হুগলি, 17 মে: কালবৈশাখীর ঝড়ের দাপটে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন হুগলির আমচাষিরা । আম উৎপাদনে মালদার পর অন্যতম হুগলি জেলা । এ বছর ফলন বেশি ৷ জেলায় ছয় হাজার হেক্টর জমিতে আমের ফলন হয় । শুধু এ রাজ্যেই নয় হুগলির আম বিহার, ঝাড়খণ্ড ও উত্তরপ্রদেশের বেশ কিছু রাজ্যে রফতানি করা হয় । এ বছর প্রথম থেকে আমের দাম তলানিতে ঠেকে ছিল । কিন্তু বর্তমানে আমের চাহিদা বাড়ায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দামও । কিন্তু এর মাঝে বাধ সেধেছে কালবৈশাখীর ঝড় ।
মঙ্গলবার প্রবল ঝড়ের ফলে গাছের ডাল ও অসংখ্য আম ঝড়ে পড়ে গিয়েছে । তার ফলে লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাষিরা । এমনিতেই চার থেকে পাঁচদিন দক্ষিণবঙ্গে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে । এই সময়টা আম পাকার সময় । গত কয়েকমাসে আম চাষের জন্য প্রচুর ওষুধ খরচ হয়েছে চাষিদের । আর কিছু চাষি কাঁচা অবস্থায় আম বিক্রি করেছেন । তবে এখন আমের দাম ও সাইজ গুণগত মান অনুযায়ী 12 টাকা থেকে 20 টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পাইকারি বাজারে । কিন্তু ফসল তোলার সময় একাধিক ঝড় এলে চাষিরা প্রবল ক্ষতির মুখে পড়বে । ব্যবসায়ীদের দাবি, ফলন বেশি থাকায় এ বছর আমের তেমন দাম নেই । কিন্তু কয়েকদিন হল আমের দাম আগের চেয়ে বাড়ছে । যদি প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হয় লাভবান হবেন আম চাষি থেকে ব্যবসায়ীরা ।
আরও পড়ুন : স্বাধীনতার 75 বছর পূর্তিতে 75 রকমের আম বিদেশে পাঠাবে বাংলা
এক আমচাষি শুভময় কোলে বলেন, "গতবার পাইকারি যেটা 40 টাকা কিলো বিক্রি হয়েছে । এবারে সেটাই 12 টাকা কিলো দরে বিক্রি হচ্ছে । আম বাগান লিজ নিয়ে চাষ করার পর শ্রমিকদের মজুরি খরচ বেড়েছে । এছাড়াও বেড়েছে সার ও ওষুধের খরচ । আমার মনে হয় না আমরা লাভের আশা দেখছি । এরপর যদি ঝড় শুরু হয় তাহলে সব আম পড়ে যাবে । বাধ্য হয়ে গাছে আম রাখা যাবে না । আমাদের মালিককে টাকা দিতে হবে । ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে । আগে বাইরে থেকে গাড়ি আসত আম কেনার জন্য । ফলন বেশি হওয়ায় এ বছর বিক্রি নেই সেভাবে । পর্যাপ্ত লাভ পাচ্ছি না ।"
সুগন্ধার এক আম ব্যবসায়ী তাপস পালের কথায়, "এ বছর আমের ফলন ভালো ৷ এখন দামটা মোটামুটি ঠিকঠাকই চলছে । আশা করা যায় দু'চার দিনের মধ্যে আমের চাহিদা আরও বাড়বে । আগে কিলো প্রতি 14 টাকা ছিল ৷ বর্তমানে 18 টাকা পর্যন্ত বেড়েছে । প্রাকৃতিক বিপর্যয় তো প্রতি বছরই থাকে । সেই অনুযায়ী চাষিরা চাষও করে । লাভের চেয়েও চাষিদের নগদ টাকার কারবার হচ্ছে । আসামের কমের কারণে হুগলির আমের চাহিদা অনেকটাই বেড়েছে ।"
আরেক আম ব্যবসায়ী রিয়াজ মণ্ডলের বক্তব্য,"হুগলির আম যথেষ্ট ভাল । এখানকার আম এখন বিহার যাচ্ছে । আগে বাজার খুব খারাপ ছিল । গতকাল থেকে বাজার ভালো হচ্ছে । প্রাকৃতিক বিপর্যয় যদি হয় তাহলে আমাদের কিছু করার নেই । যদি ঝড়বৃষ্টি হয় তাহলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বাড়বে । বর্তমানে চাষিদের যে পরিমাণে খরচ করার কথা তা ইতিমধ্যেই খরচ হয়ে গিয়েছে । এখন ফসল তোলার পালা । বর্তমানে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শ্রমিক ও ওষুধের খরচা বেড়েছে । গাড়ি ভাড়া 2 হাজার টাকা বেড়েছে ।"
আরও পড়ুন : টানা তাপপ্রবাহে মালদার আম উৎপাদনে ক্ষতির আশঙ্কা