হুগলি, 27 মে : আজ থেকে রাজ্যের 40টি রুটে চালু হয়েছে বাস পরিষেবা । নির্দেশ অনুযায়ী, সরকারি বাস চলছে । কিন্তু বাস চলছে না হুগলিতে ৷ ভাড়া না বাড়ালে চলবে না বাস, স্পষ্ট জানিয়েছেন হুগলির বেসরকারি বাস মালিকরা । কারণ এমনিতেই দুইমাসের লকডাউনে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে । ক্ষতির মুখে বেসরকারি বাস সংগঠনগুলি । তাই রাজ্যের অন্য জেলাগুলিতে বাস চললেও হুগলিতে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ বাস চলাচল । এইদিকে বাসকর্মীরা সংকটে রয়েছেন । বন্ধ রুজি-রুটি ।
লকডাউন, এই একটা শব্দই যথেষ্ট বাস কর্মীদের জন্য । দুই মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ রাজ্যের বাস পরিষেবা । হুগলির বেসরকারি বাসের ড্রাইভার ও অন্য বাস কর্মীদের অভিযোগ, খেতে না পেয়েই মরতে হবে । ইতিমধ্যেই কয়েকজন সহকর্মী অভাবে আত্মহত্যা করেছেন । এরপরও যদি বাস না চলে এই দিনই দেখতে হবে সবাইকে । হুগলির এক বাসকর্মীর কথায়, "মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের আবেদন, বাস চালানো হোক ৷ না হলে আমাদের হাতে বিষ তুলে দেওয়া হোক ৷"
গ্রিন জ়োন এবং অরেঞ্জ জ়োনে 27মে অর্থাৎ আজ থেকে বাস পরিষেবা শুরুর নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার । সেই মতো শুরু হয়েছে বাস চলাচল ৷ সরকারি নির্দেশে বাস চলাচল স্বাভাবিক করতে জেলার বাস মালিকদের সঙ্গে গতকাল আলোচনায় বসে হুগলি পরিবহন বিভাগ । সেখানে বাস ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানায় বাস সংগঠনগুলি ।
গতকাল বাস মালিকদের সঙ্গে নিজের দপ্তরে বৈঠক করেন হুগলি RTO সোমনাথ চক্রবর্তী । বৈঠকে বাস মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি দাবি পেশ করা হয় । বাস মালিকরা জানান, 20 জন যাত্রী নিয়ে বাস চালাতে গেলে বাসের ভাড়া বাড়াতে হবে । আগে বাসের ন্যূনতম ভাড়া ছিল প্রথম 4 কিলোমিটারে 7 টাকা এবং পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারে 70 পয়সা । তা বাড়িয়ে ন্যূনতম ভাড়া 14 টাকা এবং পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারে 1 টাকা ও এক্সপ্রেস বাসের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ভাড়া 15 টাকা এবং পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারে 1.5 টাকা করতে হবে । পাশাপাশি সরকারের তরফে পরিবহন কর্মীদের 10 লাখ টাকা স্বাস্থ্য বীমা করে দিতে হবে । প্রতিদিন বাসগুলিকে স্যানিটাইজ় করার দাবিও জানানো হয় ৷
হুগলি জেলায় মোট রুটের সংখ্যা 18 । জেলায় বাস মিনিবাস নিয়ে প্রায় 550টি বাস চলে । প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে এই পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত প্রায় 13000 শ্রমিক । এঁদের প্রায় প্রত্যেকেরই রুজি-রুটি বন্ধ ।
এক বাস চালক শেখ সাহানওয়াজ় বলেন, “ইদ গেল । জামা-কাপড় কেনার কথা ভাবতেই পারি না । খাবারই জুটছে না । ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে । এইদিকে একটা টাকাও রোজগার নেই । সরকার এবং পরিবহন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর কাছে আবেদন, তাঁরা আমাদের দিকটাও দেখুক । ইতিমধ্যেই আমাদের দুই-একজন সহকর্মী আত্মহত্যা করেছেন । স্ট্রোক হয়েও মারা গিয়েছেন । আমরা কী করব ? আমরা বাস চালাতেই চাই । দুই মাস কাজ নেই । মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ আমাদের দিকটা দেখুন ।”
হুগলির একটি রুটের বেসরকারি বাসের চালক রণজিৎ সিং বললেন, "দুই মাস রোজগার নেই । অথচ, এই মুহূর্তেই প্রয়োজন কাজ । জোগাড়ের কাজ করতে গিয়েছিলাম ৷ পাড়ায় ঢুকতে দেননি স্থানীয়রা । তাঁরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, বাইরের লোককে ঢুকতে দেওয়া যাবে না । কয়েকটা ক্লাবের সাহায্যে এখনও দুই মুঠো ভাত জুটছে । কিন্তু এইভাবে আর কতদিন ?"
হুগলি জেলা বাস মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশন কার্যকরী সভাপতি দেবব্রত ভৌমিক বলেন, “পরিবহন মন্ত্রী জানিয়েছেন, ভাড়া বাড়ানো সম্ভব নয় । কিন্তু আমাদের পক্ষে ওই ভাড়ায় গাড়ি চালানো অসম্ভব । বিগত দুই মাসে লকডাউনের জেরে আমাদের অবস্থা তলানিতে এসে ঠেকেছে । আমাদের শ্রমিকরা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ভিক্ষার মতো ত্রাণ নিয়ে আসছে । কিন্তু মালিকরা কোনও জায়গা থেকে ত্রাণ নিতে পারছেন না । তাঁদের আরও করুণ অবস্থা । আমরা অবশ্যই চাই সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করতে । তবে ভাড়া না বাড়ালে আমাদের পক্ষে গাড়ি চালানো অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে । সরকারি ভর্তুকি এবং সাধারণের সাহায্যের আশা করব আমরা । সবার স্বার্থে হুগলির পরিবহন ব্যবস্থা চালু হোক । কিন্তু আমাদের দিকে সাহায্যের হাত না বাড়ালে বাস চালানো অসম্ভব । আমরা চাই মুখ্যমন্ত্রী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিক।”
সারাবাংলা বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতি রাজ্য সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সরকার আধিকারিকদের সঙ্গে প্রতিদিন আলোচনা হচ্ছে । সরকারি ও মালিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা মাধ্যমেই এর সমাধান করা সম্ভব । এখনও পর্যন্ত পরিবহন মন্ত্রী সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি।”
কিন্তু সবশেষে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে শ্রমিকদের মধ্যেই । কীভাবে চলবে তাঁদের, কবে চলবে বাস ? বড় প্রশ্নের মুখে তাঁদের ভবিষ্যৎ ।