হুগলি, 21 জুন : করোনাকে প্রতিরোধ করতে মানুষের শরীরে বাড়াতে হবে ইমিউনিটি পাওয়ার । তা একমাত্র সম্ভব যোগাসন ও প্রাণায়ম করেই । প্রতিদিন যোগাসন ও প্রাণায়ামের মধ্যে দিয়েই শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব । এমনই দাবি করছেন যোগ বিশেষজ্ঞরা । ভারত সরকার প্রতিবছর যোগ দিবস (World Yoga Day) পালন করে । এ-বছরও 21 জুন অর্থাৎ আজ বিশ্ব যোগ দিবস (International Day of Yoga) পালিত হচ্ছে দেশজুড়ে ৷ তবে ভার্চুয়ালি ৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে দেশবাসীকে ভার্চুয়াল, ডিজিটাল এবং ইলেকট্রনিক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দিনটি পালন করার অনুরোধ জানানো হয়েছে ৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, একমাত্র প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে তার জন্য নির্দিষ্ট কিছু আসন ও প্রাণায়ম করলে প্রতিটা মানুষকে সুস্থ রাখা সম্ভব ।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর তৃতীয় ঢেউয়ের সম্ভাবনা প্রবল হচ্ছে দিন দিন ৷ সে ক্ষেত্রে আমাদের শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সক্রিয় রাখতে হবে । একমাত্র যোগ ব্যায়ামের মাধ্যমেই তা সম্ভব । শুধু তাই নয়, ভারত সরকার যোগ ব্যায়ামকে জাতীয় ক্রীড়ার আওতায় এনেছে । আমাদের প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলোর সঙ্গে যুক্ত করেছে । অলিম্পিক ও খেল ইন্ডিয়ার মতো বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা যাবে । যোগচর্চা খেলাধুলোর দিকেও অনেকটা প্রসার ঘটাবে আমাদের দেশে ।
কিছু যোগাসন ও প্রাণায়াম করা অত্যাবশ্যক । এই করোনা আর লকডাউনের মধ্যে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে এই আসনগুলি করলে তাতে করোনার মতো সংক্রমণ আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারবে না । এই আসনগুলির মধ্যে ত্রিকোণাসন, পবনমুক্তাসন, অর্ধকূর্মাসন, সর্বাঙ্গাসন, মৎস্যাসন, ভুজঙ্গআসন, একপদ এবং দ্বিপদ শলভাসন । সেই সঙ্গে গোমুখাসন পদ্মাসন, ভদ্রাসনের মতো আসনগুলি যে কেউ সহজেই অভ্যাসে রাখতে পারেন ৷ মনস্থির রেখে এই আসনগুলি করলে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি সম্ভব । এই আসন এবং প্রাণায়ামের মাধ্যমে শরীরে রক্ত চলাচল করবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলিকে ঠিক রাখা সম্ভব হবে । সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়াবে ।
প্রাণায়ামের ক্ষেত্রে মুভমেন্ট ফর মোশান করা দরকার । সাধারণ মানুষকে সকালে উঠে এক গ্লাস জল খেয়ে টাইগার বৃদিং করতে হবে । তাতে মেরুদণ্ডকে সবল রাখে । প্রাণায়ম, অনুলোম-বিলোম করলে ফুসফুস ঠিক থাকবে ৷ ফুসফুসের মধ্যে যে বায়ুথলিগুলি থাকে তাতে প্রচুর পরিমাণে বায়ু প্রবেশ করাতে হয় ৷ মানুষের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই আছে । সেই ক্ষমতাকেই সক্রিয়তা রাখতে এবং আরও বাড়াতে হবে । থাইরয়েড এবং গ্ল্যান্ডকে সুস্থ রাখতে গেলে সহজ প্রাণায়াম করতে হবে ।
ভারতে ন্যাশানাল যোগা ফেডারেশন গঠন করা হয়েছে । পশ্চিমবঙ্গের যোগাসন স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক লোকনাথ নাথ বলেন, ‘'একুশে জুন যোগ দিবস পালন করছি । বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা তৃতীয় ঢেউয়ে আমাদের কীভাবে ইমিউনিটি বাড়ানো যায় সেটার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে । ভারতবর্ষের মুনি-ঋষিরা যা দিয়ে গিয়েছেন, তা শুধু ভারতবর্ষ নয়, পৃথিবী যতদিন থাকবে ততদিন তা পালন করলেই তাঁরা যেমন নীরোগ শতায়ু লাভ করেছিলেন, আমরাও তা পারব । ইমিউনিটি বাড়াতে গেলে ধ্যান, প্রাণায়াম, যোগাসন ও কিছু খাদ্য-পথ্য নীতি মেনে চলতে হবে । আর সবচেয়ে বড় কথা মানসিক অশান্তি, দুশ্চিন্তা দূরে রাখতে হবে । কারণ টেনশনই মানুষের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলিকে নষ্ট করে দেয় ৷ একমাত্র যোগের মাধ্যমেই চিন্তামুক্ত থাকা যায় । বিভিন্ন রকমের আসন করলে শরীরের গ্ল্যান্ড এবং অর্গ্যানের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় । শরীরচর্চা করলেই সমস্ত ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া থেকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে । স্বাভাবিকভাবেই প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে মানুষের শরীরে । তাই যোগাসনই একমাত্র উপায় । সেই কারণেই ভারতবর্ষকে যোগগুরু বলা হয় ।'’
লোকনাথ নাথ আরও বলেন, ‘'ভারত সরকার খেলাধুলোর ক্ষেত্রে যোগাসনকে মান্যতা দিয়েছে । অলিম্পিকের পাশাপাশি ও খেল ইন্ডিয়াতে স্বীকৃতি পেয়েছে । এই যোগাকে নিয়েই ভারতবর্ষে যোগা ফেডারেশন গঠন করা হয়েছে । এবং প্রতিটা রাজ্যে যোগা ফেডারেশন তৈরি করা হয়েছে । সেই সঙ্গে যোগাসনের মধ্যে মাধ্যমে আর্থিক দিক দিয়েও মানুষকে অনেকটাই এগিয়ে দেবে । উপার্জনের অন্য একটা দিক খুলে যাবে । আবার এই যোগাসনের মাধ্যমে উপরন্তু মানুষের উপকার হবে ।'’
আরও পড়ুন : অঙ্কে ভীতি ? পড়ুয়াদের নতুন দিশা দেখাতে পারে বৈদিক গণিতবিদ্যা