্রে ও খাবার ছড়াতে সক্ষম এই ড্রোন । প্রয়োজনে ক্যামেরার মাধ্যমে পোকামাকড়ের ছবিও তুলতে পারবে । যার নাম দেওয়া হয়েছে কিষান ড্রোন (three engineer made Kisan drone in state)।
নতুন প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করেছেন এই ড্রোন শিবপুর বিই কলেজের ইঞ্জিনিয়াররা । পোলবার রাজহাট ভাটুয়ায় বাড়ি কৃশানু সিং-এর । তিনি শিবপুর থেকে এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন । নিজেদের চাষের জমি রয়েছে । সেই জমিতে চাষ করার সময় দেখেছেন ধান, পাট হোক বা সব্জি বা আম গাছ, তাতে কীটনাশক ছড়াতে হয় । এই কাজে অনেক মজুর লাগছে ৷ সময়, খরচও বেশি লাগছে । এছাড়া একশো দিনের কাজ ও অন্যান্য কারণে কৃষি শ্রমিক নিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হয় ।
বর্তমানে সময় ও মজুরি একটা বড় ব্যাপার । তাই এর থেকে রেহাই পেতে কিষান ড্রোন তৈরি করার চিন্তাভাবনা আসে । বিদেশে ও দেশে এই ধরনের ড্রোনের ব্যবহার হয় । দেশের বেশ কিছু রাজ্যেও-এর প্রচলন বেড়েছে । তবে বাংলায় সেভাবে কৃষিতে ড্রোনের ব্যবহার শুরু হয়নি এখনও । কৃশানু সিং ও তার দুই বন্ধু ঝাড়খন্ডের মায়াঙ্ক রাজবংশ এবং ওড়িশার দীপক সোয়াইন মিলে কিষান ড্রোনে কিছু পরিবর্তন করেন। কিছু নতুন প্রযুক্তি যুক্ত করেন কৃষকদের সুবিধার জন্য ।
তিন ধরনের ড্রোন তৈরি করেছে তাঁরা, 10 লিটার, 16 লিটার ও 20 লিটার ক্যাপাসিটির । বিদেশ থেকে কিনতে 10 লাখ টাকা খরচ হয় এই রকম ড্রোনের । সেখানে কৃশানুদের এই কিষান ড্রোন তিন থেকে সারে তিন লাখ টাকায় পাওয়া যাবে । এছাড়াও চাষিদের জন্য কী পরিমাণ ফলন হয়েছে ক্যামেরার মাধ্যমে সেটাও পাওয়া যাবে । ইতিমধ্যেই সরকারি বিভিন্ন দফতরে তাঁরা এটা প্রদর্শন করেছেন । কৃষি দফতর বিভিন্ন সমবায়ের মাধ্যমে কাস্টম হায়ারিং সেন্টার দিয়ে এই ড্রোন কিনে কৃষকদের সহজে ভাড়া দিতে পারবে । চাহিদা মতো তাঁরা বিভিন্নভাবে ড্রোন প্রস্তুত করতে পারবে । সেই সঙ্গে ড্রোন চালানোর জন্য প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্সের ব্যবস্থা করে দেবে । যাঁরা বড় কৃষক অর্থাৎ যাদের বেশি জমি আছে, তারা নিজেরাও কিনতে পারেন । কিষান ড্রোন অপারেট করাও খুব সহজ । জমিতে কীটনাশক স্প্রের ছাড়াও পুকুর বা জলাশয়ে মাছের খাবার, খোল ছড়াতেও কাজে লাগবে এই ড্রোন । সাত মিনিটে এক একর জমিতে স্প্রে করা যাবে এই ড্রোন । ব্যাটারি চালিত এই ড্রোন তিন কিমি পর্যন্ত পরিধির মধ্যেই স্প্রে করা যাবে ।
প্রথম প্রথম যখন ধান কাটার মেশিন বা হার্ভেস্টার আসে তখন কৃষকরা দ্বিধায় ছিল এই ভাবে ধান কাটা যাবে কি না । আর এখন হার্ভেস্টার ছাড়া ধান কাটাই হয় না বললেই চলে । সময় বাঁচিয়ে কৃষিশ্রম না লাগিয়ে কম খরচে চাষের কাজে ব্যবহার করা যাবে এই ড্রোন । চাষাবাদ ক্রমশ আধুনিক হচ্ছে । এখন ট্রান্সপ্লান্টার মেশিন দিয়ে ধান রোয়া, আলু বসানো হয় । চাষে আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার অনেক বেরেছে । এবার চাষের কাজে উড়ন্ত ড্রোন ব্যবহার ও রপ্ত করবে কৃষকরা আশাবাদী ইঞ্জিনিয়াররা ।
এডু কুইস বলে ড্রোন কম্পানি খুলেছে এই তিন বন্ধু । কৃশানু সিং বলেন, "কিষান ড্রোন যখন ওষুধ স্প্রে করবে তখন গাছের সব জায়গাটা কভার করবে । অনেক সময় গাছ বড় হলে তার সব জায়গায় ওষুধ দেওয়া সম্ভব হয় না । কম সময়, কম খরচ, কম শ্রমিক ও জলের সাশ্রয় করবে । যে কোন মানুষ এই ড্রোন চালাতে সক্ষম । এছাড়াও প্রোগ্রাম সেট করে দিলে জমিতে নিজে থেকেই ড্রোন স্প্রে করবে ৷ ওষুধ শেষ হয়ে গেলে নিজের জায়গায় ফিরে আসবে । এছাড়া ছবিও তুলবে ড্রোন । যা থেকে কোথায় পোকা ধরেছে, গাছের ফসলের কী অবস্থা সবটাই পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে ।"
আরও পড়ুন : Chandannagar French Institute : অবহেলায়, অযত্নে ঐতিহাসিক গৌরব হারাচ্ছে চন্দননগর ফ্রেঞ্চ ইনস্টিটিউট
চাষের জমিতে কীটনাশক দিতে অনেক সময় সাপের কামড়ের ভয় থাকে । মাচার ফসলে সব জায়গায় ওষুধ দেওয়া সম্ভব হয় না, ফলে উৎপাদনে ক্ষতি হয় । কিষান ড্রোনে তা থেকে মুক্তি মিলবে । মায়াঙ্ক রাজবংশ বলেন, "ড্রোনের ব্যবহার যাতে সহজেই করতে পারেন কৃষকরা তার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে । কেন্দ্র সরকার কিষান ড্রোনে সাবসিডি দিচ্ছে । তাই সহজে কৃষকরা ড্রোন নিতে পারেন ।"